সারমর্ম: নদীর পাশে ঘুরে বেড়ানো এক অতৃপ্ত আত্মা। যে মানুষকে ভয় দেখায় না, কিন্তু নদীর পাশে একাকী বসে কেঁদে কেঁদে নিজের মৃত্যুর দুঃসহ স্মৃতি মানুষকে জানাতে চায়। মোট-২ পৃষ্ঠা
যারা ভূতে বিশ্বাস করেন না, বা করতে চান না তাদেরকে
আজকে একটা সত্য ঘটনা শুনাবো-
আমি সবসময় ঢাকা থেকে রাত্রে বাড়িতে যাই। কারণ ছুটি
পাই কম আবার চিন্তা করি রাত্রে চলে গেলে পরদিন সকালটা বাসা থেকেই শুরু করা যাবে। ছাত্র
অবস্থায় যখন বন্ধ পেতাম তখন আগেরদিনে ক্লাস শেষে রওনা হয়ে যেতাম। এখনও অফিস শেষ করেই সোজা মহাখালী-
তারপর ময়মনসিংহ- হালুয়াঘাট। মোটামুটি ছয়ঘন্টা।
তখন আমি ছাত্র ছিলাম। একদিন ক্লাস শেষ করে বাড়ী রওনা
হলাম। বাস গন্তব্যে পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত ১১টা বেজে গেল। আমি বাস থেকে বাজারে নেমে গেলাম।
নেমেই আমার বন্ধু সুভাসকে দেখতে পেলাম। আমার বাল্য বন্ধু। ও আমাকে দেখেই বলল আমরা তো
প্রতিদিন রাত্রে কদমতলীতে আড্ডা মারি, তুই খেয়ে চলে আসিস।
বাজারের পাশেই আমার বাসা। বাসায় গিয়ে আম্মার সাথে
কথা বলতে বলতে খাওয়া শেষ করলাম। ১২ টার দিকে বাজারে গিয়ে কাউকে না পেয়ে ভাবলাম সবাই
হয়তো আড্ডা মারতে চলে গেছে। আমি দুইটা সিগারেট কিনে কদমতলী রওনা হলাম। বাজার থেকে কদমতলী
সিকি কি.মি.।
তখন আষাঢ় মাস। আকাশে চাঁদও আছে। কিন্তু আষাঢ়ের মেঘ
এবং চাঁদের আলো দুইটা মিলে একটা অদ্ভুত আলো-আধারের খেলা চলছে- এই কালো অন্ধকার, আবার
যেন ভরা পূর্ণিমা। একটা সিগারেট ধরিয়ে রাস্তায় একাকী হাটছি। কিছুটা ভয়ও লাগছে। এমন
রাতে একা একা হাটলে ভূত-প্রেতের কথা একটু বেশিই মনে পড়ে।
বামদিকের ঘন জঙ্গলটা থেকে ঝি ঝি পোকার শব্দে একটা
অদ্ভুত সুর যেন সৃষ্টি হচ্ছে, যে সুরের তালে তালে নিজেকে নিয়ে খুব হারিয়ে যেতে ইচ্ছে
করে। মাঝে মাঝে গভীর জঙ্গল থেকে দু-একটি কাক বড্ড বেসুরো কণ্ঠে কা কা করছে। নির্জন
পথে একটু ভয় ভয় লাগছিল, মনে হচ্ছে যেন বন থেকে মাংসখোকো কোন রাক্ষস বেরিয়ে এই বুঝি
সামনে এসে দাঁড়াবে।
আমি কদমতলীর কাছাকাছি যে জায়গায় শ্মশান ঘাটটা ঠিক
সে জায়গায় চলে আসলাম। এইখান থেকে আমাদের যে জায়গায় বসে আড্ডা দেওয়ার কথা সেই জায়গাটা
স্পষ্ট দেখা যায়। কিন্তু আমি কাউকেই সেখানে দেখতে পেলাম না। মনের ভিতর আগে থেকেই একটা
ভয় ছিল এই কারনে গভীর জঙ্গলের পাশ দিয়ে পিছনেও ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে না।
আমি সোজা কদমতলী গিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে নদীর ঢেউ
দেখছি। আমি যেখানটায় দাঁড়িয়েছিলাম তার বামদিকে কংশ নদী, আর ডানদিকে খোলা মাঠ- যার দরুন
গা শিরশির করা অন্ধকার ভাবটা এইখানে নেই। ভয়টা কাটানোর জন্য একটু জোড় করেই যেন অন্যমনস্ক
হয়ে যেতে চাইলাম। মাঝে মাঝে কয়েকটা কলাগাছ নদী দিয়ে ভেসে যাচ্ছে। দূর থেকে মনে হচ্ছে
যেন কোন লাশ ভেসে যাচ্ছে। মৃত প্রাণীর গন্ধে বমি হওয়ার অবস্থা।
পৃষ্ঠা ১/ ২
হঠাৎ.... হঠাৎ...... একটি কান্নার শব্দ শুনতে পেলাম।
ইঁ..ইঁ..ইঁ..ইঁ..ইঁ..ইঁ..ইঁ। কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম। আমার কাছ থেকে হাত বিশেক দূরে ঠিক
আমার বাম দিকে তাকিয়ে দেখি একটি ঘোমটা দেওয়া মহিলা বসে আছে, আর ঐখান থেকেই কান্নার
আওয়াজ আসছে। ভয়ে আমার আত্মা চলে যাওয়ার যোগাড়। শরীর দিয়ে ঘাম পানির মত বের হচ্ছে, যেন
আমি কোন ঝর্নার নিচে দাঁড়িয়ে আছি। মহিলাটিকে ডাকব ডাকব ভেবেও না ডেকে সাহস করে সোজা
বাসার দিকে রওনা হলাম।
বাসায় গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে শুয়ে পড়লাম। পরদিন সকালে
আম্মাকে সব ঘটনা খুলে বললে আম্মা বলল,
সুভাস তো ময়মনসিংহ গিয়েছিল তিনদিন আগে, সে তো আসবে
আরও পরে।
শুনে আমিতো অবাক। তাহলে সুভাসের চেহারা নিয়ে আমাকে
কে বলেছিল কদমতলী যাওয়ার জন্য।
শেষে আম্মা যা বলেছিল তা ছিল এইরকম- ১৯৮৮ সালের বন্যায় নৌকায় করে বরযাত্রী বউ নিয়ে যাওয়ার সময় কদমতলীতে নৌকা ডুবে যায়। সবাই সাঁতরিয়ে তীরে উঠলেও কনে আর উঠতে পারেনি। সেই থেকে এখনও মাঝে মাঝে কনেকে কদমতলীতে কাঁদতে দেখা যায়। আরও অনেকেই দেখেছে।
***** সমাপ্ত *****
পূর্বের পোষ্ট: গোরস্তানের ভূত || ভূতের গল্প ৮
পরের পোষ্ট: রাজপ্রাসাদের সেই মুণ্ডুহীন ভূত || ভূতের গল্প ১০
‘ভূতের গল্প’ ক্যাটাগরির জনপ্রিয় পোষ্টসমূহ