সারমর্ম: বাবার হত্যার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে উলান বাতোর নামক এক সাহসী যুবক যেভাবে পৃথিবীর জগতের বাহিরে চলে গিয়েছিল। এরপর যেভাবে যুবকটি সেই জগৎ থেকে ফিরে এসেছিল এবং তার কর্ম সম্পাদন করেছিল। মোট- ৯ পৃষ্ঠা
রাশিয়া এবং চীনের মাঝে অবস্থিত দেশটি হল মঙ্গোলিয়া।
এখানে আছে মঙ্গোল জাতির বাস। খুব প্রাচীন এ জাতি। তাই এ জাতির গল্প খুব মজারই হওয়ার
কথা।
গল্পের প্রথমেই আছে সেই রাজার কথা। প্রাচীনকালের রাজা!
খুবই অত্যাচারী। রাজার জমিতে দাসের মতো কাজ করতে হতো ক্ষেতমজুরদের। এই ক্ষেতমজুরদেরই
একজনের নাম ছিল উলান বাতোর। সে যেমন ছিল শক্তিমান তেমনি ছিল নিপুণ তীরন্দাজ। আকাশ অথবা
মাটির কোনকিছুই তার তীর থেকে রেহাই পেত না। এই কারণে উলান বাতোরের নাম জানতো না এমন
লোক ছিল না।
একদিন উলান বাতোর শিকার করে ফিরছে। পথে এক বুড়োর সঙ্গে
তার দেখা হলো। বুড়োটি ছিল খুবই বয়স্ক, তার সমস্ত চুল ধবধবে সাদা।
উলান বাতোরকে বুড়ো বললেন, ‘উলান বাতোর, তুমি এখন জোয়ান হয়েছো।
তুমি তো চমৎকার তীর ছুরতে পার- তবে কেন তুমি তোমার বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নাওনি? ঈগল
নীল আকাশের অনেক উঁচুতে উড়লেও মাটিতে তার ছায়া রাখে। বাতোর, বাতোর! তুমি কি করে তোমার
নিজের বাবাকে ভুলতে পারো?’
একথা শুনে উলান বাতোর তাড়াতাড়ি ঘোড়া থেকে নেমে বুড়োর
সামনে হাটু পেতে বসে ব্যগ্রভাবে জিজ্ঞেস করলো, ‘কে আমার বাবাকে মেরে ফেলেছিল?’
বুড়ো মাথা নেড়ে বললেন, ‘পনেরো তারিখে পূর্ণিমা। সেই সময়ে
সবকিছু তোমার কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে।’ এই বলে বুড়ো পশ্চিম দিকে চলে গেলেন।
বুড়োকে চলে যেতে দেখে উলান বাতোরও তাড়াতাড়ি নিজের
ঘোড়ায় চড়ে বাড়ি ফিরলো। মায়ের হাত ধরে সে জিজ্ঞেস করলো- ‘মা, আমার বাবার মৃত্যু কিভাবে হয়েছিল?’
এই প্রশ্নে তার মা প্রথমে চমকে উঠলেন, তারপর নিজেকে
সামলে নিয়ে বললেন, ‘আমি তো তোমাকে অনেকবার বলেছি যে, তোমার বাবা রোগে
ভুগে মারা গিয়েছিলেন, সে সময়ে তোমার বয়স ছিল মাত্র এক বছর। আজ কেন আবার একথা জিজ্ঞেস
করছো? কেউ তোমাকে কিছু বলেছে নাকি?’ বুড়ো তাকে যে একথা বলেছিলেন সেকথা
উলান বাতোর মার কাছে উল্লেখ করল না, শুধু নিজে মনে মনে ভাবতে শুরু করলো।
সেদিন রাত্রে মন অত্যন্ত অস্থির থাকায় উলান বাতোর
কিছুতেই ঘুমোতে পারলো না। হঠাৎ সে শুনলো কেউ কাঁদছে এবং কান্নার আওয়াজ যেন তার নিজের
তাঁবুঘরের মধ্যেই। সে বুঝলো তার মা-ই কাঁদছেন। বিছানা থেকে উঠে সে চুপি চুপি মায়ের
কাছে গেল, মাটিতে বসে মায়ের হাত ধরে সে বললো, ‘মা, তুমি কাঁদছো কোন আমাকে বল।
আমি তোমার ছেলে।’
তার মা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘বাছা আমার, তুমি এখন বড় হয়েছো,
উপযুক্ত হয়েছো, অনেক কিছু তুমি বুঝতে পারো। তোমাকে এখন আমার কিছু বলা উচিৎ পাছে তোমার
উপরও মহাবিপদ নেমে আসে। শুধু এই ভয়ে আমি আগে তোমাকে সঠিক কথা বলিনি। তোমার বাবা আসলে
রোগে মারা যাননি, তিনি রাজদ্রৌহী দলের সহায় ছিলেন বলে সামন্তরাজ তাকে জ্যান্ত কবর দিয়েছিলেন।
তখন তোমার বয়স মাত্র একবছর। আমি তোমাকে কোলে নিয়ে দূরে পালিয়ে গিয়ে আট বছর ভিক্ষে করে
বেড়িয়েছি।
পৃষ্ঠা ১/ ৯
আট বছর দেশছাড়া ছিলাম কিন্তু আমাদের এই তৃণভূমি আর
তাঁবুর ঘরগুলো সবসময়ে আমার মনে পড়তো। দেশের মাটির টানে শেষ পর্যন্ত আমি তোমাকে নিয়ে
ফিরে এসেছিলাম, নাম বদলে আবার সেই সামন্তরাজেরই একজন ভূমিদাসী হয়ে এতবছর কাটিয়েছি।
কত কষ্ট করেছি, কত গালাগালি আর চাবুক সহ্য করেছি, আর আশা করেছি তুমি তাড়াতাড়ি বড় হয়ে
উঠবে।’ উলান বাতোরের মা আর বলতে পারলেন
না। ঝরঝর করে তার চোখের পানি উলান বাতোরের হাতের উপর পড়তে লাগলো।
উলান বাতোর তার মার কথা শুনে নিজেও কাঁদছিল। কিছুক্ষন
পর সে নিজের চোখের পানি মুছে দাঁতে দাঁত ঘষতে ঘষতে দেয়াল থেকে তার তীর-ধনুক নামিয়ে
হাতে নিল, অন্য হাত সে নিজের বুকের উপরে রেখে শপথ করলো, ‘মা, আমি সামন্তরাজকে ধ্বংস করে
বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিব।’
মা উলান বাতোরের হাত ধরে ব্যাকুলভাবে বললেন ‘যেও না বাবা, বাছা আমার, সামন্তরাজ
মহা দুর্দান্ত লোক, কত তার লোক লস্কর, তুমি তাদের সঙ্গে পারবে না?’
উলান বাতোর বলল, ‘মা, আমি কিছুই ভয় করিনা। আমি তার
বিরুদ্ধে চুড়ান্ত লড়াই চালাবো।’
মা উলান বাতোরকে আঁকড়ে ধরে বললেন, ‘বাছা, মায়ের কথা শোনো, তুমি যেও
না। তোমাকে তোমার বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিশ্চয়ই নিতে হবে। কিন্তু তুমি একা কি করে
প্রতিশোধ নেবে? আমাদের পূর্বপুরুষেরা বলেছিলেন, সেরা কুস্তিগীরও একা অনেকের মোকাবিলা
করতে পারে না। সেরা ঘোড়াও একশো চাবুকের ঘা সহ্য করতে পারে না। তুমি একা সামন্তরাজের
সৈন্যদের হারাতে পারবে না।’
মায়ের এইসব কথায় উলান বাতোর আর কিছু করলো না। কিন্তু
এরপর থেকে তৃণভূমিতে আর উলান বাতোরের গান শুনতে পাওয়া গেল না। উলান বাতোর বাইরে গেলে
তার মা দুশ্চিন্তায় অস্থির হয়ে থাকে। এইভাবে বেশকিছু দিন কেটে গেল। একদিন সামন্তরাজের
হুকুমে উলান বাতোরকে সামন্তরাজের সঙ্গে শিকারে যেতে হলো। উলান বাতোর মুখে কিছু না বললেও
সামন্তরাজের প্রতি তার রাগ আর ঘৃণা তার দৃষ্টি থেকে ঝরে পড়েছিল। বারবার সেই দৃষ্টি
দেখে সামন্তরাজ ক্ষেপে গিয়ে উলান বাতোরকে মারার জন্য চাবুক তুললো।
সঙ্গে সঙ্গে উলান বাতোর সামন্তরাজের হাত থেকে চাবুক
কেড়ে নিয়ে তার গায়ে সপাৎ করে প্রচন্ড এক ঘা বসিয়ে দিয়ে বললো, ‘আমার বাবা উলানকে তোমার মনে নেই?
আমি আজ তার শোধ তুলবো।’ এই বলে সামন্তরাজকে মারার জন্য
আবার চাবুক তুলতেই সামন্তরাজের সৈন্যেরা উলান বাতোরের উপর ঝাপিয়ে পড়ে তাকে কাবু করে
ফেলে দড়ি দিয়ে আষ্টে পৃষ্টে বাঁধলো। তারপর টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে প্রথমে বেদম মারলো,
পরে তাকে দড়িবাঁধা অবস্থায়ই অন্ধকার কারাগারে ফেলে রাখলো।
পৃষ্ঠা ২/ ৯
বেশ কয়েকদিন পর সামন্তরাজের অনুচরেরা কারাগারে এসে
উলান বাতোরকে টানতে টানতে সামন্তরাজের কাছে নিয়ে গেল। কয়েকদিন ঘোর অন্ধকারে থাকার পর
সামন্তরাজের বিরাট জমকালো তাঁবুর জৌলুসে উলান বাতোরের চোখ ধাঁধিয়ে গেল।
এরপর বিকট দাঁত বের করে নিষ্ঠুর হাসি হেসে সামন্তরাজ
হুকুম করলো, ‘আমার কুয়োর মধ্যে রাজকুমারীর সোনার আংটি পড়ে গেছে।
তুই যদি কুয়োর তলা থেকে তা তুলে আনতে পারিস তবে তোকে ছেড়ে দেব।’
উলান বাতোর বলল, ‘সবাই জানে তোমার কুয়োর তল নেই।
কেন আর সোনার আংটির উছিলা করছো? আমাকে যেভাবে খুশি মেরে ফেল-আমি উলান বাতোর, আমি কিছু
ভয় করিনা। ঝড় যত ভয়ংকরই হোক তার শেষ আছে। মেহনতি মানুষের দিন আসবেই, আর সেইদিন যখন
আসবে তখন আমি........’
সামন্তরাজ রাগে কাঁপতে কাঁপতে উলান বাতোরকে কথা শেষ
করতে না দিয়ে চিৎকার করে অনুচরদের হুকুম করলো, ‘জলদি, এক্ষুনি ওটাকে নিয়ে কুয়োর
মধ্যে ফেলে দে।’ সঙ্গে সঙ্গে সামন্তরাজের অনেকগুলো অনুচর উলান বাতোর
আর কোন কথা বলতে পারার আগেই তাকে ধরে সেই অতল কুয়োর মধ্যে ফেলে দিল।
উলান বাতোরকে যে দড়ি দিয়ে বেধে কারাগারে নিয়ে যাওয়া
হয়েছিল তার মা সেটা জানতেন না। তিনি তাদের তাঁবুঘরের সামনে দাঁড়িয়ে সারাদিন ধরে ছেলের
জন্য অপেক্ষা করলেন। পশ্চিম আকাশের সূর্য ডুবে গেল, উলান বাতোর ফিরলো না। চাঁদ পাহাড়ের
উপর দিয়ে ধীরে ধীরে আকাশে উঠলো তবুও উলান বাতোরের দেখা নেই। আকাশের তারা আকাশে মিলিয়ে
গেল, রাত ভোর হলো কিন্তু উলান বাতোর তখনও নিরুদ্দেশ।
ছেলে কোন বিপদে পড়েছে এই ভয়ে মা উলান বাতোরের খোঁজে
ঘুরে বেড়াতে লাগলেন। শেষে সামন্তরাজের এক দয়াবতী দাসীর কাছে তিনি শুনলেন উলান বাতোর
রাজরোষে কারাগারে বন্দি হয়েছে। উলান বাতোরের মা জানলেন না যে, উলান বাতোরকে অতল কুয়োয়
ফেলে দেয়া হয়েছে। উলান বাতোর কারাগারে আছে এই ভেবে তিনি দিনরাত কাঁদতে লাগলেন। তার
চোখের পানি নদীর ধারার মতো বয়ে চলল। সামন্তরাজের কাছে গিয়েও অনেক কাকুতি-মিনতি করলেন,
কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। তিনি জানতেও পারলেন না উলান বাতোর তার চেনা পৃথিবীর কোথাও
নেই।
কিন্তু উলান বাতোর কোথায়?
এদিকে উলান বাতোরকে অতল কুয়োর মধ্যে ফেলে দেয়ার পর সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল। তার জ্ঞান যখন ফিরে এলো তখন সে প্রথমে ঠিক করে উঠতে পারলো না ইতোমধ্যে কতোটা সময় পার হয়েছে। হঠাৎ পানির কুলকুল শব্দ তার কানে এলো, সে চোখ মেলে চারদিকে তাকিয়ে দেখলো সে নদীর পাশে একটা গাছের নিচে শুয়ে আছে, কুয়োর মধ্যে নয়। অবাক হয়ে সে নিজের বুড়ো আঙ্গুলে কামড় দিল, কামড়ে ব্যাথা পেয়ে সে বুঝলো যে সে এখনও বেঁচে আছে। উঠে বসে সে দেখলো যে তার গায়ের আঘাত পুরোপুরি সেরে গেছে। সে আরো অবাক হয়ে ভাবলো, ব্যাপারটা কি?
পৃষ্ঠা ৩/ ৯
ঠিক সেই সময়ে তার চোখে পরলো কিছু দূরে একটা লোক সটান
উপুর হয়ে মাটিতে একবার এ কান আর একবার ও কান লাগিয়ে কিছু একটা শুনবার চেষ্ট করছে। ব্যাপারটা
উলান বতোরের কাছে অদ্ভুত ঠেকলো। কাছে গিয়ে উলান বাতোর তাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘তুমি কি করছো?’
লোকটি বলল- ‘আমি পাতালের রাজার দাস। শুনেছি
উলান বাতোর বিপদে পড়েছেন আর এখন এই রাজ্যে আছেন। আমি তার সঙ্গে মিতালী করতে চাই।’
উলান বাতোর আবার প্রশ্ন করলো, ‘তাকে সাহায্য করার মতো বিশেষ কি
শক্তি আছে তোমার কাছে?’
দাস উঠে দাঁড়িয়ে উত্তর দিলো, ‘মাটিতে কান পেতে আমি পাহাড়ের ওপারের
লোকদের কথাবর্তাও শুনতে পারি। আমার নাম মহাশ্রবণ শক্তিধর দাস। আপনি কে?’
উলান বাতোর তখন বলল, ‘আমিই তোমার বন্ধু উলান বাতোর।’
একথা শুনে মহাশ্রবণ শক্তিধর দাস খুব খুশি হলো। সে
উলান বাতোরকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাকে আমন্ত্রণ জানালো।
উলান বাতোর তাকে ধন্যবাদ দিয়ে বলল, ‘ভেড়ার বাচ্চা যেমন তার মার কাছে
থেকে দূরে থাকতে পারে না, তেমনি আমিও নিজের মাতৃভূমি থেকে দূরে থাকতে পারি না। আমার
শত্রু এখনো বেঁচে আছে, এ অবস্থায় আমি কি করে বেশি সময় বাইরে থাকবো। আমার মা নিশ্চয়ই
আমার অপেক্ষা করছেন। তাই আমাকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যেতে হবে।’
মহাশ্রবণ শক্তিধর দাস তাকে পৃথিবীর মাটির উপর পৌঁছে
দিতে রাজি হল। সে উলান বাতোরকে চোখ বন্ধ করতে বলল। উলান বাতোর চোখ বুজে অল্প সময়ের
মধ্যে টের পেলো সে উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে, সেই সঙ্গে তার কানে এলো বাতাসের শোঁ শোঁ
শব্দ। একটু পরে সে যেন কার ফিসফিস কথা শুনল, ‘উলান বাতোর, উলান বাতোর, আমার বন্ধু,
আপনি কোন বিপদে পড়লে আমাকে পর পর তিনবার ডাকবেন, আমি আপনাকে সাহায্য করতে আসবো।’
একটু পরে উলান বাতোর চোখ মেলে দেখল সে পৃথিবীর মাটির
উপর দাঁড়িয়ে আছে, তবে সে জায়গা তার বাড়ির কাছের তৃণভূমি নয়। তার সামনে পথ জুড়ে দাঁড়িয়ে
আছে বিরাট উঁচু উঁচু পাহাড়। পায়ের মাটির দিকে তার চোখ পড়লে সে দেখতে পেল মাটিতে এটি
তীর আঁকা আছে। তীরের নির্দেশ অনুসরণ করে সে এগিয়ে চলল, কিন্তু সামনের দিকে তাকিয়ে তার
মনে চিন্তা হতে লাগল সামনে এতো বড় বড় পাহাড় পার হতে হলে তারতো বাড়ি ফিরতে খুবই দেরি
হয়ে যাবে।
আরও কিছুদূর এগুনোর পর তার মনে হল একটা পাহাড় যেন পাশে সরে গিয়ে তাকে সামনের দিকে যাওয়ার সমতল পথ করে দিচ্ছে। তার বেশ খটকা লাগল, তাড়াতাড়ি ছুটতে ছুটতে সে অনেক কাছে গিয়ে যা দেখল তাতে একেবারে তাজ্জব হয়ে গেল। সে দেখল একটা লোক পাহাড়টাকে ঠেলে নিয়ে চলছে।
পৃষ্ঠা ৪/ ৯
উলান বাতোর তার কাছে গিয়ে প্রশ্ন করলো, ‘তুমি কি করছো?’
লোকটা উলান বাতোরের দিকে তাকিয়ে পাহাড়টা ঠেলতে ঠেলতেই
বলল, ‘আমি পাহাড় রাজার দাস। শুনেছি যে
উলান বাতোর বিপদে পড়েছেন আর এই রাজ্যে এসেছেন। তার সঙ্গে আমি ভাব করতে চাই।’
লোকটা আরও বলল, ‘আমার গায়ে এত বেশি জোর যে বড় বড়
পাহাড়ও আমি ঠেলে সরাতে পারি। আমার নাম পাহাড় নড়ানো দাস। আপনি কে?’
উলান বাতোর বলল, ‘আমি তোমার বন্ধু উলান বাতোর।’ একথা শুনে পাহাড় নড়ানো দাস খুব খুশি হল। সে উলান
বাতোরকে তার নিজের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানালো। কিন্তু উলান বাতোর তখন
তার মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য খুব ব্যস্ত।
অগত্যা পাহাড় নড়ানো দাস উলান বাতোরকে পাহাড়ের ওপারে
নিয়ে যেতে রাজি হল। সে উলান বাতোরকে চোখ বন্ধ করে থাকতে বলল।
উলান বাতোর চোখ বন্ধ করা মাত্র একটা দমকা বাতাস যেন
তাকে উড়িয়ে সামনের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো। সঙ্গে সঙ্গে উলান বাতোর শুনতে পেল বিভিন্ন
রকম জানোয়ারের ডাক। ডাক যখন থেমে গেল তখন কার যেন কথা তার কানে ভেসে এলো, ‘উলান বাতোর, উলান বাতোর, আপনি আমার
বন্ধু। আপনি কোন বিপদে পরে আমাকে যদি পরপর তিনবার ডাকেন তাহলে আমি নিশ্চয়ই আপনাকে সাহায্য
করতে আসব।’
উলান বাতোর চোখ মেলে দেখল পাহাড়গুলো তার পেছনে রয়েছে
কিন্তু ঠিক তার সামনে একটা বিশাল হ্রদ। উলান বাতোরের মনে হলো এত বিরাট হ্রদ পার হওয়া
খুবই কঠিন হবে। ঠিক তখন সে দেখল হ্রদের পানি কমে যাচ্ছে। কমতে কমতে এক সময়ে হ্রদের
পানি একেবারে নিঃশেষ হয়ে গেল, আর হ্রদের তলার মাটি দেখতে দেখতে শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল।
উলান বাতোর খুশি হয়ে হ্রদের তলার মাটির উপর দিয়ে দৌড়ে
হ্রদ পার হওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি এগুতে লাগল। কিন্তু হ্রদের কাছ বরাবর পৌঁছাতে পৌঁছাতে
সে দেখল হ্রদ আবার পানিতে ভরে উঠেছে। হতভম্ব হয়ে উলান বাতোর এদিক ওদিক তাকাতেই দেখতে
পেল হ্রদের তীরে একটি নলখাগড়ার আঁটির উপর একটা লোক বসে আছে, তার মুখে একটা নল। সেই
নল দিয়ে সে একবার হ্রদের পুরো পানি শুষে নিচ্ছে আর একবার সমস্ত পানি উগরে দিচ্ছে। উলান
বাতোর লোকটাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘তুমি কি করছো?’
লোকটা উলান বাতোরকে দেখে মুখ থেকে নল বের করে বলল,
‘আমি সমুদ্র রাজার দাস, আমার নাম
হ্রদের পানি শোষা দাস। আমি শুনেছি উলান বাতোর বিপদে পড়েছেন আর এখন তিনি এই এলাকায় এসছেন।
আমি তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাই। আপনি কে?’
উলান বাতোর বলল, ‘আমিই তোমার বন্ধু, উলান বাতোর।’
পৃষ্ঠা ৫/ ৯
খুবই খুশি হয়ে হ্রদের পানি শোষা দাস নিজের বাড়িতে
নিয়ে যাওয়ার জন্য উলান বাতোরকে নিমন্ত্রণ করলো। কিন্তু উলান বাতোর তখন তার মায়ের কাছে
ফিরে যেতে ব্যকুল, তাই দেখে হ্রদের পানি শোষা দাস উলান বাতোরকে হ্রদের ওপারে নিয়ে যেতে
রাজি হল। সে উলান বাতোরকে চোখ বুজে থাকতে বলল।
চোখ বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে উলান বাতোরের মনে হল সে
যেন দোলনার ভেতরে শুয়ে দোল খাচ্ছে। আর সেই সঙ্গে সে শুনতে পেল জলকল্লোল। একটু পরেই
চারদিক স্তব্ধ হয়ে গেল, শুধু শোনা গেল কে যেন ফিসফিস করে বলছে, ‘উলান বাতোর, উলান বাতোর, আপনি যখনই
কোন বিপদে পড়বেন তখনই আমাকে পরপর তিনবার ডাকবেন, আমি নিশ্চয়ই আপনার কাছে আসবো।’
উলান বাতোর চোখ মেলে দেখল-কোথায় হ্রদ! সে একটা বিশাল
তৃণভূমির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। উলান বাতোর বুঝলো এবার তার বাড়ির হদিস পাওয়া সহজ হবে।
মনে ফুর্তি নিয়ে সে এগিয়ে চলতে লাগলো।
সূর্য অস্ত গেল, কিন্তু সে থামলো না। হঠাৎ সামনে এক
ঝলক আলো ঝলসে উঠল। এই আলো কিসের হতে পারে-এগিয়ে যেতে যেতেই সে ভাবলো। কিন্তু এ নিয়ে
বেশিক্ষণ তাকে চিন্তা করতে হল না। হঠাৎ চিহি চিহি ডাক আর ফোস করে নিশ্বাস ছাড়ার শব্দ
এল, তা শুনে তার মুখে হাসি ফুটল।
উলান বাতোর ছুটতে ছুটতে গিয়ে দেখল একটা সাদা ঘোড়া
দাঁড়িয়ে আছে। তার গায়ের লোম রূপার মত চকচকে। সে এক লাফে ঘোড়াটার পিঠে চড়ে বসে পড়ল আর
ছুটবার চেষ্টা করলো।
কিন্তু ঘোড়াটা নড়লো না, শুধু মাথা উঁচিয়ে চিহি করে
কয়েকটা যাক ছাড়ল। ব্যাপারটা কি তা দেখার জন্য উলান বাতোর ঘোড়ার উপর থেকে নামলো এবং
খুঁজে দেখতে পেল ঘোড়াটার চারটে পা-ই চারটে খুটির সঙ্গে চামড়ার ফিতে দিয়ে শক্ত করে বাঁধা
রয়েছে। চামড়ার মজবুত ফিতা কাটবার মতো কোনকিছু উলান বাতোরের সঙ্গে ছিল না। কিন্তু দমে
না গিয়ে সে উবু হয়ে তার মজবুত দাঁত দিয়ে চামড়ার ফিতে ছিড়ে ফেলবার চেষ্টা শুরু করল।
ক্রমে তার দাঁত থেকে রক্ত পড়তে লাগল, তার জিভ ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেল, তবু সে ক্রমাগত চেষ্টা
করেই চলল। শেষে প্রথম খুটির চামড়ার ফিতাটা ছিড়ে গেল।
কোন বিশ্রাম না নিয়ে সে আবার দ্বিতীয় খুটির চামড়ার ফিতাটা কামড়াতে শুরু করল। এভাবেই একটার পর একটা করে শেষ পর্যন্ত যখন সবকটা চামড়ার ফিতে ছিড়ে ফেলল তখন তার মুখ থেকে বেশ রক্ত ঝড়ছে। বাঁধন মুক্ত রূপালী ঘোড়া আনন্দে তার লেজ ঝাপটে মাথা উঁচিয়ে চিহিচিহি করে ডেকে উঠল, তারপর উলান বাতোরের চারপাশ দিয়ে একবার ঘুরে এসে সামনে হাটু গেরে বসল। উলান বাতোর বলল, ‘ওহে সুন্দর রূপালী ঘোড়া, আমাকে বাড়ি নিয়ে চলো।’
পৃষ্ঠা ৬/ ৯
ঘোড়াটা উলান বাতোরের দিকে তাকিয়ে বারবার নিজের চোখ
খুলে আর বুজে ইশারা করলো, তারপর তিনবার মাথা ঝাকালো। ইশারা বুঝে উলান বাতোর লাফিয়ে
ঘোড়ার পিঠে উঠে চোখ বুজলো। সঙ্গে সঙ্গে শুনলো বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ। যখন হঠাৎ বাতাস
থেমে গেল তখন সে কার যেন ফিসফিস কথা শুনতে পেল, ‘খারাপের বদল খারাপ, দয়ার বদল দয়া।
আপনি কোন বিপদে পড়লে আমাকে তিনবার ডাকবেন।’
উলান বাতোর চোখ মেলে দেখল তার মা একা বসে তাবুঘরের
কাপড়ের দেয়ালের দিকে আনমনে তাকিয়ে আছেন। দুঃখে তিনি শুকিয়ে গেছেন। তার সব চুল একেবারে
সাদা হয়ে গেছে। উলান বাতোর আবেগের সঙ্গে তার মার সামনে হাটু গেরে বসলো, ‘মা, আমি ফিরে এসেছি।’
উলান বাতোরকে দেখে ওর মা এতদিনের সমস্ত দুঃখ ভুলে
গেলেন। তৃণভূমির সবাই ওকে দেখে খুব খুশি হল। কিন্তু উলান বাতোর কাউকে জানালো না আসল
ব্যাপার কি হয়েছিল। সে শুধু নিজের তাঁবুতে বসে বসে দিনের পর দিন তার তলোয়ার শান দিতে
লাগলো। লোকে জানত সামন্তরাজকে অসন্তুষ্ট করার দরুন উলান বাতোরকে কারাগারে বন্দি করে
রাখা হয়েছিল, এখন লোকে ভাবলো সামন্তরাজ শেষ পর্যন্ত সদয় হয়ে উলান বাতোরকে ছেড়ে দিয়েছে।
উলান বাতোর তাদের কথায় হ্যাঁ-না কিছুই বলল না।
ওদিকে উলান বাতোরের ফিরে আসার খবর সামন্তরাজের কানে
গেল। সেকথা সামন্তরাজের বিশ্বাস হলো না। তবু সামন্তরাজ ব্যাপারটা সরজমিনে জেনে আসার
জন্য অনুচর পাঠাল। অনুচর সবকিছুই দেখে শুনে গিয়ে সামন্তরাজকে জানালো যে উলান বাতোর
ঠিকই ফিরে এসছে এবং বসে বসে তার তলোয়ারে শান দিচ্ছে। সামন্তরাজ খুবই অবাক হয়ে গেল।
তার চোখের সামনেই তো উলান বাতোরকে অতল কুয়োয় ফেলে দেয়া হয়েছিল- সে আবার কিভাবে ফিরে
আসতে পারলো। কিন্তু লোকজন তখন বলে বেড়াচ্ছে সামন্তরাজের দয়ায় উলান বাতোর মুক্তি পেয়েছে।
এ অবস্থায় সামন্তরাজের পক্ষে উলান বাতোরকে আর প্রকাশ্যে গ্রেফতার করা সম্ভব হলো না।
উলান বাতোর ভেবেছিল তার ফিরে আসার খবর পেয়ে সামন্তরাজ
আবার তাকে বন্দি করতে লোকলস্কর পাঠাবে, সেজন্যে সে আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়েই রেখেছিল।
কিন্তু কয়েকদিন গেল, তবু কিছুই ঘটলো না। ব্যাপার বুঝতে না পেরে উলান বাতোর মনে মনে
অস্থির হয়ে উঠল। তখন তার মনে পড়ল তার বন্ধু সেই মহাশ্রবণ শক্তিধর দাসের কথা, যে বহুদূর
পর্যন্ত আসা যে কোন শব্দ শুনতে পারে।
সেই রাত্রে তার মা ঘুমিয়ে পড়ার পর উলান বাতোর তাঁবুঘরের বাইরে গিয়ে চুপি চুপি বলল, ‘যে বহুদূর থেকে শুনতে পায় সেই মহাশ্রবণ শক্তিধর দাসকে বলছি: উলান বাতোর বিপাকে পড়েছে, সে তোমার সাহায্য চায়।’ একথা তিনবার বলতেই হঠাৎ চড়াৎ করে মাটি ফেটে গেল, ফাটলের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো ছোটখাটো আকারের সেই দাস।
পৃষ্ঠা ৭/ ৯
সে মাটিতে কান
রেখে কিছুক্ষণ শুনলো, তারপর লাফিয়ে উঠে উলান বাতোরের কানে কানে বলল, ‘খবর ভালো নয়। সামন্তরাজ তার সৈন্যদের
হুকুম করলো তারা যেন তাদের ঘোড়াগুলোর খুর ভালো করে তুলোয় মুড়ে নেয়। কিছুক্ষণের মধ্যে
ওরা তোমাকে ধরতে আসবে। তুমি তাড়াতাড়ি পালাও।’
মহাশ্রবণশক্তিসম্পন্ন দাসকে ধন্যবাদ দিয়ে উলান বাতোর
তাড়াতাড়ি তাঁবুঘরে গিয়ে তার তীর ধনুক কাঁধে নিল, হাতে নিল তলোয়ার। তার মোটেই পালাবার
ইচ্ছে ছিলনা। সে তাঁবুঘরের গা ঘেঁষে অন্ধকারের মধ্যে চুপ করে অপেক্ষা করে রইল। কিছুক্ষণের
মধ্যে নিঃশব্দে অনেকগুলো ঘোড়সওয়ার সৈন্য এসে পৌঁছল। তারা কোন শব্দ না করে ঘোড়া থেকে
নেমে উলান বাতোরের তাঁবু ঘেড়াও করে ফেলল। উলান বাতোর তখন তলোয়ার উছিয়ে সৈন্যদের উপর
ঝাপিয়ে পড়ল। তুমুল লড়াই বেধে গেল। অনেকগুলো সৈন্য কাটা পড়ল।
উলান বাতোর লড়তে লড়তে এগিয়ে গিয়ে এক লাফে একটা খালি
ঘোড়ায় চড়ে বসল, পর মূহুর্তে উলান বাতোরকে পিঠে নিয়ে ঘোড়াটা ছুটতে শুরু করল। সঙ্গে সঙ্গে
সৈন্যরাও ঘোড়া ছুটিয়ে উলান বাতোরকে ধাওয়া করলো। সৈন্যদের সঙ্গে প্রথম থেকেই সামন্তরাজ
নিজেও ছিল। তার যে ঘোড়াটা সবচেয়ে জোরে ছুটতে পারে সেটিতে চড়ে সামন্তরাজও উলান বাতোরকে
ধরার জন্য ঘোড়া ছুটালো। উলান বাতোর ঘোড়ার পিঠে থেকেই মাঝে মাঝে পেছনে ফিরে তীর ছুড়ে
একটার পর একটা সৈন্য মেরে ফেলতে লাগলো। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই উলান বাতোরের কাছে
থাকা সমস্ত তীর শেষ হয়ে গেল। সৈন্যরা সেটা বুঝতে পেরে আরো উৎসাহের সঙ্গে ধাওয়া করলো।
উলান বাতোর ঘোড়া ছুটাতে ছুটাতে হঠাৎ দেখল-সামনে একটা
বিরাট পাহাড়। সঙ্গে সঙ্গে পাহাড় নাড়ানো দাসের কথা তার মনে পড়ল। সে আস্তে আস্তে তিনবার
বলল, ‘পাহাড় নারানো দাস, উলান বাতোর তোমার
সাহায্য চাইছে।’
সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়টা হুড়মুড় করে একপাশে সড়ে গেল, উলান
বাতোর ঘোড়া ছুটিয়ে সে জায়গা পার হয়ে গেল। তখনো গুড়গুড় আওয়াজ হয়ে চলছে শুনে উলান বাতোর
পেছনে তাকিয়ে দেখল, পাহাড় থেকে অনেকগুলো আলগা পাথরের চাঁই গড়িয়ে গড়িয়ে পড়েছে। বেশ
কতগুলো পাথরের চাঁই সৈন্যদের উপর পড়ায় তাদের অনেকেই ঘায়েল হয়ে ঘোড়া থেকে পড়ে গেল। কিন্তু
বাকী সৈন্যরা আর সামন্তরাজ সামনে ঘোড়া ছুটিয়েই চলেছে।
উলান বাতোর আরও জোরে ঘোড়া ছুটালো। কিন্তু একটু পরেই সামনে পড়ল একটা নদী। উলান বাতোর তিনবার আস্তে আস্তে ডাকলো, ‘হ্রদের পানি শোষা দাস, তোমার বন্ধু উলান বাতোর বিপাকে পড়েছে।’ সঙ্গে সঙ্গে নদীটা শুকিয়ে গেল।
পৃষ্ঠা ৮/ ৯
উলান বাতোর নদীর চরের উপর দিয়ে ঘোড়া চালিয়ে ওপারে গিয়ে দেখলো নদী আবার পানিতে ভরে উঠেছে। তার পেছনে পেছনে যেইসব ঘোরসওয়ার নদীর খাতের উপর দিয়ে আসছিল তারা পার হওয়ার আগেই পানির প্রচন্ড প্রবাহে তলিয়ে গেল, শুধু তাদের মধ্যে থেকে সবচেয়ে তেজী ঘোড়াটার পিঠে সামন্তরাজ কোন মতে আগেই খাত পার হয়ে পাড়ে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে উলান বাতোর ঘোড়া ঘুড়িয়ে নিয়ে সামন্তরাজকে তাড়া করলো।
সামন্তরাজের সঙ্গে আর কোন লোকলস্কর নেই, তাই তার বিক্রমও
আর অবশিষ্ট নেই। প্রাণের ভয়ে সে যত জোড়ে সম্ভব ঘোড়া ছুটিয়ে পালাতে লাগলো। সামন্তরাজের
সেই ঘোড়াটা তার অগণিত ঘোড়ার মধ্যে সবচেয়ে জোড়ে দৌড়াতে পারতো। তাই উলান বাতোর অনেক চেষ্টা
করেও সামন্তরাজকে নাগালে পেল না, বরং দুজনের মধ্যে ব্যবধান বেড়েই চলল।
উলান বাতোরের হঠাৎ মনে পড়ে গেল সেই রূপালী ঘোড়ার কথা। সে একদিকে মুখ করে ডাকল, রূপালী ঘোড়া উলান বাতোর তোমার সাহায্য চাইছে। সঙ্গে সঙ্গে চিহিচিহি ডাক শুনে সে দেখতে পেল রূপালী ঘোড়া তার ঘোড়ার পাশে পাশে ছুটছে। উলান বাতোর এক লাফে এই ঘোড়ার পিঠ থেকে ও ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হল। অমনি সে যেন হাওয়ার বেগে উড়ে চলল এবং দেখতে দেখতে সামন্তরাজের নাগাল ধরে ফেলল। সামন্তরাজ উলান বাতোরকে দেখে ভয়ে দিশেহারা হয়ে গেল। উলান বাতোর ঘোড়া থেকে নেমে এসে সামন্তরাজকে তলোয়ারের কয়েকটা কোপে টুকরো টুকরো করে ফেলল। তারপর তলোয়াড়টার ডগা মাটিতে খাড়াখাড়িভাবে পুঁতে উলান বাতোর আকাশের উদ্দেশ্যে কুর্নিশ করে বলল, বাবা, তোমার ছেলে তোমার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিয়েছে!’
***** সমাপ্ত *****
পূর্বের পোষ্ট: চামড়ার ব্যাগে গল্পের আত্মা (কোরিয়ান লোককাহিনী) || লোককাহিনী - ১৩
পরবর্তী পোষ্ট: সাদা মানুষ আর কালো মানুষের আয়না (রোডেশিয়ার লোককাহিনী) || লোককাহিনী - ১৫
‘লোককাহিনী’ ক্যাটাগরির জনপ্রিয় গল্পসমূহ
◉ ইনকাভূমির রাজপুত্র (পেরুর লোককাহিনী)
◉ হাতির চেয়ে চড়ুই কেন শক্তিশালী (আফ্রিকার লোককাহিনী)
◉ সাত ভাই চম্পা (বাংলাদেশী রূপকথার গল্প)
◉ ভাগ্যবানের ভাগ্য (ভারতের লোককাহিনী)
◉ গোন ও কোমার বন্ধুত্ব (জাপানের লোককহিনী)