চুলার উপর টাকা (আফগানিস্তানের লোককাহিনী) || লোককাহিনী - ৪

 

সারমর্ম: দরিদ্র এক চাষী আল্লাহর কাছে ধন-সম্পত্তি চেয়ে শেষ পর্যন্ত যা পেল। মোট-২ পৃষ্ঠা


সে অনেক দিন আগের কথা। এক ছিল কৃষক। খুবই সৎ আর আল্লাহভীরু লোক ছিল সে। কিন্তু অনেক চেষ্টা করার পরও কিছুতেই সে তার সংসারের আর্থিক অবস্থার উন্নতি করতে পারছিল না। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর সে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতো। সংসারে প্রতিটি পয়সা সে খুবই হিসেব করে খরচ করতো। কিন্তু তবুও দেখা যেত, মাস শেষে একটা পয়সাও সে জমাতে পারছে না। সারাজীবন পরিশ্রম করেও তার মনে হলো আগে যেমন ছিল তার অবস্থা, এখনো তেমনই আছে। কোন উন্নতি হয়নি।

একদিন ফজরের নামাজ পড়ার সময় কৃষকটি সিজদায় পড়ে আল্লাহর কাছে ‍মুনাজাত করতে লাগলো, ‘দয়াময় করুণাময়, একমাত্র তুমিই পারো আমার অবস্থা বদলাতে। তুমি আমাদের ধন-দৌলত দাও। তুমি ছাড়া এই দুনিয়ার কারো কাছে চাইলেও আমি কিছু পাব না। আমার রান্না ঘরের চুলার ওপর তুমি আমাকে ধন-দৌলত দাও।’

এই মুনাজাত করে সামান্য কিছু নাস্তা খেয়ে প্রতিদিনের মতো সেদিনও সে কাজ করতে মাঠে চলে গেল। এক মনে মাঠে কাজ করছিল সে। হঠাৎ একটা কাঁটা গাছে তার কাপড় জড়িয়ে কাপড়টা ছিঁড়ে গেল। রাগে-দুঃখে তার কান্না আসতে লাগলো। এমনিই সে গরিব মানুষ, তার উপর জামাটি ছিঁড়ে যাওয়ায় কষ্ট হওয়াটা ছিল স্বাভাবিক ব্যাপার। রাগে সে কোদাল চালিয়ে কাঁটা গাছটি শেকড় সুদ্ধ উপড়ে ফেলতে লাগলো। হঠাৎ কোন কিছুর সাথে তার কোদাল লেগে ঝন ঝন শব্দ ভেসে উঠলো। চাষি মাটি সরিয়ে দেখতে পেলো একটা তামার কলস। কলসটির ঢাকনা খুলে সে অবাক হয়ে গেল। রূপার মুদ্রায় পুরো কলসটি ভরা ছিল। খুশিতে তার চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করলো সে।

কিন্তু কয়েক মিনিট পর তার মনে পড়লো সে টাকা চেয়েছিল রান্না ঘরের চুলার ওপর। কিন্তু তা পাওয়া গেল মাঠের জমির নিচে। সে বলে উঠল, ‘আমি এই টাকা নেব না। আল্লাহ যদি আমার দোয়া কবুল করে কোন পরিশ্রম ছাড়াই আমাকে ধন-সম্পত্তি দান করতে চান, তবে তা চুলার ওপরই করবেন।’ এরপর সে কলসটি আগের জায়গায় রেখে বাড়ি চলে গেল। কলসভর্তি টাকা সেখানেই পড়ে রইলো।

বাড়িতে গিয়ে সে তার স্ত্রীকে সব কথা খুলে বললো। স্ত্রী তো এসব কথা শুনে রেগে আগুন। বলে কি? এমন বোকা লোকও আছে আল্লাহর দুনিয়ায়! সে চাষিকে অনেক বোঝালো কলসটি নিয়ে আসার জন্য। কিন্তু চাষির সেই একই কথা।

কৃষক রাতে যখন ঘুমিয়ে পড়লো, তখন তার স্ত্রী তার এক প্রতিবেশীর কাছে গিয়ে তাকে সব কথা জানিয়ে বললো, আমার স্বামী তো দুনিয়ার সবচেয়ে বোকা মানুষ। এক কাজ কর, তুমি গিয়ে টাকাগুলো নিয়ে এসো। তোমার অর্ধেক, আমার অর্ধেক।


পৃষ্ঠা ১



একথা শুনে প্রতিবেশী তো মহাখুশি। কৃষকের স্ত্রীর কাছে থেকে ভালভাবে ঠিকানা জেনে সে তক্ষুনি কোদাল আর শাবল নিয়ে সেখানে চলে গেল। কলসটি খুঁজে পেতে তার কোন সমস্যা হলো না। তবে কলসে সত্যি সত্যি রূপার টাকা আছে কি না, সেটি জানতে সে ঢাকনাটা খুললো। কিন্তু কলসের ভেতরে যা দেখলো তাতে সে চমকে উঠলো, ভয়ে তার রক্ত জমে যেতে লাগলো। কলসটা যে কালো কালো বিষাক্ত সাপে ভরা! সাপগুলো ফোস ফোস করছে। আরেকটু হলে তাকে ছোবল দিয়েই ফেলতো। সে বুদ্ধি করে কলসটার মুখ বন্ধ করলো। তারপর মনে মনে ভাবতে লাগলো, কৃষকের বউ নিশ্চয়ই কোন কারনে আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। সে তো আমার শত্রু। না হলে এভাবে লোভ দেখিয়ে কাউকে সাপে ভর্তি কলসের দিকে পাঠায়! আরেকটু হলেই তো আমি মারা পড়তাম। এর প্রতিশোধ আমি নেবই।

এসব কিছু ভেবে সে সাপে ভর্তি কলসটাকে নিয়ে চুপি চুপি সেই কৃষকের বাড়িতে গেল। তারপর আরো চুপি চুপি কারো টের পাওয়ার আগেই সে সাপভর্তি কলসটি চুলার উপর ঢেলে দিল। ভাবলো, কৃষকের স্ত্রী তো সকালে চুলার কাছে আসবেই রান্না করতে। তখন কোন না কোন সাপ তাকে কামড়াবেই।

সকালে সেই কৃষক যথারীতি ফজরের নামাজ পড়বে বলে ওযু করার জন্য রান্না ঘরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে সে দেখলো চুলার উপর কি যেন চকচক করছে। কাছে গিয়ে সে দেখলো, একি! এ যে সব রূপার মুদ্রা! সে তক্ষুনি সিজদায় পড়ে গেল। বললো, ‘সবই আল্লাহ তোমার দয়া!’ তোমার কাছে হাজার শোকর। তোমার কাছে চুলার ওপর ধন-সম্পত্তি চেয়েছিলাম, তুমি আমাকে তাই দিয়েছো!’

            

***** সমাপ্ত *****

إرسال تعليق (0)
أحدث أقدم