রহস্যময় তিনটি হাসি (আয়ারল্যান্ডের লোককাহিনী) || লোককাহিনী - ১৬

সারমর্ম: গুপ্তধনের অনুসন্ধানকারী কৃষকের কাণ্ড দেখে এক লিপ্রেখেন তিনটি হাসি দিয়েছিল যেগুলো বিশাল অর্থ বহন করে। চলুন তবে গল্পটি পড়ে জেনে নেই সেই তিনটি হাসির অর্থ। মোট- ২ পৃষ্ঠা


ইংল্যান্ডের পাশের দেশ আয়ারল্যান্ড। ইংলিশদের মতোই আইরিশরা এক প্রাচীন জাতি। এখানকার লোককাহিনী দুনিয়ার মানুষের মুখে মুখে। এবার যে গল্পটি শুনবো সেটি মূলত এক কৃষককে নিয়ে।

কৃষকটি প্রতিদিন খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতো। উঠেই সে তার গবাদিপশু আর জমি দেখাশোনার কাজে বেরিয়ে পড়ত। একদিন সকালে জমি দেখতে গিয়ে, জমির একপাশ থেকে কে যেন অবিরাম হাতুড়ি পেটাচ্ছে এরকম একটা অদ্ভূত শব্দ সে শুনতে পেল।

ক্ষেতের চারদিকে তাকিয়ে সে অবাক। সে দেখল এক রাতেই ক্ষেতের চারদিকে অসংখ্য ব্যাঙের ছাতা গজিয়েছে। এদের আকার দেখে তো কৃষক একেবারেই হতভম্ব। এতবড় ব্যাঙের ছাতা সে জীবনেও দেখেনি।

ব্যাঙের ছাতাগুলো ভাল করে দেখার জন্য সামনে যেতেই সে দেখতে পেল, একটা ব্যাঙের ছাতার নিচে বসে একজন লিপ্রেখেন জুতা সেলাই করছে। আইরিশরা ভাবত লিপ্রেখেন পরীদের মুচি। ডেনমার্কবাসী আয়ারল্যান্ডে থাকার সময় তাদের সব ধনরত্ন মাটির নিচে লুকিয়ে রাখত। একমাত্র লিপ্রেখেনরাই ডেনিশদের ধনরত্ন রাখার জায়গাগুলোর খবর জানতো।

কৃষক দৌড়ে গিয়ে লিপ্রেখেনকে ধরে বলল, আমি অনেকদিন ধরে তোমাকে খুঁজছি। গুপ্তধনের সন্ধান না দিলে তোমাকে ছাড়বো না।

চাষির কথা শুনে লিপ্রেখেন চিৎকার করে বলল, তারা সেসব ধনরত্ন কোথায় রেখেছে আমি তা জানি না।

চাষি- তোমাকে বলতেই হবে, না বললে তোমাকে বেধে রাখবো।

লিপ্রেখেন- আমি কিছু জানি না।

চাষি লিপ্রেখেনকে বাড়িতে নিয়ে একটা বড় ট্রাঙ্কে ভরে তালা দিয়ে রাখল। এভাবে সাত বছর চলে গেল।

সাত বছর পর কৃষক একদিন সমুদ্র তীরে বেড়াতে গিয়ে দেখল এক আঁটি কাঠের টুকরো সমুদ্রের পানিতে ভেসে যাচ্ছে। আঁটির দিকে ভাল করে তাকাতেই তার মনে পড়ল, এই আঁটিটিই একবার সে এক লোকের কাছে বিক্রি করেছিল।

সেদিন সমুদ্রতীর থেকে কৃষক বাড়ি ফিরে এল আর শুনতে পেল যে লিপ্রেখেন ট্রাঙ্কের ভেতর বসে হাসছে।

সেদিন লিপ্রেখেনকে বের করে চাষি বলল, যদি গুপ্তধনের খবর আমাকে না দাও তবে আরো সাত বছর তোমাকে আটকে রাখবো।

লিপ্রেখেন বলল- তোমার যা খুশি কর। তবে বড়লোক হবার পথ আমি তোমাকে বলে দেব না।

একদিন কৃষক যখন নাস্তা করছিল ঠিক সেই সময়ে খুব গরিব একজন লোক কৃষকের বাড়িতে এলো। তখন কৃষক গরিব লোকটিকে নাস্তা খাবার জন্য অনুরোধ করল। লোকটি তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে নাস্তা খাবেনা বলে জানাল।

লোকটি বাড়ি থেকে বেরিয়ে কিছুদূর যেতে না যেতেই হঠাৎ পিছলে পড়ে পায়ের হাড় ভেঙে গেল। লিপ্রেখেন ট্রাঙ্কের ভেতরে বসে এবারও হাসলো।

দ্বিতীয় সাত বছর পার হবার পর কৃষক আবার লিপ্রেখেনকে বের করে বলল, এখনো সময় আছে, বল! কোথায় আছে ধনরত্ন। নইলে তোমাকে বড় রকমের শাস্তি দেব।


পৃষ্ঠা ১/ ২



লিপ্রেখেন বলল, যা ইচ্ছা কর, কিছুতেই তোমাকে বলবো না। একথা শুনে কৃষক আবারও লিপ্রেখেনকে বাক্সবন্দি করলো।

কিছুদিন পর কৃষক একদিন মেলায় যাবার জন্য তৈরি হলো।

সেকালে লোকজন চোরের ভয়ে টাকা-পয়সা মাটির নিচে লুকিয়ে রাখতো। সেরকম কৃষকেরও কিছু টাকা ছিল লুকানো। মেলায় যাবার সময় কৃষক গোপন জায়গা থেকে কিছু টাকা বের করলো।

কৃষক মেলা থেকে ফেরার পর লিপ্রেখেন আবার হাসলো। হাসি শুনে কৃষক দৌড়ে বাক্স থেকে লিপ্রেখেনকে বের করে এনে বলল, বলো প্রতিবার কেন তুমি হাসো? এ নিয়ে তুমি তিনবার হাসলে।

লিপ্রেখেন বলল, দুনিয়াতে এমন অনেক জিনিসই আছে যা থেকে মানুষ বড়লোক হতে পারে। অজ্ঞতার কারনে তা হয় না।

কৃষক বলল, এসব না বলে, কেন হাসছিলে সেটা বলো?

লিপ্রেখেন- তোমার কি সেই দিনটির কথা মনে আছে, যেদিন সমুদ্রের ধার দিয়ে কাঠের আঁটিটি ভেসে যেতে দেখেছিলে?

কৃষক- হ্যাঁ, মনে আছে।

লিপ্রেখেন- আঁটিটির মাঝখানে থলে ভর্তি টাকা রেখে আঁটিটি বাঁধা হয়েছিল। তুমি আঁটিটি কুড়ে পেয়েছিলে কিন্তু খুলে না দেখেই সেটা বিক্রি করে দিয়েছিলে। যার কাছে ওটা বিক্রি করেছো সে এখন অনেক বড়লোক হয়েছে।

কৃষক- তুমি ঠিক বলেছ, সে এখন অনেক বড়লোক।

লিপ্রেখেন- সেদিন যদি তুমি আঁটিটি খুলে দেখতে তাহলে সেই টাকা তুমিই পেতে।

কৃষক- ও আচ্ছা, বুঝতে পেরেছি কত বড় ভুল করেছি। এবার বলো দ্বিতীয়বার কেন হেসেছিলে?

লিপ্রেখেন- তাহলে এবার আমাকে ছেড়ে দাও আমি বলছি।

কৃষক- না বললে আমি তোমায় ছারবো না।

লিপ্রেখেন- আচ্ছা শোন তবে, গরিব লোকটি তোমার বাসা থেকে চলে যাবার পর আমি হেসেছিলাম, তোমার মনে পড়ে? খাওয়ার জন্য যাকে তুমি সেধেছিলে? মনে পড়ে? সেদিন লোকটি তোমার সাদামাটা খাবার না খেয়ে তার ভাগ্যকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। বাড়ি থেকে বেরোনোর পর কিছুদূর যেতেই লোকটির পা ভেঙেছিল। সে যদি তোমার আতিথেয়তা গ্রহণ করত, তবে তার বিপদ কেটে যেত।

কৃষক- ঠিক আছ। এবার বলো তৃতীয়বার কেন হেসেছিলে?

লিপ্রেখেন- সেকথা তোমাকে না জানানোই ভাল।

বলার জন্য কিছুক্ষণ চাপাচাপি করার পর শেষে কৃষক রেগে গিয়ে লিপ্রেখেনকে বলল, শেষবার কেন হেসেছিলে বলো। না বললে তোমাকে মেরে ফেলবো।

লিপ্রেখেন বলতে লাগল, তুমি যখন মেলায় যাবার জন্য মাটির নিচে লুকানো টাকা আনতে গিয়েছিলে, তখন এক চোর তোমাকে লক্ষ্য করেছিল। তুমি চলে যাবার পর তোমার সব টাকা চুরি করে নিয়ে গেছে।

একথা শোনামাত্রই কৃষক তার টাকার সন্ধানে চলে গেল। কৃষক তন্ন তন্ন করে টাকা খুঁজতে লাগল। টাকা না পেয়ে লোকটি শেষে পাগল হয়ে গেল।

টাকা হারানোর কথা কৃষক যদি না জানত, তবে সে পাগল হতো না।

            

***** সমাপ্ত *****
 

পূর্বের পোষ্ট: সাদা মানুষ আর কালো মানুষের আয়না (রোডেশিয়ার লোককাহিনী) || লোককাহিনী - ১৫

পরবর্তী পোষ্ট: পৃথিবীর শেষ ঝর্ণার খোঁজে (ইংল্যান্ডের লোককাহিনী) || লোককাহিনী - ১৭
 

লোককাহিনী’ ক্যাটাগরির জনপ্রিয় গল্পসমূহ

  ◉ এক যে ছিল শেয়ালনী (ইউক্রেনের লোককাহিনী)

  ◉ ইয়ারার গল্প (ব্রাজিলের লোককাহিনী)

  ◉ ইনকাভূমির রাজপুত্র (পেরুর লোককাহিনী)

  ◉ হাতির চেয়ে চড়ুই কেন শক্তিশালী (আফ্রিকার লোককাহিনী)

  ◉ চামড়ার ব্যাগে গল্পের আত্মা (কোরিয়ান লোককাহিনী)


➽ সর্বশেষ আপলোডকৃত পোষ্টসমূহ

➽ Golpo24.com

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post