পৃথিবীর শেষ ঝর্ণার খোঁজে (ইংল্যান্ডের লোককাহিনী) || লোককাহিনী - ১৭


সারমর্ম: সৎমায়ের হিংসাত্মকভাবে চাপিয়ে দেয়া আদেশ পালন করতে গিয়ে এক অসহায় মেয়ের জীবনে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক যে ঘটনাটি ঘটলো। মোট- ৫ পৃষ্ঠা


ইংরেজদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগটা এখনো বেশ ভালভাবেই আছে। দুইশত বছর আমাদের দেশ শাসন ও শোষণ করেছিল ইংরেজরা। ইংরেজদের ভাষা ও সংস্কৃতির অনেক কিছুই এখন আমাদের ঐতিহ্যে মিশে আছে। এবার আমরা জানবো সেই ইংরেজদেরই একটি লোককাহিনী।

অনেক অনেকদিন আগে এক গ্রামে রোজমেরি নামে এক মেয়ে বাস করতো। সে ছিল খুবই সরল প্রকৃতির। তবে মেয়েটি ছিল বড় দুর্ভাগা। ঘরে ছিল তার সৎমা। তার সৎমা ছিল বড়ই নিষ্ঠুর প্রকৃতির।

রোজমেরির কোন সুন্দর পোশাক ছিল না। তার সৎমা তাকে ভালো খাবার দিত না। তার কোন খেলার সাথীও ছিল না। ঘর পরিষ্কার থেকে শুরু করে কাপড় ধোঁয়া, রান্নাকরা সহ সংসারের সমস্ত কাজই তাকে করতে হতো। তারপরও রোজমেরি সৎমায়ের মন পেত না।

সারাদিন রোজমেরি অনেক কাজ করত। কিন্তু তার সব কাজেই দোষ ধরার জন্য সৎমা মুখিয়ে থাকত।

সৎমা এদিকে মনে মনে ফন্দি আঁটে, কিভাবে রোজমেরিকে ঘরছাড়া করা যায়, চিরতরে বিদায় দেয়া যায়।

একদিন সৎমা বলল, শোন মেয়ে, এই নাও একটা চালুনি। পৃথিবীর শেষ ঝর্ণা খুঁজে বের কর। যখন ঝর্ণা খুঁজে পাবে তখন এই চালুনি ভরে ঝর্ণার পানি নিয়ে আসবে আমার জন্যে। মনে রেখো, একফোঁটা পানি যেন না পড়ে। যাও, বেরিয়ে পড় শিগগির।

কি আর করবে রোজমেরি! সৎমার মুখের ওপর কথা বলার সাহস তার নেই। চালুনিটা হাতে তুলে নিল বেচারি। তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ল পৃথিবীর শেষ ঝর্ণার খোঁজে।

যেতে যেতে দেখা হল এক ঘোড়ার গাড়ির চালকের সঙ্গে। রোজমেরিকে দেখেই সে বলল, কোথায় যাচ্ছ তুমি? তোমার হাতেই বা ওটা কি?

রোজমেরি- আমি বেরিয়েছি পৃথিবীর শেষ ঝর্ণার খোঁজে। এটা একটা চালুনি। সেই ঝর্ণার পানি নিয়ে আসবো এই চালুনিতে।

ঘোড়ার গাড়ির চালক হো! হো! করে হেসে বলল, বোকা মেয়ে, পৃথিবীর শেষ ঝর্ণা কোথায় আছে কেউ তা জানে না। হাসতে হাসতে লোকটা ঘোড়ার গাড়িতে চেপে বসল।

হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করে দেখা হল তিনটা ছেলের সঙ্গে। বাড়ির সামনে ছোট্ট একটা মাঠে তারা খেলাধূলা করছে। রোজমেরিকে দেখেই তাদের একজন জানতে চাইল, এই যে মেয়ে, যাচ্ছ কোথায়? হাতে তোমার কি?

রোজমেরি- পৃথিবীর শেষ ঝর্ণার খোঁজে যাচ্ছি আমি, আর হাতে রয়েছে একটা চালুনি। এই চালুনিতে করে ঝর্ণার পানি নিয়ে আসতে হবে।

মেয়েটির কথা শুনে তিনটি ছেলেই শব্দ করে হাসতে লাগল, তারা বলল, পৃথিবীর শেষ ঝর্ণা বলে কোন ঝর্ণাই নেই।

হতাশ হয়ে পড়ে রোজমেরি। কিন্তু হাল ছেড়ে দিলে হবে না। ঝর্ণার খোঁজে তাকে যেতেই হবে। রোজমেরি রাস্তায় যাকেই পায় তাকেই জিজ্ঞেস করে যে কোথায় পৃথিবীর শেষ ঝর্ণা আছে। কিন্তু কেউ সেটি জানে না।

সবশেষে এক থুরথুরে বুড়ির সঙ্গে দেখা হলো রোজমেরির। কুঁজো হয়ে গেছে বুড়ি-তার হাঁটা দেখে মনে হয় যেন দুটি মানুষ হেঁটে যাচ্ছে। রাস্তার ধারে নিচু হয়ে ঝুঁকে কি যেন খুঁজছে বুড়ি।

কি খোঁজ বুড়িমা? প্রশ্ন করে রোজমেরি।


পৃষ্ঠা ১/ ৫



বুড়ি বলল, আমার দুটো রুপার টাকা ছিল। তাই দিয়ে রুটি কিনবো ভেবেছিলাম। কিন্তু পথে কোথায় যে হারিয়ে গেল রুপার টাকা দুটো, খুঁজেই পাচ্ছি না। আজ রাতে খাওয়ার মতো কিছুই নেই আমার।

রোজমেরির খুব দুঃখ হল। বুড়িমাকে সাহায্য করার জন্যে রুপোর টাকা খুঁজতে লাগল সে। তীক্ষ্ণ চোখে অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই হারানো রুপার মুদ্রা খুঁজে পেল সে। বুড়িমা তখন ভাঙ্গা-ভাঙ্গা গলায় বলল, কি বলে যে ধন্যবাদ দিব তোমায়! এখন বলো, তুমি কোথায় যাচ্ছ? আর তোমার হাতে এই চালুনিই বা কেন?

আমি পৃথিবীর শেষ ঝর্ণার খোঁজে বেরিয়েছি, বলল রোজমেরি। তারপর দুঃখ করে জানাল, কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে এমন ঝর্ণা হয়তো আমি আর খুঁজেই পাব না। যদি সেই ঝর্ণার সন্ধান পাই তবে চালুনি ভরে পানি নিয়ে আসবো। আমার সৎমা আমাকে এই দ্বায়িত্ব দিয়েছেন।

বুড়ি বলল, কেন তুমি খোঁজ পাবে না পৃথিবীর শেষ ঝর্ণার! আমি তোমাকে পথের সন্ধান বলে দিচ্ছি।

বুড়িমা তারপর লাঠিটা তুলে রোজমেরিকে দেখিয়ে দিল- সোজা এই পথ ধরে গেলে সামনে পাবে একটা পাহাড়। পাহাড়ের পাথুরে পথ দিয়ে যেতে যেতে দেখবে একটা হোজেল গাছের বন। বন পেরুলেই একটা বিশাল প্রান্তর। সেই প্রান্তরের শেষ সীমানায় রয়েছে ঝর্ণাটা। আশীর্বাদ করি সহজেই যেন ঝর্ণার খোঁজ পাও। আল্লাহ তোমায় শক্তি দিন। এই কথা বলেই বুড়িমা খোঁজাতে খোঁড়াতে চলে গেল।

রোজমেরি এবার খুশি মনে রওনা দিল। পাহাড়ের পাথুরে পথ পেরিয়ে সত্যি সত্যি সে পৌঁছল হেজেল বনের ধারে। তারপর যেতে যেতে এলো সেই বিশাল প্রান্তর। কোত্থেকে যেন কুলকুল করে পানি বইছে। গাছপালার ফাঁক দিয়ে পানি গড়িয়ে যাচ্ছে। সেই পানির রেখা ধরে একটু এগোতেই দেখা গেল একটা স্বচ্ছ ঝর্ণাধারা। ঝর্ণা দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল রোজমেরি। রোজমেরি ঝর্ণার পাশে হাটু মুড়ে বসলো।

এক আঁজলা পানি নিয়ে চোখ মুখ ধুয়ে চালুনি পেতে ধরল ঝর্ণার পানিতে। কিন্তু চালুনিতে অনেক ফুটো। যতবারই সে পানি নিতে যায় ততবারই ফুটো দিয়ে ঝরঝর করে পানি ঝরে পড়ে। সৎমার জন্য চালুনি দিয়ে কিভাবে সে পানি নেবে? একসময় হতাশ হয়ে পড়ল সে। তারপর কান্না শুরু করলো।

এমন সময় কানে এলো তার ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ ডাক। লাফাতে লাফাতে তার কাছে এলো শ্যাওলা জমা সবুজ রঙের মোটাসোটা একটা ব্যাঙ। ব্যাঙ জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে তোমার? কাঁদছো কেন?

রোজমেরি সব খুলে বলল ব্যাঙটাকে।

ব্যাঙ তখন বলল, তোমাকে আমি সাহায্য করতে পারি। তবে একটা প্রতিজ্ঞা করতে হবে তোমাকে।

রোজমেরি জানতে চাইল, কি সেই প্রতিজ্ঞা।


পৃষ্ঠা ২/ ৫



ব্যাঙ বলল- কঠিন কিছু নয়। কোন একটা রাত আমি তোমার সঙ্গে কাটাবো। যা যা করতে বলবো, তোমাকে তাই তাই করতে হবে।

রোজমেরি বলল- নিশ্চয়ই করব। প্রতিজ্ঞা করছি যা তুমি করতে বলবে আমি তাই করবো। আমায় এখন সাহায্য করো তুমি। ব্যাঙ এক মূহুর্তে কি যেন ভেবে নিল। তারপর মাথা বাঁকিয়ে গানের সুরে সুরে বলল,

আমি ব্যাঙ ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ, ঝর্ণা পাড়ে নাচি।

সবুজ সবুজ অবুঝ বন, বেশ তো সুখেই আছি।

চালুনিটার ভেতর তুমি লতা পাতা দাও।

মাটির প্রলেপ দিয়ে এবার পানি ভরে নাও।

ব্যাঙের কথা শুনে রোজমেরি ঝটপট ঘাস-লতা-পাতা জোগাড় করে চালুনিটার চারপাশ আটকে দিল। তারপর ভেজা মাটির প্রলেপ মেখে ছিদ্রগুলো বন্ধ করে দিল।

ব্যাঙ বলল, না না! আমার উপকার মনে রাখার দরকার নেই তোমার। যত্ন করে পানি বয়ে নিয়ে যাও। তবে হ্যাঁ-প্রতিজ্ঞার কথা মনে রেখো বন্ধু।

রোজমেরির তখন মনে পড়ল- সে প্রতিজ্ঞা করেছে কোন এক রাত ব্যাঙটার সঙ্গে কাটাবে। ব্যাঙ সারারাত যা যা করতে বলবে তাই তাই করতে হবে। কি আর করতে বলবে, একটা ব্যাঙ ই তো! তাকে এমন আর কোন ঝামেলায় ফেলবে!

রোজমেরি জানালো, প্রতিজ্ঞার কথা সে কোনদিনই ভুলবে না। ব্যাঙ যা বলবে তার চেয়ে বেশি কিছুই সে করে দেয়ার চেষ্টা করবে।

ঠিক ঠিক একদিন রোজমেরি নিজেদের বাসায় ফিরে এল। বোঝাই যাচ্ছে যে- সৎমা তাকে দেখে কি ভীষণ অবাক হয়ে গেছে! মেয়েটির তো কোন ক্ষতি হয়-ই নি উল্টো সে আরো হাসিখুশি মনে বাসায় ফিরে এসেছে। আর চালুনি ভরে পানিও নিয়ে এসেছে।

সৎমা তখন কোন ভালো মন্দ কথা বলল না রোজমেরির সঙ্গে। মনে মনে তার ভীষণ রাগ। রোজমেরিকে শুধু বলল- যা, খাওয়া দাওয়া করে নে। তারপর বাসন-কোসন ধুতে হবে।

সৎমা এমনভাবে কথাগুলো বলল যেন কিছুই ঘটেনি। রোজমেরি কোথায় গিয়েছে, কি করেছে, কিভাবে পানি এনেছে কিছুই জিজ্ঞেস করলো না সৎমা।

সেদিনই-রাত যখন গভীর হলো, তখন সৎমা আর রোজমেরি অবাক হয়ে শুনলো, কে যেনো দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে। অদ্ভুত ভাঙা-ভাঙা স্বরে কি যেন বলছে।

রোজমেরি দরজার কাছে গেল। জানতে চাইল, কে ওখানে? এত রাতে কাকে চাই?

তখন শোনা গেল ব্যাঙের ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ ডাক।

দরজা খোল, দরজা খোল, লক্ষী সোনামণি

ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ আমি ব্যাঙ শোনাই কাতরধ্বনি।

ঝর্ণা-ধারে তুমি আমায় দিয়েছিলে কথা

শুনতে তুমি পাওনা আমার মনের আকুলতা।

সেই ব্যাঙ এসে উপস্থিত।

ব্যাঙের কথা রোজমেরি যেন ভুলেই গিয়েছিল। সৎমা জানতে চাইল-দরজার পাশে কে দাঁড়িয়ে আছে। রোজমেরি সৎমাকে সব খুলে বলল। সে যে প্রতিজ্ঞা করেছে সে কথাও সৎমাকে জানালো।


পৃষ্ঠা ৩/ ৫



সৎমা মনে মনে ভারি খুশি। একটা তুচ্ছ ব্যাঙের হুকুম পালন করতে হবে মেয়েটাকে, এরচেয়ে বড় সাজা আর কি আছে!

রোজমেরি দরজা খুলে দিল। লাফিয়ে লাফিয়ে ব্যাঙটা এলো ঘরের ভেতর। ব্যাঙটা তাকিয়ে তাকিয়ে রোজমেরিকে দেখল। তারপর বলল,

হাটুর উপর বসাও আমায়,

তুমি আমার জান,

তোমার জন্যে ভাবতে ভাবতে,

আমি পেরেশান।

শুনতে তুমি পাওনা আমার মনের আকুলতা!

রোজমেরির তখন কেমন যেন লাগছে। মনটা বেচারীর খারাপ হয়ে গেছে। একটা ভেজা স্যাঁতস্যাঁতে ব্যাঙ তার হাঁটুর উপর বসতে চায়, এ কেমন কথা!

কিন্তু সৎমা হুকুম দিল, ও যা বলছে তোমার তাই করা উচিৎ। প্রতিজ্ঞা অবশ্যই পালন করা উচিৎ।

রোজমেরি ব্যাঙটাকে হাঁটুর উপরে উঠিয়ে নিল। তারপর ব্যাঙটা আবার বলল,

লক্ষীসোনা লক্ষীসোনা খাবার কিছু চাই,

পেটে আমার খিদে, আমি যা পাই তাই খাই।

শুনতে তুমি পাওনা আমার মনের আকুলতা!

ঝর্ণা-পাড়ে তুমি আমায় দিয়েছিলে কথা।

সৎমা ব্যাঙের কথা শুনে বলল, যাও যাও! জলদি করে ওর খাবার এনে দাও।

রোজমেরি রাতের খাবার তখনও খায়নি। সে নিজের খাবারের অর্ধেকটা এনে দিল ব্যাঙকে। ব্যাঙ খুশি মনে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব খেল। তারপর ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ করে বলল,

এখন আমার ঘুম পাচ্ছে ঘুম আয়রে আয়

তোমার সাথে শুয়ে পড়ব তোমার বিছানায়।

ঝর্ণা-পাড়ে তুমি আমায় দিয়ে ছিলে কথা

শুনতে তুমি পাওনা আমার মনের আকুলতা!

না, না-এটা কি করে হয়! স্যাঁতস্যাঁতে নোংরা একটা ব্যাঙের সাথে এক বিছানায় কিভাবে শোয় যায়? সব মানলেও এটা মানা যায় না।

কিন্তু ব্যাঙের কাণ্ড দেখে হো হো করে হেসে উঠলেন সৎমা। ভারি মজা পেয়েছে সে। আচ্ছা করে শায়েস্তা করা যাচ্ছে মেয়েটিকে। সৎমা রোজমেরিকে বলল, যাও শুতে যাও। বিছানা করে দাও ব্যাঙকে। তোমার প্রতিজ্ঞার কথা ভুলে যাচ্ছ কি করে?

রোজমেরি ব্যাঙটাকে সঙ্গে নিয়ে নিজের ঘরে এলো। শুয়ে পড়ল বিছানায়। ব্যাঙটা রইল তার পাশে। ভোরবেলা ঘুম ভাঙ্গলো রোজমেরির। তার কানের পাশে কে যেন ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ করছে।

সকালে উঠে ব্যাঙ রোজমেরিকে বলল, তোমায় আমি যা যা বলেছি সব তুমি করেছো। তোমাকে আর একটিমাত্র কাজের কথা বলবো আমি। তাহলেই তোমার প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা হবে। একটা ছোট্ট কুড়াল নিয়ে এসো। আমার মাথাকে দুভাগ করে দাও।

ব্যাঙের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল রোজমেরি। সে কাতরস্বরে বলল, এই কাজটি আমি করতে পারবো না। তুমি আমার বিরাট উপকার করেছিলে। এখন তোমায় আমি মেরে ফেলবো কিভাবে? এ কাজ আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

ব্যাঙ বললো- যা বলছি তা করতে হবে তোমায়। তোমার প্রতিজ্ঞার কথা স্বরণ কর। এখনও রাত শেষ হয়ে যায়নি। কুড়াল নিয়ে এসো এবং আমার মাথাটাকে দুভাগ কর।


পৃষ্ঠা ৪/ ৫



মন খারাপ করে রান্নাঘরে গেল রোজমেরি। ছোট কুড়ালটা নিয়ে এল সাথে। এই কুড়াল দিয়ে সে কাঠ চেরাই করে। হতভাগ্য ব্যাঙটার দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। কিন্তু ব্যাঙ তখনও চিৎকার করে বলছিল, জলদি আমার মাথায় কুড়াল দিয়ে আঘাত কর।

রোজমেরি কুড়ালটি দিয়ে যেই-না আঘাত করেছে অমনি মূহুর্তেই তার জীবনের সবচেয়ে আশ্চর্য ঘটনাটি ঘটে গেল।

ব্যাঙটা উধাও হয়ে গেছে। কোথাও নেই আর সেই ব্যাঙ। বরং ব্যাঙের বদলে সামনে দাঁড়িয়ে আছে অপরূপ সুন্দর ও সুদর্শন এক যুবক। অবাক হয়ে রোজমেরি পিছিয়ে এল এক পা। তার হাত থেকে খসে পড়ল কুড়ালটা। সুদর্শন সেই যুবকের মুখে তখন হাসি।

যুবকটি বলল, ভয় পেয় না আমাকে। অত্যন্ত সুরেলা এবং মিষ্টি ছিল যুবকটির কন্ঠস্বর।

যুবকটি রোজমেরিকে বলল, আমি তোমাকে ঝামেলায় ফেলার জন্য আসিনি। এক সময় আমি ছিলাম একজন রাজপুত্র। এক দুষ্টু ডাইনি আমায় জাদু করে ব্যাঙ বানিয়ে রাখে। শর্ত ছিল, যদি কোনদিন আমি একরাত কোন তরুণী মেয়ের সঙ্গে কাটাতে পারি তবেই তার জাদুমন্ত্র কেটে যাবে। এটা আসলে ছিল জাদুর মায়া।

এমন সময় সৎমার ঘুম ভেঙ্গেছে। রোজমেরির ঘরে ঢুকেই সৎমা অবাক, কোথায় সেই ব্যাঙ! তার বদলে ঘরের মধ্যে আলো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক রাজপুত্র।

সৎমাকে তখন রাজপুত্র বলল, আপনার মেয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। তারই দয়ায় আমি আবার আমার পুরনো রূপ, জীবন ফিরে পেয়েছি। আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই। আমি ধনে-মানে খুবই নামকরা রাজপুত্র। আর হ্যাঁ- আপনি তো আপনার সৎ মেয়েকে এমনিতেই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে চান। আর তাড়ানোর দরকার পড়বে না। আমি আপনার সৎমেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে যাচ্ছি।

            

***** সমাপ্ত *****
 

পূর্বের পোষ্ট: রহস্যময় তিনটি হাসি (আয়ারল্যান্ডের লোককাহিনী) || লোককাহিনী - ১৬

পরবর্তী পোষ্ট: হ্যামিলনের সেই বাঁশিওয়ালা (জার্মান লোককাহিনী) || লোককাহিনী - ১৮
 

লোককাহিনী’ ক্যাটাগরির জনপ্রিয় গল্পসমূহ

  ◉ এক যে ছিল শেয়ালনী (ইউক্রেনের লোককাহিনী)

  ◉ সাদা মানুষ আর কালো মানুষের আয়না (রোডেশিয়ার লোককাহিনী)

  ◉ সাত ভাই চম্পা (বাংলাদেশী রূপকথার গল্প)

  ◉ ভাগ্যবানের ভাগ্য (ভারতের লোককাহিনী)

  ◉ গোন ও কোমার বন্ধুত্ব (জাপানের লোককহিনী)


➽ সর্বশেষ আপলোডকৃত পোষ্টসমূহ

➽ Golpo24.com

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post