এক যে ছিল শেয়ালনী (ইউক্রেনের লোককাহিনী) || লোককাহিনী - ৯

 

সারমর্ম: এক শেয়ালনীর মধু খাওয়ার খুব শখ ছিল। মধু তো সে খেয়েছিল ঠিকই কিন্তু সেটা কি বৈধ ভাবে না কি অবৈধ ভাবে তা বোঝা যাচ্ছে না। গল্পটি পড়ে আপনারাই বুঝে নিন? মোট-২ পৃষ্ঠা


শেয়ালের বউকে সবাই শেয়ালনী বলেই ডাকতো। এই শেয়ালনীর অনেকদিন থেকেই মধু খাওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল। গোশত খেতে খেতে মুখের স্বাদ তার নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এবার তাই সে একটু রুচি বদলাতে চাচ্ছিলো। সে ভাবল, মৌমাছিদের পাড়ায় যাওয়া যাক, সেখানে নিশ্চয়ই মধু পাওয়া যাবে।

অবশেষে, সে গেল মৌমাছিদের পাড়ায়। এক মৌচাকের কাছে গিয়ে থাবা মেরে নিয়ে এল কিছুটা মধু। কিন্তু মৌমাছিরা তা সইবে কেন, মৌচাক থেকে বেরিয়ে জেঁকে ধরলো শেয়ালনীকে। প্রাণের ভয়ে মধুর ছেড়ে শেয়ালনী দিল দৌড়!

বাড়ি ফিরে শেয়ালনী দেখতে পেল তার চোখ মুখ সব ফুলে গেছে। যন্ত্রনায় সে বিছানায় এলিয়ে পড়ল। কিন্তু মধুর লোভ সে সামলাতে পারলো না। হঠাৎ তার মাথায় এলো, ভালুকরা তো মধু খায় তাদের বাড়ি গেলে নিশ্চয়ই মধু খাওয়া যাবে।

যেই ভাবা সেই কাজ। শেয়ালনী এবার গেলো এক ভালুকের বাড়ি। ভালুকের বাড়ি এসে সে নরম গলায় বলল, তোমার বাড়িটা তো কত সুন্দর ছিমছাম আর মৌ মৌ গন্ধ। ভালুক তার কথা শুনে কিছু না বলে শুধু গোঁ গোঁ করতে লাগল।

শেয়ালনী বলল, আমার ভীষন লোভ হচ্ছে তোমার বাড়িতে কটা দিন থাকতে। তোমরা কত নম্র-ভদ্র। ভালুক এবার একটু নরম হল। বলল, ইচ্ছা হলে তুমি কটা দিন থাকতে পার।

শেয়ালনী থাকতে শুরু করলো ভালুকের বাড়িতে। ভালুক নিজে শিকারে যায়, আর শেয়ালনীর জন্য মাংস নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসে।

ওদিকে শেয়ালনীর প্রাণ তো পরে আছে মধুর ওপর। সে একদিন ভালুককে বলল, ভালুক ভায়া! শুনেছি তোমরা মধু খেতে অনেক পছন্দ কর। অথচ আমি এই ক’দিনে একবারও তোমাকে মধু খেতে দেখলাম না।

ভালুক বলল, ভাল কথা বলেছ, অনেকদিন হল মধু খাইনা। আজই যাব মৌমাছিদের পাড়ায়।

সেই দিনই ভালুক নিয়ে এল মধু ভর্তি দুটো বড় বড় চাক। চাক দুটো শেয়ালনীকে দেখিয়ে সে বলল, একটার মধু দুজনে খাব আর বাকিটা রেখে দেব শীতকালের জন্য।

শেয়ালনীর আজ অনেকদিনের স্বাদ পূরণ হল। সে ভালুকের সঙ্গে চাকের মধু চেটেপুটে খেতে লাগল। তাদের একটা চাকের মধু শেষ করতে বেশিক্ষন লাগলো না। অন্যটা তারা তুলে রাখলো চিলেকুঠার ভাঁড়ারে।

ভালুক সবসময় মধু খেয়ে অভ্যস্ত তাই সে নিশ্চিন্তে থাকল। কিন্তু ভাঁড়ারে রাখা চাকটির জন্য সারাক্ষণ জিভে পানি ঝরে শেয়ালনীর। ভালুককে লুকিয়ে ওটা খাবে কিভাবে সে বুদ্ধি খুঁজতে থাকে শেয়ালনী।

একদিন শেয়ালনী নিজের লেজ দিয়ে বাড়ির দেয়ালে আঘাত করতে লাগল। ভালুক শব্দ শুনে ভেতর থেকে শুধায়, কে ডাকছে বাইরে?

শেয়ালনী বলল, এক প্রতিবেশী আমাকে ডাকছে। ওদের একটি ছেলে হয়েছে তাই উৎসব করছে ওরা। আমাকে নিয়ে যেতে এসেছে।

ভালুক বলল, ও আচ্ছা, যাও তবে ওদের সঙ্গে। এই ফাঁকে আমি একটু ঘুমিয়ে নিই।


পৃষ্ঠা ১/ ২



ঘরের বাইরে এসে শেয়ালনী পা টিপে টিপে উঠে পড়ল ভাঁড়ারে। তারপর খানিকটা মধু খেয়ে নেমে এল চুপি চুপি। ইতোমধ্যে ভালুকের ঘুম ভেঙ্গে গেছে, সে শেয়ালনীকে শুধাল, ওদের ছেলের নাম রেখেছে কি?

উধ্বাংর্শ বলল শেয়ালনী।

ভালুক বলল, আশ্চর্য ধরণের নাম তো! কোন বাচ্চা এই ধরণের নাম রাখে নাকি?

কেন! এটা তো আরও অন্য সাধারণ নামগুলোর মতোই। জবাব দিল শেয়ালনী।

পরদিন শেয়ালনী আবারও শুরু করলো লেজ দিয়ে দেয়ালে ধাক্কা দেয়া। ভালুক বলল, বাহিরে কে ডাকছে দেখো তো।

শেয়ালনী বলল, এক প্রতিবেশি এসেছে আমাকে নিয়ে যেতে। ওদের একটা মেয়ে হয়েছে, তাই ওদের উৎসবে আমাকে না নিয়ে ছাড়বে না!

ভালুক বলল, ঠিক আছে, তুমি যাও, আমি একটু গড়িয়ে নেই এই ফাঁকে।

আগের দিনের মত ঘর থেকে বের হয়ে ভাঁড়ারে ওঠে মধু প্রায় শেষ করে নেমে এলো শেয়ালনী।

ঘুম ভাঙ্গলে ভালুক বলল, ওদের মেয়ের কি নাম রাখল ওরা?

শেয়ালনী বলল- মাঝামাঝি।

ভালুক- ওরা তো অদ্ভুত নাম রেখেছে মেয়ের।

শেয়ালনী- কেন? এমন নাম তো কতই না আছে!

আচ্ছা, আচ্ছা ঠিক আছে ভালুক আর তর্কে গেল না।

পরের দিন আবার সেই একই ব্যাপার। ঠুক ঠুক করে দেয়ালে লেজের বাড়ি মারতে লাগলো শেয়ালনী।

ভালুক বলল, এই দেখ তো, বাইরে কে যেন ডাকছে।

শেয়ালনী- প্রতিবেশিরা ডাকছে, ওদের একটা নতুন ছেলে এসেছে সংসারে।

ভালুক- ও, তাই বল। ওদের আনন্দ-উৎসবে দেখছি তোমার খুব চাহিদা। সবাই তোমাকে নিয়ে কারাকারি করছে যেন!

শেয়ালনী- হ্যা, ওরা সবাই আমাকে খুব ভালবাসে তো তাই হয়তোবা...

ভালুক- ঠিক আছে, যাও তবে ওদের সঙ্গে।

ঠিক আগের দুদিনের মত শেয়ালনী ভাঁড়ারে উঠে বাকি যেটুকু মধু ছিল সব চেটেপুটে খেয়ে সাবাড় করে চুপচাপ নেমে এলো নিচে। তারপর কিছুই যেন জানে না এমন ভাব করে শুয়ে পড়ল নিজের জায়গায়।

ভালুক আবারও জিজ্ঞেস করল, এই ছেলেটার আবার কি নাম রাখল ওরা?

শেয়ালনী- চেটেপুটে সব শেষ।

ভালুক- চেটেপুটে সব শেষ! এ ধরণের নাম বাবার জন্মে শুনিনি আমি।

শেয়ালনী - কেন? এটা তো নতুন কিছু নয়। এ ধরণের নাম ক-তো আছে!

ভালুক দেখল শেয়ালনীর সাথে খামাখা তর্কে জড়িয়ে লাভ নেই। তাই মাথা ঝাকিয়ে সে বলল, ঠিক আছে, ভাল নাম।

দেখতে দেখতে শীতকাল চলে এলো। ভালুক ভাবল, ভাঁড়ারে রয়েছে পুরো একটা চাক মধু; সেটা খাবার সময় তো এখনই। একদিন ভালুক উঠল ভাঁড়ারে। কিন্তু কোথায় মধু। চাকটা উল্টে পাল্টে দেখল সে। কোনখানে একফোঁটা মধুর চিহ্নও নেই।

ভালুক বুঝতে পারল এটা শেয়ালনীর কাজ। সে মনে মনে বলল, মধুর বদলে তোমাকেই খাব আজ। কিন্তু কোথায় শেয়ালনী! ঘটনা বুঝে শেয়ালনী দিল ছুট। সাধ্যি কি ভালুক শেয়ালনীর পাছ পায়!

            

***** সমাপ্ত ***** 

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post