মানুষের চুমু খাওয়ার কারণগুলো কি কি? || জানা-অজানা ২

সারমর্ম: মানুষের চুমু খাওয়ার হাতেখড়ি যেখান থেকে এবং যে যে শারীরবৃত্তীয় বিষয়গুলো মানুষের চুমু খাওয়ার পেছনে কাজ করে। মোট-২ পৃষ্ঠা


আপনি কি কখনো চুমু খেয়েছেন বা অন্য কাউকো খেতে দেখেছেন? আমরা সিনেমার অন্তরঙ্গ দৃশ্যে যেমন দেখি কাউকে প্রথম চুমু খাওয়া বেশ অর্থবহ একটি ব্যাপার। ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে একজন আরেকজনের প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করে। কিন্তু এটিই কি চুমু খাওয়ার একমাত্র কারণ!

মানুষ কেন চুমু খায়? কিভাবে মানুষের মাঝে এই চুমু খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়েছিল এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ, চলুন জেনে নেই।

এমন একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে মানুষ জন্মের পর থেকে মাতৃদুগ্ধ পান করে। সেখান থেকে তার চুমুর প্রতি একধরণের ইতিবাচক অভিযোজন শুরু হয়। এছাড়া অনেক সময় শক্ত খাবারকে চিবিয়ে নরম করে মা তার শিশুর মুখে মুখ লাগিয়ে খাইয়ে দেয়। এটা থেকেও চুমু খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হতে পারে।

দ্বিতীয় আরেকটি ধারণা প্রচলিত আছে, ঠোঁট আমাদের শরীরের খুবই স্পর্শকাতর একটি অংশ এবং আমাদের শরীরের খুব অল্প সংঙ্খক অংশের মধ্যে এটি একটি যা আমরা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখি না।

এনথ্রোপোলজির (নৃবিজ্ঞান) উইলিয়াম জেংকক বলেছেন, আপনার যত বেশি কাপড় পড়তে হবে তত বেশি আপনি চুমু খেতে অভ্যস্থ হবেন। আর যত কম কাপড় পড়বেন তত চুমু খাওয়ার প্রবণতা কমতে থাকবে। কারণ কম কাপড় পড়লে আপনার সঙ্গী শরীরের অন্যান্য অংশের স্পর্শ ও ঘ্রাণ পায়। কিন্তু বেশি কাপড় পড়লে তখন স্পর্শ ও ঘ্রাণ পাবার জন্য শুধুমাত্র মুখমন্ডল খোলা থাকে।

চুমুর ক্ষেত্রেও অভিযোজনের কিছু সম্পর্ক থাকতে পারে। যেমন একজন আরেকজনের কাছাকাছি এলে আমরা একে অন্যের ঘ্রাণ পাই এবং একে অন্যের প্রতি আগ্রহ পাচ্ছি কিনা তা বুঝতে পারি। সম্ভবত একারণে ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে উষ্ণ চুমু খাওয়া মানুষের স্বাভাবিক বৈশিষ্টের মধ্যে পরে না।

বিশ্বের ১৬৮টি দেশের সংস্কৃতি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এসব সংস্কৃতির মাত্র ৪৬ শতাংশ লোক ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে উষ্ণ চুমু খায়। এনথ্রোপোলজির অধ্যাপক উইলিয়াম জেংকক বলছেন, যে সব সংস্কৃতিতে চুমু খাওয়ার প্রবণতা কম সেখানে তারা কামনা মেটানোর জন্য চুমু ছাড়া অন্যান্য উপায় ব্যবহার করে। তবে এটা বেশ মজার, যেসব সংস্কৃতিতে সামাজিক জটিলতা যত বেশি সেখানে চুমু খাওয়ার প্রবণতাও বেশি।

মানুষের চুমু খাওয়ার প্রবণতার লিখিত প্রমাণ পাওয়া যায় তিন হাজার পাঁচশত বছর আগে। হিন্দু বেদে সংস্কৃত ভাষায় চুমু খাওয়ার কথা লেখা আছে। The Science of Kissing এর লেখক শেরিল কিরসেনবাউম বলেন চার্লস ডারউইনও চুমুর অভিযোজন নিয়ে লিখে গেছেন। মূলত এসব ব্যাক্ষা থেকে একটা জিনিস বোঝা যায় চুমু একটা বিশ্বাসের প্রতীক। একজন আরেকজনকে বিশ্বাস করতে না পারলে এতটা কাছে আসতে দিত না।


পৃষ্ঠা ১



তবে ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে গভীর চুমু খায় একমাত্র মানুষ। মানুষ ছাড়াও প্রাণীজগতের আরও কিছু প্রাণী চুমু খায় তবে এই সংখ্যা খুব বেশি নয়।

কেন প্রাণীজগতের খুব বেশি প্রাণী চুমু খায় না?

বিবিসি আর্থ এর মেলিসা হোগেনবুম জানান ঘ্রাণ একটা প্রাণীর অনেক দরকারি তথ্য বলে দিতে পারে যেমন তার মেজাজ কেমন, রোগাক্রান্ত কিনা কিংবা ক্ষতিকর কিনা। প্রাণীজগতে বেশিরভাগ প্রাণী ঘ্রাণশক্তির মাধ্যমে এসব বুঝতে পারে যা মানুষ সহজে পারে না। তাই মানুষের একে অন্যের কাছাকাছি আসতে হয়। যদিও বিভিন্ন সময়ে মানুষকে চুমু খাওয়া থেকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে বিশেষ করে মহামারির সময়। আবার আদিকালে অনেক রাজা বাদশাহও আদেশ জারি করেছেন সাধারণ মানুষ চুমু খেতে পারবে না। কারণ এটা শুধুমাত্র উচ্চবর্ণের লোকদেরই অধিকার।

          

***** সমাপ্ত ***** 

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post