সারমর্ম: রহস্যময় এক ব্যাঙ যে কিনা ব্যাঙ হয়ে জন্ম নিয়েও উচ্চবংশের এক সুন্দরী মেয়েকে বিবাহ করেছিল, বদলে দিতে চেয়েছিল পুরো পৃথিবীকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কি হয়েছিল তার ভাগ্যে জানতে পড়ুন পুরো গল্পটি। মোট-১২ পৃষ্ঠা
ভারত এবং চীনের মাঝে রয়েছে তিব্বত। খুব প্রাচীন একটি
জাতি কিন্তু স্বাধীন নয়। চীনের অধীনে আছে। এটা নিয়ে তিব্বতীদের অনেক দুঃখ। তাদের অনেক
দুঃখের কথা ছড়িয়ে আছে তাদের মায়াভরা লোককাহিনীগুলোতেও।
তিব্বতের পাহাড় এলাকায় বাস করতো গরিব এক পরিবার। তাদের
কাজ ছিল বার্লি এবং আলু চাষ করা। খুব কষ্টের জীবন ছিল তাদের। তাদের কোনো সন্তান ছিল
না। তারা নিজেদের মাঝে বলাবলি করত, 'যদি আমাদের একটা সন্তান থাকত তবে দিনগুলো কতই না
মধুর হতো'।
তাই তারা দুজনেই একাগ্রচিত্তে পাহাড় এবং নদীর দেবতার
নিকট সন্তানের জন্য প্রার্থনা জানাল। অবশেষে তাদের একটি সন্তান হলো। কিন্তু সে সন্তান
মানবসন্তান হিসেবে ভূমিষ্ঠ হয়নি, জন্ম নেয়া সন্তানটি মূলত ছিল বিরাট এবং স্ফীত দু’টি চোখবিশিষ্ট একটি ব্যাঙ। বুড়ো তখন বলল, ’কি আশ্চর্য! এটা তো মানবশিশু নয়
বরং দুটি স্ফীত চোখবিশিষ্ট একটা ব্যাঙ মাত্র। চল এটাকে দূরে কোথাও ফেলে দেই।’
এরকম কিছু করতে তার স্ত্রীর সম্মতি ছিল না। জবাবে
তার স্ত্রী বলল, ‘দেবতা হয়তো আমাদের উপর সদয় হননি, তাই মানবশিষুর বদলে
উনি একটি ব্যাঙ দান করেছেন। কিন্তু যাই হোক সে তো আমাদেরই সন্তান, তাকে এভাবে দূরে
ফেলে দেয়া আমাদের উচিৎ নয়। ব্যাঙ সাধারণত কর্দমাক্ত জলাশয়ে বাস করে। তাই আমাদের ঘরের
পিছনের জলাশয়টাতে ওকে ছেড়ে দাও। ওখানেই সে বাস করুক।’
বুড়ো তখন ব্যাঙটাকে হাতে তুলে নিল। কিন্তু যখনই তাকে
নিয়ে যেতে উদ্যত হলো, তখনই ব্যাঙটি কথা বলে উঠল, ‘মা-বাবা আমার, দয়া করে আমাকে জলাশয়ে
ফেলে দিও না, আমি মানুষের ঘরে জন্ম নিয়েছি, আমাকে মানুষের মাঝেই বাঁচতে দাও। বড় হয়ে
আমি আমার জন্মভূমি এবং গরিবদের জীবনকে পরিবর্তন করে দিবো।’
বুড়ো বিস্ময়ের সুরে চিৎকার করে উঠল, ’ওগো শুনছো? কী আশ্চর্য ঘটনা! এ
তো মানুষের মতই কথা বলে!’
জবাবে স্ত্রী বলল, ’সে যা বলেছে তা ঠিক। আমাদের মত
গরিব লোকদের ভাগ্যের পরিবর্তন সাধনের জন্য এটাই সবচাইতে উপযুক্ত সুযোগ। এরকম করে আর
তো চলে না। যখন সে কথা বলতে পারে তবে সে নিশ্চয়ই কোন সাধারণ ব্যাঙ নয়। সে বরং আমাদের
কাছেই থাকুক।’
প্রকৃত মানবশিশুর মতই ব্যাঙটি তাদের সাথে বাস করতে
লাগলো। এভাবে তিন তিনটি বছর পেরিয়ে গেল। বুড়ো বুড়ি প্রত্যহ অত্যন্ত কঠোর অধ্যবসায়ের
সাথে কাজ করে গেলেও ব্যাঙটিকে কখনই চোখের আড়াল হতে দিতো না।
এমতাবস্থায় ব্যাঙটি একদিন তার বুড়ি মাকে বলল- ‘মা, মোটা ময়দা দিয়ে একটা ভাপা রুটি
তৈরি করে একটা থালার মাঝে রেখে দাও। আগামীকাল আমার এটির প্রয়োজন হবে। উপত্যকার প্রবেশপথে
অবস্থিত পাথরের মিনারওয়ালা দুর্গে খাজনাওয়ালা যোংবেন বাস করেন, আমি আগামীকাল তারই কাছে
যাচ্ছি। উদ্দেশ্য, তারই এক মেয়ের পাণিপ্রার্থী হওয়া। তার তিনটি সুন্দরী মেয়ে আছে। এর
মাঝে দয়ালু এবং উপযুক্তটিকেই আমি বিয়ে করবো এবং তোমার দৈনন্দিন কাজে সহায়তা করার জন্য
ঘরে নিয়ে আসবো।’
পৃষ্ঠা ১
বুড়ি জবাবে বলল, ‘প্রিয় বৎস, ওরকম করে ঠাট্টা করতে
নেই। কেউ কি তার মেয়েকে ক্ষুদ্রাকৃতির ও কুৎসিত জীবের কাছে বিয়ে দিতে চাইবে। তুমি একটা
সাধারণ ব্যাঙ মাত্র, যাকে কোন চিন্তা ব্যতিরেখেই পদদলিত করা যায়।’
জবাবে ব্যাঙ বলে উঠল, ‘তুমি আমার জন্য ভাপা রুটি বানিয়ে
দাও, উনি নিশ্চয়ই মত দেবেন।’
অবশেষে বুড়ির সম্মতিসূচক সায় মিলল। সে বলল, ‘ঠিক আছে। তোমার ইচ্ছামতো একটি রুটি
তোমাকে বানিয়ে দেব। তবে বাছা, মনে কর, দানব দেখলে মানুষ যেমনটি করে, ঠিক তেমনিভাবে
যদি তোমাকে দেখামাত্র তার বাসগৃহ থেকে তোমার মাথার উপর ছাই নিক্ষেপ করা হয়, তখন কি
হবে?
ব্যাঙ বলল, ‘না মা, ওরকম করতে তারা সাহস পাবে
না।’
বুড়ি পরদিন সকালে মোটা ময়দা দিয়ে একটি বড় আকৃতির রুটি
তৈরি করে এটি থালার মাঝে রেখে দিল।
ব্যাঙটি তার পিঠের উপর থালাটি ঝুলিয়ে নিল এবং উপত্যকার
প্রবেশ পথে অবস্থিত যোংবেনের মিনারওয়ালা দূর্গের উদ্দেশ্যে লাফিয়ে লাফিয়ে পথচলা শুরু
করলো।
গেটের সন্নিকটে উপস্থিত হয়ে ব্যাঙ যোংবেনকে লক্ষ্য
করে উচ্চঃস্বরে ডাকতে শুরু করলো এবং বললো দরজাটা খুলে দিতে।
বাহিরে কেউ ডাকছে শুনে যোংবেন তার চাকরকে পাঠালেন,
কে ডাকছে তা দেখে আসতে।
এক বিস্ময়কর চাহনি নিয়ে চাকর ফিরে গেল। ‘কি আশ্চর্য প্রভু! গেটের সামনে
থেকে যে ডাকছে সে এক ক্ষুদ্র ব্যাঙ ছাড়া আর কিছুই না।’
কি করতে হবে, এটা যেন ভালভাবেই জানে, এমনি এক ভাব
নিয়ে যোংবেনের নায়েব বলল, ‘হুজুর, এটা নিশ্চয়ই একটা দানব হবে। ওটার উপর কিছু
ছাই নিক্ষেপ করিগে।’
যোংবেন অসম্মতি জানালেন। ‘না, একটু অপেক্ষা করা যাক। এটা
দানব নাও হতে পারে।’ তিনি বলে চললেন, ‘ব্যাঙ সাধারণত পানিতে বাস করে।
এমনও হতে পারে, এই ব্যাঙ হয়তোবা ড্রাগন রাজার প্রাসাদ থেকে কোনো বানী নিয়ে এসেছে। দেবতার
উপর যেমন করে দুধ ছিটানো হয়, ওর বেলায়ও তেমনটি করো। অতঃপর আমি নিজে তার সঙ্গে দেখা
করব।’
তার আদেশ প্রতিপালিত হলো এবং দেবতার মতোই ব্যাঙকে
অভ্যর্থনা জানানো হল। চাকরেরা ব্যাঙের উপর দুধ ছিটাল এবং কিছু পরিমাণ দুধ শুন্যে ছিটানো
হলো। অতঃপর যোংবেন নিজে গেট পর্যন্ত গেলেন এবং ব্যাঙকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বাপু, তুমি ড্রাগন রাজার প্রাসাদ
থেকে এসেছ বুঝি? তুমি কি চাও?’
ব্যাঙ জবাব দিল, ‘আমি ড্রাগনরাজার প্রতিনিধি নই।
নিজের ইচ্ছেমত আমি এখানে এসেছি। জানি, আপনার তিনটি মেয়েই বিবাহযোগ্য। আমি একজন প্রার্থী,
এদেরই একজনকে আমি স্ত্রী হিসেবে পেতে চাই। দয়া করে আপনি সম্মতি দিন।’
পৃষ্ঠা ২
একটা ভীতি যোংবেন এবং তার চাকরদেরকে পেয়ে বসল। যোংবেন
বললেন, ‘কি যা-তা বকছ। তুমি খুব ক্ষুদ্র
এবং কুৎসিত! কি হিসাবে তুমি নিজেকে আমার মেয়ের যোগ্য বলে মনে কর? অনেক প্রতিষ্ঠিত যোংবেন
আমার মেয়ের পাণি গ্রহণ করতে চেয়েছে এবং আমি প্রত্যাখ্যান করেছি। এসবই কি আমার মেয়েকে
একটা কদর্য ব্যাঙের নিকট বিয়ে দেয়ার জন্য।’
ব্যাঙ জবাব দিল, ‘ও বুঝেছি, আপনি তাহলে সম্মত নন।
ঠিক আছে, আপনি সম্মতি না দিলে আমি হাসতে শুরু করব।’
ব্যাঙের একথা শুনে যোংবেন অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে পড়লেন
এবং বললেন, ‘তুমি দেখছি উন্মাদ হয়ে গেছ। তুমি যদি হাসতে চাও, তবে
চালিয়ে যাও।’
এরপর ব্যাঙ হাসতে শুরু করল। রাতে পুকুরভর্তি ব্যাঙের
চিৎকার অপেক্ষা তার হাসির শব্দ ১০০ গুণেরও অধিক তীব্র ছিল। তার এই বিকট হাসিতে মাটি
কেঁপে উঠল। যোংবেনের দুর্গের মিনারগুলো এমনভাবে নড়তে শুরু করলো, মনে হল যেন ওগুলো এখুনি
ধসে পড়বে। দেয়ালে ফাটল দেখা দিল। বালি ও প্রস্তরখন্ডসমূহ শূন্যে নৃত্য করতে লাগল এবং
আকাশ ও সূর্য অন্ধকারে নিমজ্জিত হলো। যোংবেনের পরিবার ও চাকরেরা বিশাল দুর্গের এপ্রান্ত-ওপ্রান্ত
ছুটাছুটি করতে শুরু করল। অবশ্য কি হচ্ছে, কেন হচ্ছে আর কেই বা এসব করছে, এসব কিছুই
তাদের বোধগম্য হলো না। কেউ কেউ আবার নিজেদের মাথার উপর আসবাবপত্রের ভাঙা টুকরা হাতে
বহন করছিল, যেন এতে করে তারা দুর্যোগকে মোকাবেলা করতে পারে।
হতাশাগ্রস্থ যোংবেন জানালা দিয়ে মাথা বের করে ব্যাঙকে
অনুনয়ের সুরে বললেন, ‘দয়া করে আর হেসো না, অন্যথায় আমরা সবাই মারা পড়ব।
আমি আমার জ্যেষ্ঠ কন্যাকে বলব তোমার সঙ্গে যেতে এবং তোমাকে স্বামীরূপে গ্রহণ করতে।’
ব্যাঙ তার হাসি থামাল। আস্তে আস্তে মাটির কম্পন থেমে
গেল এবং বাসগৃহ পুনর্বার স্থিতিশীল হলো।
একমাত্র ভীতিই যোংবেনকে বাধ্য করেছে ব্যাঙের নিকট
তার মেয়েকে সমর্পণ করতে। তিনি ২টা ঘোড়া নিয়ে আসতে বললেন। একটিতে তার মেয়ে চড়বে এবং
অপরটিতে বিয়ের উপঢৌকন যাবে।
একটা ব্যাঙকে বিয়ে করতে জ্যেষ্ঠ কন্যা একান্ত অনিচ্ছুক
ছিল। ঘোড়ায় আরোহণের প্রাক্কালে ঘরের চালসংলগ্ন যাঁতার দুটি পাথর তার নজরে এলো। সবার
অলক্ষে সে যাঁতার উপরের পাথরটি কুড়িয়ে নিল এবং বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখল। পথনির্দেশরূপে
আগে আগে লাফিয়ে চলা ব্যাঙটিকে অনুসরণ করে ঘোড়ার পিঠে মেয়েটির পথচলা শুরু হলো। সারাক্ষণই
সে তার ঘোড়াটাকে দ্রুতবেগে চালানোর প্রচেষ্টায় ছিল যেন। উদ্দেশ্য ছিল ব্যাাঙটির সন্নিকটে
যাওয়া এবং ঘোড়ার খুরের আঘাতে তাকে হত্যা করা। কিন্তু ব্যাঙটি কখনো বায়ে কখনো ডানে লাফিয়ে
চলাতে তার ইচ্ছা বাস্তবায়িত হতে পারেনি। অবশেষে সে অত্যন্ত অধৈর্য্য হয়ে পরলো এবং একবার
ব্যাঙটির অত্যন্ত নিকটবর্তী হয়ে সে লুকিয়ে রাখা পাথরটি বের করে লাফিয়ে চলা ব্যাঙটিকে
লক্ষ করে নিক্ষেপ করল। উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয়েছে ভেবে সে ঘোড়াটিকে নিজগৃহ অভিমুখে ফেরালো।
পৃষ্ঠা ৩
কিছুদূর যেতে না যেতেই ব্যাঙটি তাকে উদ্দেশ্য করে
বলে উঠল, ‘থামো, কন্যা! তোমাকে আমার কিছু বলার আছে।’
মুখ ফেরাতেই সে ব্যাঙটিকে দেখতে পেল। যাঁতার পাথরের
মধ্যবর্তী স্থানে ছিদ্র থাকার বদৌলতে ব্যাঙটি মৃত্যুর হাত থেকে পরিত্রাণ পেয়েছে।
বিস্মিত অবস্থায় মেয়েটি ঘোড়াটাকে থামালো। ব্যাঙটি
তাকে বলল, ‘আমরা দুজন পরষ্পরের জন্য নই। তুমি বাড়ি চলে যেতে পার,
যেহেতু এটাই তুমি চাও। এরপর ঘোড়ার লাগাম নিজে ধরে ব্যাঙটি মেয়েটিকে বাড়ি পৌছিয়ে দিতে
গেল।’
দুর্গে পৌছে ব্যাঙটি যোংবেনকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘আমরা একজন অপরজনের জন্য উপযুক্ত
নই বলে আমি আপনার মেয়েকে ফিরিয়ে দিতে এসেছি। আপনি বরং আপনার আরেক মেয়েকে দিন, যার অদৃষ্ট
আমার অদৃষ্টের সঙ্গে বাঁধা হতে পারে।’
যোংবেন রাগান্বিত হয়ে বলে উঠলেন, ‘তুমি তো বড্ড শঠ হে! তুমি তোমার
মূল্য বুঝতে পাচ্ছ না? তুমি এক মেয়েকে ফিরিয়ে এনেছ বলেই আমার আরেক মেয়েকে তোমার নিকট
গছিয়ে দেব ভেবেছ? যোংবেন হিসাবে আমিই-বা কেন তোমাকে আমারই মেয়েদের মাঝে কাউকে পছন্দ
করতে দেবো?’ রাগে ও উত্তেজনায় তিনি কাঁপতে শুরু করলেন।
ব্যাঙ তখন বলল, ‘তাহলে আপনি রাজি নন বলে মনে হচ্ছে।
ঠিক আছে, আপনি যদি রাজি না হন তবে এবার কিন্তু আমি কাঁদতে শুরু করব।’
ব্যাঙ কাঁদলে সেটা তার হাসির মতো বিপদজনক হবে না বলে
যোংবেন ভাবলেন। তিক্ত রসিকতামিশ্রিত সুরে তিনি বলে উঠলেন, ‘তুমি কাঁদলে কেউ ভয় পাবে না। তুমি
কাঁদতে পারো।’
যেই ব্যাঙ কাঁদতে শুরু করল, অমনি তার বলাপধ্বনি গ্রীষ্মরজনীর
বৃষ্টিপাতের মতো শোনাল।
আকাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে উঠল, চতুর্দিকে বজ্রপাতের
শব্দ হতে লাগল এবং পাহাড়ের গা ঘেঁষে বন্যার ঢাল নামল। সম্পূর্ণ এলাকা প্লাবিত করে জল
দ্রুত বেড়ে চলল এবং দুর্গ ও পাথরের মিনারগুলো জলমগ্ন হলো। পরিবারবর্গসহ যোংবেন সমতল
ছাদে আরোহণ করে জড়াজড়ি করে পড়ে রইলেন।
পাচিল পর্যন্ত জল বাড়তেই থাকলো। একপ্রান্ত দিয়ে গলা
বাড়িয়ে যোংবেন ব্যাঙকে উদ্দেশ্য করে অনুনয়ের সুরে বললেন, ‘দয়া করে তোমার কান্না থামাও। অন্যথায়
আমরা সবাই মরবো। আমার দ্বিতীয় কন্যাকে তোমার কাছে সপে দেব।’ সঙ্গে সঙ্গে ব্যাঙ তার কান্না থামালো এবং জলের প্লাবন
আস্তে আস্তে হ্রাস পেল।
যোংবেন পুনরায় ২টি ঘোড়া নিয়ে আসতে নির্দেশ দিলেন।
একটি বহন করবে তার দ্বিতীয় মেয়েকে এবং অপরটি বিয়ের উপঢৌকন সামগ্রী বয়ে নিয়ে যাবে। অতঃপর
ব্যাঙের সঙ্গে চলে যাবার জন্য তিনি তার দ্বিতীয় মেয়েকে আদেশ দিলেন।
পৃষ্ঠা ৪
একটি ব্যাঙকে জীবনসঙ্গী করতে ঐ মেয়ে অনিচ্ছুক ছিল।
ঘোড়ায় আরোহনের প্রাক্কালে সে যাঁতার বাকি অর্ধেকটা পাথর সঙ্গে নিয়ে নিল এবং যথারীতি
বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখল। পথে সেও প্রথমে ঘোড়াকে দিয়ে ব্যাঙকে পায়ে পিষে মারতে চাইল,
কিন্তু তা পেরে উঠল না। এরপর সুযোগ বুঝে সে ব্যাঙের প্রতি পাথর নিক্ষেপ করলো আর ভাবলো
হয়তো ব্যাঙ পাথরের আঘাতে মরে গেছে। এরপর সে ফিরে যেতে চাইল। কিন্তু ব্যাঙ তাকে পিছন
থেকে ডেকে বলল, ‘শোন কন্যা, যেহেতু আমরা একে অপরের জন্য নই, তাই তুমি
বাড়ি ফিরে যেতে পারো। সে ঘোড়ার লাগাম ধরে ঐ মেয়েকেও বাড়ি পৌছে দিল।’
যোংবেনের কাছে উপস্থিত হয়ে এইবার সে তার সবচাইতে ছোট
মেয়েটিকে চাইল। একথা শুনে যোংবেন রাগে দিশেহারা হয়ে পড়লেন। রূদ্ধকন্ঠে তিনি বলে উঠলেন,
‘তুমি আমার জ্যেষ্ঠ মেয়েকে ফিরিয়ে
দিয়েছ, আমি তোমাকে দ্বিতীয় মেয়েটি দিলাম। তাকেও তুমি ফিরিয়ে দিলে, এইবার তুমি চাও তৃতীয়টিকে।
তুমি বড্ড জোর খাটাচ্ছ। সারা দুনিয়াতে এমন কোন যোংবেন নেই, যে তোমার এ আচরণ সহ্য করবে।
আইনশৃঙ্খলার প্রতি তোমার বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধাবোধ নেই।’ রাগে কথাগুলো তার কণ্ঠে আটকে যাচ্ছিল বলে আর কিছু
বলতে পারছিলেন না যোংবেন। তিনি ভাবলেন, তার মতো দুর্ভোগ বোধহয় আর কাউকে কোনদিন পোহাতে
হয়নি।
শান্তস্বরে ব্যাঙ বলল, ‘আপনি অযথা রাগ করছেন কেন, জনাব?
আপনার ২টি মেয়েই আমার সঙ্গে যেতে অনিচ্ছুক ছিল বলে আমি তাদের ফিরিয়ে এনেছি। কিন্তু
আপনার তৃতীয় মেয়েটি রাজি আছে। তবে কেন সে আমার সঙ্গে যাবে না?’
ঘৃণামিশ্রিত স্বরে যোংবেন জবাব দিলেন, ‘না, না, না একশবার না। কোন মেয়েই
একটি ব্যাঙকে বিয়ে করতে রাজি নয়। এই শেষবারের মতো তোমাকে তোমার নিজের পথ দেখতে বলছি।’
ব্যাঙ বলল, ‘আমার অনুরোধ অনুমোদন করার পরিবর্তে
আপনি তাহলে প্রত্যাখ্যান করছেন। তাহলে এবার কিন্তু আমি লাফাবো।’
ব্যাঙের কথা শুনে যোংবেন এবার সত্যিই ভীত হয়ে পড়লেন।
কিন্তু চরম উত্তেজনায় তিনি চিৎকার করে উঠে বললেন, ‘তোমার লাফানো দেখে ভয় পেলে আমি
আর যোংবেন থাকব না, ইচ্ছে হলে তুমি লাফাতে পার।’
ব্যাঙ লাফ দিতে শুরু করতেই মাটি দুলে উঠল এবং উত্তাল
সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো উপরে নিচে ঝাকুনি শুরু হলো। চারদিকের পাহাড়গুলো এমন ভীষণভাবে নড়ে
উঠল যে তাদের পরষ্পরের মাঝে সংঘর্ষ হওয়া শুরু হয়ে গেল। পরিশেষে পাহাড়ের পাথর বালি শূন্যে
উত্থিত হলো এবং সূর্য ঢাকা পড়ল। এমনকি যোংবেনের দুর্গের পাথর এবং মিনারগুলো এমনভাবে
নড়তে শুরু করল যে সেগুলো যে কোন মুহূর্তে ধসে পড়ার সম্ভবনা দেখা দিল।
পৃষ্ঠা ৫
শেষ পর্যন্ত যোংবেন ছাইয়ের উপর দাঁড়িয়ে তার তৃতীয়
মেয়েকে ব্যাঙের নিকট সমর্পন করার প্রতিশ্রুতি দিলেন। ব্যাঙ তার লাফানো বন্ধ করল এবং
মাটি ও পাহাড়ের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এলো। বাধ্য হয়েই যোংবেন একটি ঘোড়ায় তার তৃতীয়
মেয়েকে এবং অপর একটিতে বিয়ের উপঢৌকন সামগ্রী দিয়ে তাদের বিদায় দিলেন।
তৃতীয় মেয়েটি তার অপর ২ বোনের মতো ছিল না, সে ছিল
অনেকটা নরম স্বভাবের। ব্যাঙটিকে সে অনেক বুদ্ধিমান বলে ভেবে নিল এবং তার সঙ্গে যেতে
সে রাজি হলো।
মেয়েটিকে সঙ্গে করে বাড়ি নিয়ে আসার পরে তার মা তাদেরকে
দোরগোড়ায় অভ্যর্থনা জানাতে গিয়ে বিস্মিত হলেন এবং বললেন, ‘দেখ, আমার ক্ষুদ্র এবং কুৎসিত খোকা
কেমন সুন্দরি বউ নিয়ে ঘরে ফিরেছে।’
মেয়েটি ছিল অত্যন্ত পরিশ্রমী। সে প্রতিদিনই মায়ের
সঙ্গে ক্ষেতের কাজ করতে বেরোত। কাজেই বুড়ি মেয়েটিকে ভালবাসতো এবং মেয়েটিও তাকে শ্রদ্ধা
করত। এইবার সত্যি সত্যিই মা নিজেকে সুখী বলে ভাবল।
দেখতে দেখতে শরৎকাল চলে এলো। ঐ এলাকায় প্রতিবছর একটা
বড় ঘোড়দৌড় অনুষ্ঠানের রেওয়াজ ছিল। দূর-দূরান্ত থেকে ধনী-দরিদ্র তাদের সদ্যতোলা খাদ্যশস্য
এবং গোলাকৃতির চামড়ার তাবু নিয়ে ঐ জায়গায় জড়ো হতো। বুড়ি চাইল ব্যাঙকে নিয়ে যেতে। কিন্তু
ব্যাঙ যেতে অনিচ্ছা ব্যক্ত করল। সে বলল, ‘আমি যাব না মা। সেখানে যেতে হলে
অনেকগুলো পাহাড় পাড়ি দিতে হয় যে। আর সেটা আমার জন্য খুব কষ্টকর।’ ফলে সে বাড়িতেই রয়ে গেল এবং অন্যরা সেই জায়গার উদ্দেশ্যে
বাড়ি ত্যাগ করল।
৭ দিনব্যাপী উৎসব চলল। শেষের দিকের তিনটি দিন ঘোড়দৌড়ের
জন্য নির্ধারিত ছিল। ঘোড়দৌড়ের তৃতীয় দিন সর্বশেষ দৌড় প্রতিযোগিতা যখন আরম্ভ হতে যাচ্ছে,
তখনি সবুজ ঘোড়ায় চড়ে সবুজ পোশাকপরিহিত একজন যুবক ঘোড়দৌড়ের ময়দানে হাজির হলো। সর্বোৎকৃষ্ট
ব্রোকেড এবং সিল্কের তৈরি ছিল তার পোশাক। তার ঘোড়ার জিন সোনা, রূপা ও রুবিখচিত ছিল।
তার চেহারা ছিল সুন্দর এবং শরীর ছিল মজবুত। কাধে ঝোলানো তার বন্দুকটি ছিল রূপা ও প্রবালখচিত।
সে যখন সর্বশেষ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের অনুমতি চাইল, তখন উপস্থিত প্রত্যেকেই তাকিয়ে
দেখল তাকে। অন্য প্রতিযোগিরা যখন কদমে চলতে শুরু করে দিয়েছে সে তখন ঘোড়ার জিনটা ঠিকঠাক
করল মাত্র। কিন্তু অচিরেই সে অন্য প্রতিযোগিদের সাথে সমান তালে এগিয়ে গেল।
বিশাল ময়দানের মাঝ দিয়ে পাড়ি দিতে গিয়ে সকল প্রতিযোগীই তাদের সমস্ত মনোযোগ দৌড়ের দিকে নিবদ্ধ করল। কিন্তু নবাগত যুবক দৌড় চলাকালীন তার বন্দুকে গুলি পুরে নিল এবং মাথার উপর উড়ন্ত তিনটি ঈগলকে গুলিবিদ্ধ করল। ঘোড়ার পিঠে বসে প্রতিটি ঈগলকেই বিদ্ধ করল সে একটি মাত্র গুলিতে।
পৃষ্ঠা ৬
দর্শকদের পাশ দিয়ে ঘোড়া ছুটানোর সময়ে সে ঘোড়ার
বামপাশে ঝুকে পড়ে মাটি থেকে অত্যন্ত সুন্দর সোনালি ফুল কুড়িয়ে নিল এবং তার বামপাশে
দাঁড়ানো দর্শকের উদ্দেশ্যে ফুলগুলো ছুড়ে দিল। আবার ডানপাশে ঝুকে পড়ে কিছু ডুপালি ফুল
হাতে তুলে নিল এবং ডান পাশের দর্শকদের দিকে নিক্ষেপ করল। পরক্ষনেই আবার ঘোড়া ছুটাতে
শুরু করল। সবুজ মাঠের মাঝখান দিয়ে ঘোড়া ছুটানোর সময় ধুলায় আঘাতরত ঘোড়াটির খুরই কেবলমাত্র
দেখা যাচ্ছিল এবং মনে হচ্ছিল যে, মেঘের মাঝ দিয়ে ঘোড়াটি ছুটে চলছে। সম্মোহিতের মতো
দর্শকরা দাঁড়িয়ে থাকল। সব প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে সে-ই সর্বপ্রথম বিজয়স্তম্ভে পৌছাল।
ঘোড়দৌড়ের ময়দানে উপস্থিত বুড়োবুড়িসহ সবাই মুগ্ধ হলো।
জনতার মাঝে একটা গুঞ্জন চলতে লাগল, কোথা থেকে এসেছে সে? কীই-বা তার নাম? ঘোড়ার পিঠে
থাকা-অবস্থায় বন্দুকের গুলি ছুড়েছে, সোনালি ফুলের উদ্দেশ্যে বাদিকে এবং রুপালি ফুলের
উদ্দেশ্যে ডানদিকে ঝুকে পড়েছে, এরকম দৃশ্য তো আগে কখনো দেখিনি।
কী স্বাস্থ্যবান এবং সুন্দর যুবক! দেখ তার চমৎকার
জিন, তার ঘোড়া, তার সিল্ক ও ব্রোকেড, তাকে কি অপরূপ মানিয়েছে। কিন্তু সূর্য অস্ত যাওয়ার
সাথে সাথে এই সুদর্শন যুবক কোনোরূপ বিদায় সম্ভাষণ না জানিয়েই দ্রুত ঘোড়ায় আরোহণ করে
চলে গেল। যে পথে এসেছিল, ঐ পথ ধরেই সে ফিরে গেল। সবুজ ঘোড়ার খুরের আঘাতে নিক্ষিপ্ত
বালির দিকে সবাই তাকিয়ে রইল।
ব্যাঙের স্ত্রীর নিকটও এটা ছিল বিস্ময়কর যে, কোথা
থেকেই-বা এই তরুণ অশ্বারোহী এলো আর কোথায়ই-বা চলে গেল। সেও ভাবল, কত সুন্দর এবং শক্তসমর্থ
যুবকই না ছিল সে। সে নিজেও তার নাম জানতে আগ্রহী ছিল। সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে এত তাড়াহুড়া
করে কেনই-বা সে চলে গেল, এটা জানারও তার কৌতূহল ছিল। সে ভাবল, হয়তোবা এই তরুণ অনেক
দূরের বাসিন্দা।
বাড়ি ফেরার পর অন্য সবার মতোই সে ছিল বিস্ময়-বিমূঢ়।
ব্যাঙ দরজার নিকট এসে তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করল। তারা সবাই যখন ঘোড়দৌড়ের খুটিনাটি ব্যাঙকে
শুনাতে শুরু করল তখন তারা এটা দেখে বিস্মিত হলো যে, সে সমস্ত ঘটনাই জানে, এমনকি তাদের
বলার আগেই সেই অজানা তরুণ ঘোড়সওয়ারের কথাও।
পরের বছর শরৎকাল। একই জায়গায় সেই বার্ষিক প্রতিযোগিতা
আবারও শুরু হলো। বুড়োবুড়ি এবং ব্যাঙ-এর স্ত্রীও সেখানে গেল। ঘোড়দৌড়ের সময় যখন এলো সমস্ত
মানুষই তখন সেই সবুজ পোশাকপরিহিত সওয়ারের এবং তার সবুজ ঘোড়ার কথা মনে করল, আর মনে মনে
ভাবল ’এবার যদি সে আসে তবে তার নাম, বাসস্থান
এবং সে কোন যোংবেনের অধীনস্থ, এসব কিছু আমাদের জানতেই হবে।’
পৃষ্ঠা ৭
সর্বশেষ দিন যখন চুড়ান্ত প্রতিযোগিতা শুরু হবে, তখনি
সবুজ পোশাক পরিহিত সওয়ারি সবুজ ঘোড়ায় আরোহণ করে ময়দানে প্রবেশ করল। এটা এতই আকস্মিক
ছিল যে, মনে হল সে যেন স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে। এবারও মনোরম বন্দুকটি তার সঙ্গে ছিল।
অধিকতর উজ্জ্বল ব্রোকেডের তৈরি পোশাক তার পরিধানে ছিল। অন্য সব প্রতিযোগী যখন ঘোড়া
ছুটাটে শুরু করল তখনও সে বসে বসে চা পান করছিল। অতঃপর সে ঘোড়ায় আরোহণ করল। দ্রুতবেগে
ঘোড়া ছুটানোর সময় আগের বছরের মতোই সে বন্দুকে গুলি ভর্তি করল এবং ৩টি ঈগলকে গুলি করে
ভূপাতিত করল। চলমান অবস্থায় ফুল সংগ্রহ করে দর্শকদের দিকে ছিটিয়ে দিল। সে এমনভাবে ঘোড়া
নিয়ে ছুটছিল, মনে হচ্ছে যেন মেঘের মাঝ দিয়ে ঘোড়া ছুটে চলছে। ময়দানের মাঝ দিয়ে একখন্ড
সবুজ মেঘের চমকানো ছাড়া আর কিছুই যেন নজরে আসছিল না। এবারও চূড়ান্ত স্তম্ভে সে-ই সর্বপ্রথম
গিয়ে পৌছাল। কিন্তু সূর্য অস্ত যাওয়ার প্রক্কালে কোনরূপ বিদায় সম্ভাষণ জ্ঞাপন না করেই
সে দ্রুতবেগে ঘোড়া ছুটিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল।
বুড়োবুড়ি এবং আবেগপ্রবণ মেয়েরা পুনর্বার অশ্বখুরের
আঘাতে বিক্ষিপ্ত ধূলিরাশির দিকে তাজ্জব দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। এই সওয়ারের নাম-ধাম এবং
কোথা থেকে সে এলো, তাদের পরষ্পরের মাঝে এরুপ জিজ্ঞাসার ফলে সেখানে একরকম শোরগোলের
সৃষ্টি হলো। এবছরও লোকটির তিরধানের আগে তাকে জিজ্ঞাসা করতে তারা ভুলে গেল।
যখন বুড়োবুড়ি পুত্রবধূকে নিয়ে ঘরে এলো তখন তারা এটা
লক্ষ করল যে ওখানে যা যা ঘটেছে, ব্যাঙ তার সবকিছুই জানে, এমনকি তরুণ যুবক যে দেরিতে
ঘোড়া ছুটানো শুরু করেছিল, সেটা পর্যন্ত।
মেয়েটির বিস্ময়ের সীমা রইল না। সে আশ্চর্যান্বিত হয়ে
ভাবল, ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থেকে ব্যাঙ কেমন করে সমস্ত কিছু সম্পর্কে জানে? সূর্যাস্তের
আগেই কেন-বা ওই যুবক পুরুষটিকে বিদায় নিতে হয়? আমরা যে পথে সেখানে যাই, ঐ পথ দিয়েই
কেন সে ঘোড়া ছুটিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়? দুনিয়ায় এরকম ভালো সওয়ার আর একটিও আছে কি? কি সুদর্শন,
স্বাস্থ্যবান এবং আকর্ষণীয় সেই যুবকটি! তৎক্ষণাৎ সে ব্যাপারটি তলিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত
নিল।
পরবর্তী বার্ষিক ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার পূর্ব
পর্যন্ত মেয়েটি অপেক্ষা করলো। এবারও আগেকার মতোই মেয়েটি শ্বশুর-শাশুড়ির সাথে সেখানে
গেল। কিন্তু শেষ দিন অর্থাৎ চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার দিনে মেয়েটি শ্বাশুড়িকে বলল, ‘মা, আমার শরীরটা ভাল লাগছে না,
আমার মাথা ব্যাথা করছে। আমি বাড়ি ফিরে যেতে চাই। খচ্চরটাকে নিয়ে আমাকে এক্ষুনি যেতে
দাও।’
শ্বশুড়-শাশুড়ি দুজনেই তার প্রতি সুবিবেচক ছিল। যে
খচ্চরটা তাদের তাবু বয়ে নিয়ে গিয়েছিল, ওটার পিঠে সওয়ার হয়ে তারা তাকে বাড়ি যেতে দিল।
তাদের চোখের আড়াল হয়েই মেয়েটি দ্রুতগতিতে খচ্চরটিকে গৃহ অভিমুখে চালনা করল।
পৃষ্ঠা ৮
বাড়ি পৌছেই সে ব্যাঙের খোঁজ নিল। কিন্তু কোথাও তাকে
দেখতে পেল না।
ঘরের একপাশে ব্যাঙের একটি শূন্য খোলস তার নজরে এলো।
এটি তার স্বামীর বলে তার মনে হল। চোখে আনন্দের অশ্রু নিয়ে সে খোলসটাকে কুড়িয়ে নিল এবং
চিৎকার করে বলে উঠল, ‘হ্যা, সেই হলো অশ্বারোহী ব্যাঙ! যে কিনা একজন দক্ষ
অশ্বারোহীও। আমি তার উপযুক্ত কিনা, এখন আমি আর তা ভাবি না। আমি কি সুখী এবং সাথে সাথে
কতই না হতভাগা!’
সে তার চোখের জল মুছল, কিন্তু তবুও চোখের কোল বেয়ে
অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগল। বারবার সে ব্যাঙের খোলসটির দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল এবং আহতকন্ঠে
বলে উঠল, ‘হায়-কপাল, কেনই-বা তুমি এরকম ঘৃণ্য একটা খোলস পরে
থাকবে? আমি কি দেখতে সুন্দরী নই?’ আমার সত্যিকার স্বামী হবার চেয়ে তুমি কি একটা ব্যাঙ
হয়ে থাকতে চাও? এই খোলসটার প্রতি তার ঘৃণা এতটা উথলে উঠল যে, সে এটা পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত
নিল। সে ভাবল, অন্যথায় ঘরে ফিরে তার স্বামী পুনরায় ক্ষুদ্রাকৃতি কুৎসিত ব্যাঙের রূপ
নেবে। তাই সে ওটাকে পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিল। সে ভাবল, অন্যথায় ঘরে ফিরে তার স্বামী
পুনরায় ক্ষুদ্রাকৃতি কুৎসিত ব্যাঙের রূপ নেবে। তাই সে ওটাকে শেষমেষে পুড়িয়েই ফেলল।
ঐ সময় সূর্য অস্ত যাচ্ছিল। শূন্য থেকে নেমে আসা একখন্ড
সবুজ মেঘের মতোই সেই তরুণ যুবক ঘোড়া ছুটিয়ে এলো। মেয়েটাকে খোলস পোড়াতে দেখে সে যেন
বিবর্ণ হয়ে উঠল এবং আগুন থেকে খোলসটাকে ছিনিয়ে নেয়ার জন্য সে ঘোড়ার পিঠ থেকে ঝাঁপিয়ে
পড়ল। তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে, খোলসটির আর একটি মাত্র পা পুড়তে বাকি। সে একটা দীর্ঘ
নিশ্বাস ত্যাগ করল এবং ঘরের সামনেই খোঁড়াতে খোঁড়াতে বড় পাথরের উপর আছড়ে পড়ল। একটা প্রচন্ড
ভীতি মেয়েটিকে পেয়ে বসল। সে তার স্বামীকে ঘরে নিয়ে যেতে সাহায্য করতে দৌড়ে এলো। দুঃখিত
স্বরে সে ব্যাঙকে বলল, ‘প্রিয় স্বামী, তুমি সত্যিই একজন সুন্দর পুরুষ এবং
এত ভালো একজন সওয়ার। তুমি ব্যাঙ হয়ে থাকতে চাও কেন? অন্য মেয়েদের স্বামীরা তো মানুষ,
কিন্তু তুমি আমার স্বামী একটা ব্যাঙ! তুমি কি বুঝ না, এতে নিজেকে আমার কত অসুখী মনে
হয়?’
যুবকটি জবাব দিল, ‘কন্যা, শেষ পর্যন্ত তুমিও অধৈর্য
হয়ে পড়লে, তুমি যা করেছো এতে বড্ড তাড়াহুড়া করে ফেলেছো। আমার শরীরে উপযুক্ত শক্তি সঞ্চার
হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তোমার অপেক্ষা করা উচিৎ ছিল এবং তাহলে আমরা দুজনে একত্রে সুখে
জীবনযাপন করতে পারতাম। এখন আমি আর বাঁচবো না। জনসাধারণেরও সুখশান্তি হবে না।’
মেয়েটি জিজ্ঞেস করল, তাহলে কি আমি অন্যায় করেছি?
পৃষ্ঠা ৯
যুবকটি উত্তর দিল, ‘এটা তোমার দোষ নয়, আমি নিজেই সচেতন
ছিলাম না। আমি নিজের শক্তি পরীক্ষা করতে চেয়েছিলাম। আমি মা-ধরিত্রীর সন্তান, সাধারণ
মানুষ নই। যথেষ্ট শক্তি অর্জন করতে পারলে আমি নিজ পায়ে দাঁড়িয়ে জনগণের কল্যানার্থে
কাজ করতে পারতাম। আমি এমন একটা জগৎ দেখতে চাই যেখানে দরিদ্র জনগণ ধনীদের দ্বারা পদদলিত
না হয়। আমি এমন পথ বের করতে চাই যাতে করে আমরা সহজেই আকর্ষনীয় বেইজিংয়ে পৌছতে পারি
এবং হানভাইদের সঙ্গে আমাদের গরু ভেড়ার বিনিময়ে শস্যকণা পেতে পারি। কিন্তু আমি এতটা
বয়স্ক নই এবং প্রয়োজনীয় শক্তি অর্জন করতে পারিনি। ব্যাঙের খোলস ব্যতীত আমি এখনো ঠান্ডারাত
কাটাতে পারি না। তাই দিনের আগমনের পূর্বেই আমি মারা পড়ব। পূর্ণ শক্তি অর্জন করতে পারলে
পরিবেশ আমার জন্য যথেষ্ট উষ্ণ থাকত এবং আমি বেঁচে থাকতে পারতাম। কিন্তু এখনো যথেষ্ট
বাকি। আমি এই দুনিয়ায় এখন টিকে থাকতে পারব না। আজ রাতে অবশ্যই মার কাছে ফিরে যাচ্ছি।
একথা শুনে মেয়েটির চোখে অশ্রুতে ভরে উঠল।’
তখন এত করুন শুরে মেয়েটি কাঁদতে লাগলো যে শেষ পর্যন্ত
যুবকটি তার দুর্বল হাত দিয়ে মেয়েটির একটি হাত তুলে ধরে বলল, আমার প্রিয় জীবনসঙ্গিনী,
এভাবে দুঃখ করো না। আমাকে যদি বাঁচাতেই চাও তবে এখনো তোমার করণীয় কিছু আছে। পশ্চিম
দিকে আঙ্গুলি নির্দেশ করে সে বলল, একমাত্র সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা ও অনুমোদন থাকলেই তা
করা যেতে পারে। এখনো সময় আছে। আমার ঘোড়াটায় আরোহন কর, কেননা এটা অত্যন্ত দ্রুতগামী।
সেই তোমাকে পশ্চিমে নিয়ে যাবে। সেখানে লাল মেঘের মাঝে একটি স্বর্গীয় হল অবস্থিত। সেখানে
গিয়ে সৃষ্টিকর্তার নিকট কাতর প্রার্থনা জানাও। জনসাধারণের সুখের নামে তার কাছে ৩টি
বিষয়ে আবেদন পেশ কর। দিনের আগমনের পূর্বেই তার প্রতিশ্রুতির জন্য প্রার্থনা জানাও।
স্বরণ রেখ, প্রথমটা হল- মানুষকে যেন আর ধনী এবং দরিদ্র এ দুই শ্রেণীতে ভাগ করা না হয়,
দ্বিতীয়টি হল- সাধারণ মানুষ যেন রাজার দ্বারা অত্যাচারিত না হয় এবং তৃতীয়টি হল- এমন
যেন কিছু হয় যার ফলে আমরা বেইজিং যেতে পারি ও আমাদের গরু-ভেড়ার বাজার পাই এবং হানভাইদের
নিকট থেকে যেন আমাদের মুখ্য সামগ্রী ক্রয় করতে পারি। সৃষ্টিকর্তা যদি প্রতিশ্রুতি দেন,
তবে উষ্ণ ও আরামদায়ক জীবন হবে আমাদের এবং ব্যাঙের খোলস ছাড়াই রাতেও আমি বেঁচে থাকতে
সক্ষম হব। তাহলে আমাকে মরতে হবে না।
তৎক্ষণাৎ মেয়েটি লাফ দিয়ে ঘোড়ায় আরোহণ করল এবং ঘোড়াটিও
জোর কদমে চলতে লাগল। মনে হচ্ছিল মেয়েটি যেন শুন্যে উড়ে চলছে। তার পাশ দিয়ে বাতাসের
শোঁ শোঁ শব্দ বয়ে চলছিল। সে একের পর এক সাদা মেঘগুলোকে অতিক্রম করে চলছিল। অবশেষে সে
সূর্যের মতো গোলাপি-স্বর্ণের আলো বিচ্ছুরনকারী স্বর্গীয় প্রাসাদে এসে উপস্থিত হলো।
ভেতরে প্রবেশ করে সে সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা জানাল। তার একাগ্রতায় সৃষ্টিকর্তা
বিচলিত হলেন এবং তার প্রার্থনা মঞ্জুর করলেন।
পৃষ্ঠা ১০
সৃষ্টিকর্তা তাকে বললেন, তোমার একনিষ্ঠতা দেখে আমি
তোমার সকল প্রার্থনা মঞ্জুর করলাম। কিন্তু দিনের আগমনের পূর্বে তোমাকে প্রতিটি ঘরে
অবশ্যই এই সংবাদ পৌছে দিতে হবে। ভোরের আগে যদি সকল মানুষ এই সংবাদ শুনতে পায়, তবেই
তোমার সকল অনুরোধ পূরণ করা হবে। এই সকল এলাকায় তখন আর এতটা ঠান্ডা থাকবে না এবং তোমার
স্বামী ব্যাঙের খোলস ছাড়াই রাত্রি যাপন করতে পারবে।
মেয়েটি আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে উঠল। সৃষ্টিকর্তার কৃতজ্ঞতা।
সৃষ্টিকর্তার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে সে বিলম্ব না করে ঘোড়ায় উঠল এবং দিবা আগমণের পূর্বে
প্রতিটি পরিবারে এই সংবাদ পৌছে দেওয়ার জন্য গৃহভিমুখে রওয়ানা হল। যখন সে উপত্যকায় প্রবেশ
করল, তার পিতা যোংবেন তখন দূর্গের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে। তার মেয়েকে ঘোড়া ছুটাতে দেখে
তিনি বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, মা কোন কিছু কি ঘটেছে? তুমি কেন শেষ রাত্রে ঘোড়া ছুটিয়ে
চলছ?
মেয়েটি জবাব দিল, হ্যাঁ বাবা, বাস্তবিকই একটা কিছু
ঘটেছে। সৃষ্টিকর্তা এক বিস্ময়কর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সকল মানুষকে সেই একই সংবাদ পৌছে
দিতে আমি এখন প্রত্যেকটি ঘরে যাচ্ছি।
যোংবেন বললেন এতো তাড়াহুড়ো কিসের? থাম, আমাকে আগে
বল যে দেবতা কি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন?
মেয়ে জবাব দিল, বাবা এখন থামার সময় নেই। তোমাকে পরে
বলবো।
তার বাবা বললেন, না বললে চলবে না, আমিতো যোংবেন। তা
নয় কি? প্রথমে আমাকে বলতেই হবে। এই বলে তিনি সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলেন এবং ঘোড়ার লাগামে
হাত দিলেন। মেয়েটি জানতো এখান থেকে তার শিগগির বিদায় নেওয়া উচিত। তাই তাকে সবকিছু বলল।
সে শুরু করল, সৃষ্টিকর্তা তিনটি বিষয়ে প্রতিশ্রুতি
দিয়েছেন। প্রথমটি হলো, ধনী এবং দরিদ্রের মাঝে কোনো পার্থক্য থাকবে না। যোংবেন ভ্রু
কুঞ্চিত করে চিৎকার করে বলে উঠলেন, ধনী দরিদ্রের মাঝে কোনো পার্থক্য যদি না থাকে, তবে
মানুষের পদমর্যাদারও কোন পার্থক্য থাকবে না। তখন কেমন করে তোমার বোনদের বিয়ের উপঢৌকনের
ব্যবস্থা হবে? ঘোড়ার লাগামটিকে তিনি আরো শক্ত করে ধরলেন।
পরবর্তী বিষয় হচ্ছে, জনসাধারণ রাজকর্মচারীদের দ্বারা
অত্যাচারিত হবে না। প্রকৃতপক্ষে তারা রাজ কর্মচারিদের দ্বারা অত্যাচারিত হয়। যোংবেন
এটা শুনে বললেন তাহলে রাজদরবারে আমাদের কাজগুলো কে করবে? তার কন্ঠ প্রায় রুদ্ধ হয়ে
এলো। অতঃপর তিনি জানতে চাইলেন তৃতীয় প্রতিশ্রুতিটি কি ছিল? মেয়েটি বলল, এমন একটি ব্যবস্থা
হবে যার ফলে হানভাইদের নিকট আমাদের গরু ভেড়া বিক্রয়ের জন্য আমরা বেইজিং যেতে পারবো।
বাবা, এসবকিছু বাস্তবে পরিণত হলে চমৎকার হবে, এলাকাটা উষ্ণ হবে। যার ফলে ........
পৃষ্ঠা ১১
কিন্তু যোংবেন শেষ পর্যন্ত শুনতে চাইলেন না। তিনি
বলে উঠলেন, এসব হচ্ছে অর্থহীন আলাপ। আমাদের গরু ভেড়া নিয়ে আমরা বেশ আছি। কেনই-বা আমরা
হানদের নিকট থেকে আমাদের খাদ্যশস্য সংগ্রহ করতে যাব। এগুলো নিশ্চয়ই সৃষ্টিকর্তার নির্দেশ
নয়। আমি এসব কথা একবর্ণও বিশ্বাস করি না। তোমাকে আমি এসব কথা জনসাধারণের কাছে বলতে
দেব না। মেয়েটি কেঁদে উঠল, বাবা এখন আর অপেক্ষা করতে পারি না। আমাকে যেতে দাও। সে ঘোড়ায়
চড়ার চেষ্টা করল। কিন্তু তার বাবা বাধা দিল। হতভাগ্য মেয়েটি উৎকন্ঠায় দিশেহারা হয়ে
পড়ল এবং উন্মাদের মতো বাবার সঙ্গে কথা কাটাকাটি করতে লাগল। ঠিক এই সময়ে মোরগের ডাক
শোনা গেল। লাফ দিয়ে মেয়েটি ঘোড়ায় উঠে পড়ল এবং ঘোড়া ছুটিয়ে চলে যেতে চাইল। কিন্তু যোংবেন
তখনো ঘোড়াটাকে আটকে রাখল। হাফাতে হাফাতে যোংবেন মেয়েকে লক্ষ করে চিৎকার করে বলল, তুমি
কি উন্মাদ হয়ে গেছ? তুমি কি চাও, কোনো উপঢৌকন ছাড়া তোমার বোনদের বিয়ে হোক? তুমি কি
তোমার বাবাকে হেও করতে চাও, যাতে করে তার নিজের কাজ তিনি নিজে করেন? কে আমার গরু-ভেড়া
চরাবে? কে করবে জমি চাষ? সত্যিই কি তুমি উন্মাদ!
মেয়েটি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ল। দ্বিতীয় বারের মতো
মোরগ ডেকে উঠল। তখনো মেয়েটি যোংবেনের হাত থেকে নিস্কৃতি পাবার জন্য চেষ্টা করছিল। বেপরোয়া
হয়ে সে ঘোড়ার পিঠে কষাঘাত করল। যোংবেনকে মাটিতে নিক্ষেপ করে ঘোড়াটি শূন্যে উঠে গেল।
উপত্যকার প্রথম বাড়িতে যখন মেয়েটি এসে পৌছল তখনি তৃতীয়বারের মতো মোরগ ডেকে উঠল। ঊষার
অভ্যুদয় ইতোমধ্যেই আকাশকে আলোকিত করে ফেলেছে এবং গোটা কয়েক পরিবার মাত্র সৃষ্টিকর্তার
প্রতিশ্রুতি শুনতে পেয়েছে।
নৈরাশ্যে মেয়েটির অন্তর ছেয়ে গেল। সে কৃতকার্য হতে
পারেনি। অনেক দেরি হয়ে গেছে। তাড়াহুড়ো করে বাড়ি ফিরে আসা ছাড়া তার আর কোনো গতি ছিল
না। সে দেখতে পেল দুজন বুড়ো মানুষ হতভাগ্য যুবকটির পাশে বসে কাঁদছেন এবং তার শাশুড়ি
মৃতের জন্য প্রার্থনা করছেন। সবকিছু বৃথা। সে তখন নিজেকে ও বাবাকে দোষারোপ করে অঝোরে
কাঁদতে লাগল।
ব্যাঙের কবর হলো পাহাড়েরই একটি পথে। মেয়েটি সন্ধ্যা হলেই কান্না জুড়ে দিতো। এভাবে কাঁদতে কাঁদতে সে নিজেই পাথর হয়ে গেলো।
***** সমাপ্ত *****