সারমর্ম: এক কোরিয়ান বালক প্রতিদিন গল্প শুনতো। তার শোনা প্রতিটি গল্পই এক একটি জীবন্ত আত্মা হয়ে তারই ঘরে একটি ব্যগের ভেতরে জমা হত। কিন্তু বালকটি অন্যদেরকে গল্প না শোনানোর কারণে আত্মারাও ব্যাগ থেকে বের হতে পারে না। অবশেষে আত্মাগুলো বালককে ঘিরে এক ভয়ংকর পরিকল্পনা করলো। কি সেই পরিকল্পনা তা জানতে পড়ুন পুরো গল্পটি। মোট- ৫ পৃষ্ঠা
কোরিয়া খুব দূরের দেশ নয়। তবে কোরিয়া নামে আছে দুটি
দেশ, উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া। কোরিয়া বিশ্বের অন্যান্য গরীব দেশেগুলোর মতো নয়
বরং এটি জাপান-চীনের সাথে এশিয়ার অন্যতম উন্নত দেশ। এখানকার গল্পগুলোর মধ্যে ‘গল্প’রাও অনেক সময় চরিত্র হয়ে এসেছে, যেন গল্পগুলো জীবন্ত
হয়ে উঠত তাদের আত্মার মধ্যে। এই কোরিয়ারই একটি লোককাহিনী শুনবো আজ।
সেকালে কোরিয়ার খুব ধনী এক ব্যক্তি ছিল। তার ছিল এক
ছেলে। ছেলেটি রূপকথা, উপকথা আর পরীদের গল্প শুনতে খুব ভালবাসতো। প্রতি রাতে সে যখন
ঘুমাতে যেত, একজন চাকর তার ঘরে বসে তাকে একটি করে মজার গল্প শোনাতো। এসবের মধ্যে ভয়ানক
ড্রাগন আর বাঘেদের গল্পও ছিল। কিছু গল্প ছিল দুষ্টু পরীদের নিয়ে অথবা ভয়ানক শেয়ালদের
আত্মা সম্পর্কে। আর কিছু গল্প ছিল ভালো পরী, সুন্দরী রাজকুমারী আর বীর যোদ্ধাদের নিয়ে।
ছেলেটির ঘরের দরজায় চামড়ার একটা পুরনো থলে ঝোলানো
ছিল। থলেটার গলায় বাঁধা ছিল শক্ত ফিতে। চাকর যখন ছেলেটাকে গল্প শোনাতো, তখন প্রতিটি
গল্পের আত্মা দরজায় ঝুলিয়ে রাখা সেই চামড়ার ব্যাগের মধ্যে ঢুকে পড়ত আর সেখানেই আত্মাটিকে
থাকতে হতো। যতদিন না ছেলেটা অন্যকে কাউকো গল্পটি বলত, ততদিন পর্যন্ত গল্পটির আত্মা
সেই থলের মধ্যে থাকতে বাধ্য হতো, সেখান থেকে আর বের হতে পারতো না।
আত্মাদের দূর্ভাগ্য ছিল এই যে, ছেলেটা ছিল ভীষণ স্বার্থপর।
দিনের বেলা সে যখন অন্য ছেলেদের সাথে খেলতো, তখন তারা বলত, ‘আমরা জানি যে, তোমাদের চাকররা তোমাকে
অনেক মজার মজার গল্প বলে, তার থেকে আমাদেরকে কিছু গল্প শোনাও না ভাই।’
কিন্তু ছেলেটা কিছুতেই অন্যদেরকে গল্প বলত না। সে
সমস্ত গল্প নিজের মনের মধ্যেই জমিয়ে রাখতো। আর এদিকে প্রতিরাতে ছেলেটি চাকরের কাছ থেকে
নতুন নতুন গল্প শুনতো কিন্তু কাউকো সে গল্প না বলার কারনে বছরের পর বছর ধরে দরজায় ঝোলানো
পুরনো চামড়ার ব্যাগে গল্পগুলোর আত্মাদের ভিড় বাড়তে থাকলো। গল্পের ভালো এবং খারাপ আত্মারা
থলের মধ্যে এমনভাবে গাদাগাদি করে ছিল যে তাদের নড়াচড়া করার জায়গা পর্যন্ত ছিল না। ফলে
তারা খুব রাগান্বিত, অসন্তুষ্ট আর বিরক্ত হয়ে পড়ল।
এভাবে দিন যেতে যেতে ছেলেটি একদিন যুবকে পরিণত হলো।
গল্প বলা চাকরদের মধ্যে থেকে মাত্র একজন তার সাথে থেকে গিয়েছিল। সে ছিল একজন বিশ্বস্থ
পুরনো চাকর, যে দেশের সমস্ত পুরনো লোককথা আর গল্পগুলো জানতো। ছেলেটা যদিও এখন বেশ বয়স্ক,
তবুও সে গল্প শুনতে ভালোবাসতো আর তার চাকরটা তাকে প্রতি রাতে একটা করে গল্প শোনাতো।
আর প্রতি রাতে নতুন একটা গল্পের আত্মাকে শোবার ঘরের দরজায় ঝোলানো থলেতে চাপাচাপি করে
ঢুকতে হতো।
পৃষ্ঠা ১/ ৫
‘এখানে একদম জায়গা নেই। আমরা একেবারে আলুভর্তা হয়ে গেছি,’ ভেতর থেকে আত্মাগুলো চিৎকার করে
উঠত। কিন্তু তাতে কোন লাভই হতো না। নতুন আসা গল্পের আত্মাটিকে থলেতে ঢুকতেই হতো।
এদিকে যুবকটির বন্ধুরা তাকে তার জানা গল্প থেকে তাদের
গল্প বলার জন্য বারবার অনুরোধ করল কিন্তু স্বার্থপর যুবকটি বরাবরই গল্প বলতে অস্বীকার
করত। যুবকটি আস্তে আস্তে আরো বড় হলো। ইতিমধ্যে তার বাবা-মা মারা গিয়েছিল। কিন্তু তার
একজন দয়ালু চাচা ছিল। সেই তার দেখাশুনা করতো। যেহেতু যুবকটি ধনী ছিল তাই তার জন্য একটি
ভালো বিয়ের ব্যবস্থা করতে তার চাচাকে কোন বেগই পেতে হলো না। বিয়ের সব আয়োজন সম্পূর্ণ
হলো এবং একদিন বরযাত্রীসহ কনের বাড়ীর উদ্দেশ্যে বরযাত্রার দিনটিও ঘনিয়ে এলো। রওনা হওয়ার
আগে যে চাকরটা তাকে গল্প শোনাতো, বিশেষ একটা কাজে সে যুবকটির শোবার ঘরে গেল। ঘরে ঢোকার
পরেই সে ক্রুদ্ধ কন্ঠস্বর শুনতে পেয়ে হতচকিত হয়ে পড়ল, কারণ সে জানতো যে ঘরে কেউ নেই।
চোর এলো কি? সে চুপি চুপি এগিয়ে গেল ব্যাপারটা ভালো করে আঁচ করার জন্য।
‘আজকে ওর বিয়ে হচ্ছে। তোমরা জানো,’ একটি কন্ঠস্বর বলে উঠল। ‘হ্যাঁ, ও আজকে খুব জমকালো পোশাক
পরে বিরাট এক খানাপিনার আসরে যাচ্ছে কিন্তু আমাদের থলেতেই গাদাগাদি করে পড়ে থাকতে হচ্ছে,
ব্যাপারটা ভালো হলো না। আমরা এখানে বহুদিন ধরে পড়ে আছি।’ এই বলে একটি কন্ঠস্বর চিৎকার করে উঠল। যে কন্ঠটি
চিৎকার করে উঠল সেটা যে একটা শেয়ালের আত্মা, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
‘চলো আমরা স্বার্থপর যুবকটিকে হত্যা করি। ও মরে গেলেই আমরা এই থলে থেকে
মুক্তি পাব।’ কথাটি শুনে সব আত্মারা চিৎকার
করে উঠল, ‘কী সুন্দর বুদ্ধি!, হ্যাঁ, আমরা তাই করব।’ অনেকগুলো অসন্তুষ্ট আত্মা একমত হয়ে বলে উঠল।
পুরাতন চাকরটি খুব ধীরে ধীরে দরজা ঠেলে শোবার ঘরের
ভেতরে ঢুকল আর পুরাতন চামড়ার থলের ভেতরে উঁকি দিল। সে অবাক হয়ে দেখল যে থলেটা ফুলে
ফুলে উঠছে আর দোল খাচ্ছে। কারণ ভেতরে আত্মারা তাদের মুষ্টিবদ্ধ হাত নাড়ছিল আর রেগে
কথা বলছিল। ভালো পরী, সুন্দরী রাজকুমারী আর বীর যোদ্ধাদের গল্পের আত্মাগুলো চুপচাপ
ছিল। তারা অন্যদের ভয় পাচ্ছিল।
সৌভাগ্যক্রমে পুরাতন চাকরটি যুবকটিকে ভালোবাসতো; তাই
সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আত্মাদের পরিকল্পনা শুনলো।
‘বরের বাড়ি থেকে কনের বাড়ি অনেক দূরের রাস্তা’, বাঘের গল্পের আত্মা বলল, ‘যুবকটি গরমে পিপাসার্ত হয়ে পড়বে।
পানির আত্মাটি আমার বন্ধু। আমি তাকে বলবো রাস্তার ধারের কোনো কুয়োর মধ্যে লুকিয়ে থাকতে
আর পানির উপরে কুমড়োর তৈরি একটা সুন্দর পাত্র ভাসিয়ে রাখতে। যুবকটি পানি পান করলে পানির
আত্মা তার গলায় আটকে যাবে এবং তাকে মেরে ফেলবে।’
পৃষ্ঠা ২/ ৫
‘খুব সুন্দর বুদ্ধি।’ একটা শেয়ালের আত্মা হেসে উঠল।
‘কিন্তু যদি কোনো কারণে এই ফাঁদ
ব্যর্থ হয়, তাহলে আমি আমার বন্ধু স্ট্রবেরির পরীকে বলব রাস্তার ধারের কোনো মাঠে বসে
থাকতে। যদি যুবকটি কোনো কারণে পানি পান না করে, তাহলে সে নিশ্চয়ই পাকা আর মিষ্টি ফল
খেতে চাইবে। তখন আমার বন্ধু স্ট্রবেরি সঙ্গে সঙ্গে ওর গলায় ঝাপিয়ে পড়বে আর ওকে দম বন্ধ
করে মেরে ফেলবে।’
আত্মাদের হাততালিতে চামড়ার থলেটা জোরে দুলে উঠল। এরপর
ভেসে এলো বাদুড় আত্মার নাকী চিৎকার, ‘বিয়ের নিয়মকানুন আমি জানি।’ সে বলল, ‘বর যখন কনের বাড়িতে উপস্থিত হয়,
তখন কনের বাড়ির উঠোনে এক বস্তা তুষ রেখে দেয়া হয়। যেন বর তার ঘোড়া থেকে আরামে নামতে
পারে। আমি বস্তার মধ্যে একটা আগুনের মতো গরম পেরেক রেখে দেয়ার ব্যবস্থা করবো। তাহলে
যুবকটি পড়ে যাবে।’
‘খুব ভালো, খুব ভালো’, সব আত্মারা বুদ্ধিটা সমর্থন করল।
তাই শুনে সাপের আত্মা হিসহিস করে বলে উঠল, ‘আমার চাচাতো ভাইকে বলবো কনের মাদুরের
নিচে লুকিয়ে থাকতে। যদি সব পরিকল্পনা ব্যর্থ হয় এবং বর-কনের সাথে দেখা হয়, আমার ভাই
তখন মাদুরের তল থেকে বেরিয়ে যুবককে কামড়াবে এবং এভাবেই আমাদের সমস্যার সমাধান হবে।’
‘ভালো, খুব ভালো’, গল্পের আত্মারা হেসে উঠল। এরপর
নেমে এলো নিরবতা আর থলেটাও স্থির হয়ে গেল। পুরানো চাকরটা ভীষণ ভয় পেল এসব শুনে। সে
তার মনিবকে ভালবাসতো। তার কোন ক্ষতি হোক সেটা সে চাইতো না। কিন্তু সে এও জানতো যে,
সে যদি সবাইকে শোবার ঘরের দরজায় ঝোলানো চামড়ার থলের ভেতরের গল্পের আত্মাদের কথা বলে,
তাহলে কেউ তাকে বিশ্বাস করবে না এবং ভাববে তার মাথার স্ক্রু ঢিলে হয়ে গেছে।
‘আমার মনিবকে বুদ্ধি করে বাঁচাতে হবে’, সে ভাবল। সে যুবকের চাচার কাছে গেল আর যুবকের ঘোড়ায় চেপে কনের বাড়ি যাওয়ার
অনুমতি চাইলো। শুনে চাচা উত্তর দিলেন, ‘কিছুতেই না।’
‘তুমি বুড়ো হয়ে গেছো আর এই ভ্রমণ তোমার জন্য খুবই দীর্ঘ হয়ে যাবে।’
‘দয়া করুন, দয়া করুন’, চাকরটা বলল। ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে আমার মনিবের দেখাশোনা
করছি, আমি তাকে বিয়ের আসরে নিয়ে যাব। তারপর শান্তিতে অবসর নেব।’
‘ঠিক আছে’, চাচা নিশ্বাস ছেড়ে বললেন। ‘তুমি ঘোড়া চালিয়ে নিয়ে যাও।’
অবশেষে বরযাত্রীদের দল রওনা হলো। বুড়ো চাকরটা তার
যুবক মনিবের ঘোড়ার লাগাম ধরে রওনা হলো। ঘোড়ার জিন ছিল খুব সুন্দর আর ঝালর দেয়া। বরের
পোশাক ছিল জাঁকজমকপূর্ণ। তার পাশে পাশে চাকরটা পায়ে হেটে যাচ্ছিল। যাত্রী দলের সবশেষে
যুবকের চাচার ঘোড়াটা ছিল। এ ঘোড়াটিও খুব সুন্দর। অন্য আরেকজন চাকর সেটা টেনে নিয়ে যাচ্ছিল।
দিনটা ছিল রোদঝলমলে। কিছুদূর যাওয়ার পরে বর পিপাসার্ত হয়ে পড়ল। ঠিক সেই সময় সে দেখতে
পেল একটা ঠান্ডা পানির কুয়ো, যার ভেতর একটা সুন্দর পানপত্র ভেসে আছে।
পৃষ্ঠা ৩/ ৫
‘আমাকে এক পাত্র পানি এনে দাও’, সে চাকরকে হুকুম করল। বৃদ্ধ ঘোড়ার
লাগাম ধরে খুব তাড়াতাড়ি সামনে এগিয়ে গেল। ‘প্রিয় মনিব আমার, আপনি পানি পান
করার জন্য কিছুতেই থামবেন না। এই রোদের মধ্যে পানি পান করলে আপনার ঘাম হবে এবং তার
ফলে আপনার পোশাক নষ্ট হয়ে যাবে।’
মনিবের আদেশ এভাবে অমান্য করায় অন্য চাকররা খুবই অবাক
হলো। কিন্তু বরযাত্রা এগিয়েই চলল। এরপর তারা একটা স্ট্রবেরির খেতের পাশে চলে এলো।
‘আমি এখনো পিপাসার্ত আর ক্ষুধাও লেগেছে।’ বর বলল, ‘আমাকে কয়েকটা স্ট্রবেরি এনে দাও।’
‘আমার মনে হয় আপনি আসলে স্ট্রবেরি চাচ্ছেন না’, বৃদ্ধ চাকরটি আরো দ্রুত এগিয়ে গেল। ‘আপনি আপনার পোশাকে রস ফেলে নষ্ট
করে ফেলবেন। আপনার প্রিয় মা আপনাকে ভালো পোশাক পরা অবস্থায় কখনো খেতে দিতেন না, এটা
তো জানেন।’
অন্যান্য চাকর তাদের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিল না।
তারা চাচার কাছে খবর পাঠালো এই বলে যে পাগল বুড়ো তার মনিবের আদেশ মানতে অস্বীকার করছে।
খবরটা শুনে চাচা দ্রুতবেগে সামনে চলে এলেন।
‘কি ঘটছে এসব?’ তিনি জানতে চাইলেন। ‘একথা কি সত্যি যে এই চাকর পানি
বা স্ট্রবেরি আনতে অস্বীকার করেছে?
‘হ্যাঁ হ্যাঁ’, বর জানালো। ‘কিন্তু কোনো ঝামেলা
করার দরকার নেই। ও আমার বিশ্বস্ত পুরাতন চাকর।’ ‘ঠিক আছে, এখন কোনো ঝামেলা নয়,’ চাচা
বললেন। ‘তবে বিয়ের পর একে ভালো একটা পিটুনি
দিতে হবে।’
এভাবেই বৃদ্ধ চাকরটা তার মনিবকে গল্পের আত্মাদের পাতানো
প্রথম দুটি ফাঁদ থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে গেল এবং একসময় তারা কনের বাড়িতে পৌঁছে গেল। সেখানে
খুব বড় খানাপিনার আয়োজন করা হয়েছিল এবং পাত্রপক্ষের জন্য একটা বড় তাবু টানানো হয়েছিল।
উঠোনে পাত্রের ঘোড়ার কাছে এক বস্তা ধানের তুষ রাখা হয়েছিল। যুবকটি যখন ঘোড়া থেকে নামতে
গেল, বুড়ো চাকর তুষের থলে টান মেরে সরিয়ে ফেলল।
‘তুমি কি সত্যি পাগল হয়ে গেলে বন্ধু?’ যুবকটি পা হড়কে পড়ে যেতে যেতে
জিজ্ঞেস করলো।
চাচা আবারো রেগে গেলেন এবং চাকরটাকে দুদফা পিটুনি
দেবেন বলে ঠিক করলেন। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হলো। চাকরটা চুপ করেই থাকল। সে তার মনিবকে
তৃতীয় বিপদ থেকে বাঁচিয়েছে।
উৎসব শুরু হলো। একটা মোরগ এবং একটা মুরগিকে সুন্দর
পোশাক পরিয়ে মদের পাত্রের সাথে বেঁধে তাদেরকে সুন্দর কারুকাজ করা একটি টেবিলের ওপরে
রেখে দেয়া হয়েছিল। টেবিলের পাশে ড্রাগনের ছবি আঁকা পর্দা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছিল সৌভাগ্যের
প্রতীক হিসাবে। বর টেবিলের পূর্ব পাশে দাঁড়িয়েছিল। কনে সুন্দর কারুকাজ করা পোশাক পরে
দুজন সখীকে নিয়ে টেবিলের পশ্চিম দিকে এসে দাঁড়ালো। তারা পরষ্পরকে মাথা নুইয়ে অভিবাদন
জানালো। উৎসব চলতেই থাকলো। সবাই মোরগ মুরগি বাঁধা পাত্র থেকে চুমুক দিয়ে মদ পান করল
এবং এভাবেই বিয়ের যাবতীয় নিয়মকানুন পালন করা হয়ে গেল।
পৃষ্ঠা ৪/ ৫
বিরাট খানা পিনা, অনেক কথাবার্তা এবং বহু আত্মীয়স্বজনের
আসা যাওয়া চলতে থাকলো। অবশেষে বর ও কনের বিশ্রাম করার সময় হলো। এখানে সাপের আত্মারা
যুবককে হত্যা করার শেষ চেষ্টা চালাবে।
বৃদ্ধ চাকর বর-কনে ও অন্যদের অনুসরণ করল এবং সবাইকে
পেছনে ঠেলে দিয়ে হতবাক করে নিজে সামনে চলে গেল। সে কোমরে লুকানো একটা তরবারি বের করল,
এরপর মেঝের কার্পেটটি তুলল এবং তার নিচে লুকানো সাপকে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলল।
এরকম ঝামেলা আর বিরক্তিকর উত্তেজনা এর আগে কারো সংসারে
কখনো হয়নি। যখন সাপটি মরে গেল চাকরটি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল। এর মধ্য দিয়েই তার মনিবকে
মেরে ফেলার সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেল। তারপর সে চামড়ার ব্যাগের গল্পের আত্মাদের কথা
সবাইকে জানালো। যুবকটি সব কথা বিশ্বাস করল এবং গল্পের আত্মাদের স্বার্থপরের মতো ব্যাগের
মধ্যে বন্দি করে রাখার জন্য দুঃখিত হয়ে বললো, ‘আজ থেকে আমি সবাইকে সেইসব গল্প
শোনাবো, এতদিন যা আমি একা একা উপভোগ করেছি।’
যখন যুবকের ছেলে আর মেয়ে হলো, প্রতিদিন সন্ধ্যায় সে তাদের নিয়ে বসতো আর গল্প শোনাতো। ছেলে মেয়েরা ভাবত তাদের বাবা পৃথিবীর সব থেকে সেরা বাবা। এভাবেই এক এক করে গল্পের আত্মারা যেন মুক্তি পেল।
বুড়ো কাজের লোকটিকে অবশ্য কোনো শাস্তি দেয়া হলো না, বরং উল্টো ঘটনা ঘটলো। তার জন্য উন্নতমানের খাবার ও আরামদায়ক জীবনযাপনের ব্যবস্থা করা হলো।
***** সমাপ্ত *****
পূর্বের পোষ্ট: হাতির চেয়ে চড়ুই কেন শক্তিশালী (আফ্রিকার লোককাহিনী) || লোককাহিনী - ১২
পরের পোষ্ট:
‘লোককাহিনী’ ক্যাটাগরির জনপ্রিয় গল্পসমূহ
◉ একটা ব্যাঙের গল্প (তিব্বতের লোককাহিনী)
◉ মানসিক আঘাতের বেদনা (তাজাকিস্তানের লোককাহিনী)
◉ হলদে ঝুঁটির মোরগটি (রাশিয়ার লোককাহিনী)
◉ এক যে ছিল শেয়ালনী (ইউক্রেনের লোককাহিনী)
◉ ইয়ারার গল্প (ব্রাজিলের লোককাহিনী)