সারমর্ম: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক চীন সফরে চীনের কাছে থেকে প্রাপ্ত ভবিষ্যত বিনিয়োগসমূহ সম্পর্কে ধারণা। মোট- ২ পৃষ্ঠা
কৌশলগত অংশীদ্বারিত্ব থেকে ব্যাপক কৌশলগত ও সহযোগিতামুলক
অংশীদ্বারিত্বে উন্নীত হতে ২১ টি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি এবং ৭টি ঘোষণাপত্রে সই করেছে
বাংলাদেশ ও চীন। বুধবার দুপুরে বেইজিং এ ‘গ্রেট হল অব দ্যা পিপল’ এ সফররত প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা ও চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে এসব সমঝোতা
ও ঘোষণাপত্র সই হয়।
অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং সেক্টরে সহযোগিতা, ব্যবসা
বাণিজ্য, ডিজিটাল অর্থনীতি, অবকাঠামো উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সহায়তা, ষষ্ঠ ও
নবম বাংলাদেশ চায়না মৈত্রী সেতু, কৃষিপণ্য রপ্তানি, দুই দেশের জনগণের সাথে জনগণের যোগাযোগের
বিষয়ে এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই ও দলিল হস্তান্তর হয়।
এই সফরে যে ২১ টি
সমঝোতা স্মারকে সই হয়েছে সেগুলো হল―
১. ডিজিটাল অর্থনীতিতে বিনিয়োগ সহায়তা শক্তিশালী
করতে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশের ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।
২. ব্যাংকিং এবং ইন্স্যুরেন্স নিয়ন্ত্রন বিষয়ে
একটি সমঝোতা স্বারক সই করে চায়না ন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল রেগুলেটরি অ্যাডমিনিস্ট্রেশন
(এনএফআরএ) এবং বাংলাদেশ ব্যাংক।
৩. বাংলাদেশ থেকে চীনে তাজা আম রপ্তানির জন্য উদ্ভিদ
স্বাস্থ্যসম্পর্কিত উপকরণ বিষয়ে একটি প্রটোকল সই করে দুই দেশ।
৪. অর্থনৈতিক উন্নয়ন নীতি সহায়তার ক্ষেত্রে একটি
সমঝোতা স্মারক সই।
৫. বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সহায়তা বিষয়ে একটি সমঝোতা
স্মারক সই।
৬. ডিজিটাল অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার একটি সমঝোতা
স্মারক সই।
৭. বাংলাদেশে প্রকল্পে চায়না-এইড ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি
অপারেশন সেন্টারের ‘সম্ভাব্যতা সমীক্ষা’ বিষয়ে আলোচনার একটি সাইনিং অব মিনিটস
(কার্যবিবরণী) সই।
৮. চীনের সহায়তায় ৬ষ্ঠ বাংলাদেশ-চায়না মৈত্রী সেতু
সংস্কার প্রকল্পের চিঠি বিনিময় হয়।
৯. নাটেশ্বর প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা পার্ক প্রকল্পে
চায়না-এইড কনস্ট্রাকশনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা বিষয়ে চিঠি বিনিময় হয়।
১০. চীনের সহায়তায় নবম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু
প্রকল্প বিষয়ে চিঠি বিনিময় হয়।
১১. মেডিকেল সেবা এবং জনস্বাস্থ্য বিষয়ে সহযোগিতা
শক্তিশালী করতে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।
১২. অবকাঠামোগত সহযোগিতা জোরদারে সমঝোতা স্মারক
সই হয়।
১৩. গ্রিন অ্যান্ড লো-কার্বন উন্নয়ন বিষয়ে সহযোগিতায়
একটি সমঝোতা স্মারক সই করে দুই দেশ।
১৪. বন্যার মৌসুমে ইয়ালুজাংবু (ব্রহ্মপুত্র) নদীর
হাইড্রোলজিক্যাল তথ্য বাংলাদেশকে দেওয়ার বিধি বিষয়ক সমঝোতা স্মারক নবায়ন করা হয়।
১৫. চীনের জাতীয় রেডিও এবং টেলিভিশনের সঙ্গে একটি
সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।
১৬. পারষ্পরিক সহযোগিতা বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক
সই করে চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি) এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা।
১৭. চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি) এর সঙ্গে অপর
আরেকটি সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ টেলিভিশন।
১৮. সিনহুয়া নিউজ এজেন্সি এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা
(বাসস) মধ্যে একটি চুক্তি সই।
১৯. সিনহুয়া নিউজ এজেন্সি এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন
এর মধ্যে অপর আরেকটি চুক্তি সই।
২০. একটি সমঝোতা স্মারক নবায়ন করে চীনের শিক্ষা
মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
২১. টেকসই অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য পাবলিক-প্রাইভেট
পার্টনারশিপ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।
পৃষ্ঠা ১
এছাড়া সাতটি ঘোষণাপত্রের
মধ্যে রয়েছে-
১. চীন-বাংলাদেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বিষয়ে যৌথ
সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সমাপ্তি ঘোষণা।
২. চীন-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি চুক্তির
আলোচনা শুরুর ঘোষণা।
৩. ডিজিটাল কানেক্টিভিটি প্রকল্পের জন্য টেলিকমিউনিকেশন
নেটওয়ার্কের আধুনিকীকরণের সমাপ্তি ঘোষণা।
৪. ডাবল পাইপ লাইন প্রকল্পের সঙ্গে সিঙ্গেল পয়েন্ট
মুরিং এর ট্রায়াল রান সমাপ্তি ঘোষণা।
৫. রাজশাহী ওয়াসা সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট
চালুর ঘোষণা।
৬. শানদং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুরের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর সই।
৭. বাংলাদেশে লুবান ওয়ার্কশপ নির্মাণের ঘোষণা।
এবারের বিনিয়োগে
মোট অর্থের হিসাব
বাংলাদেশে চীনের বর্তমান বিনিয়োগ ৭ বিলিয়ন ডলারেরও
বেশি।
এবারের চুক্তিগুলোতে চীনের বিভিন্ন কোম্পানি বাংলাদেশের
বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে ৬ হাজার কোটি টাকা বিনিযোগ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে―
১. চাইনিজ কোম্পানি হুয়াওয়ে বাংলাদেশের ডিজিটাল
প্লাটফর্ম নগদ এর সাথে একসাথে ডিজিটাল প্লাটফর্মে কাজ করার জন্য ৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ
করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
২. হুয়াওয়ে অন্য আরেকটি স্মারকে ক্যাপিটাল মার্কেটে
ডেক্স বাংলা টেক এর সাথে ২০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।
৩. চীনা কেমিকেল কোম্পানি মোংলা ইকোনোমিক জোনে
দেশবন্ধু গ্রুপের সাথে ৪০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।
৪. সিএনজি ট্রান্সপোর্টেশনে ২০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ
করবে।
টাকার অংকে এই ৪টি বিনিয়োগই সবচেয়ে বড় যার মধ্যে
শুধুমাত্র একটিতেই ৪০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হবে। এছাড়াও আরও যে বিনিয়োগগুলো হবে
সেগুলোর মধ্যে রয়েছে―
· বাংলাদেশে
বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি ও লিথিয়াম ব্যাটারি তৈরির প্রকল্পে বেশ কিছু চীনা কোম্পানি বিনিয়োগ
করবে।
· বাংলাদেশ
চীনা ইকনোমিক জোন প্রকল্পে বাংলাদেশি কোম্পানি সিআরবিসি এর সাথে চাইনিজ কোম্পানি নিংবো
সিক্সিং কাজ করবে।
· সোলার
পার্ক সিলেট প্রকল্পে বাংলাদেশি কোম্পানি বিলিয়ন ১০ কমিউনিকেশন এর সাথে চাইনিজ কোম্পানি
সিএইচটিসি বিনিয়োগ করবে।
· নবায়নযোগ্য
জ্বালানি প্রকল্পে বাংলাদেশি কোম্পানি বিলিয়ন ১০ কমিউনিকেশন এর সঙ্গে হোসেং সিলিকন
নামক একটি চাইনিজ কোম্পানি বিনিয়োগ করবে।
· বাংলাদেশে
লুব্রিকেন্ট তেল রিফাইনিং হবে যেটিতে বাংলাদেশি কোম্পানি বিলিয়ন ১০ কমিউনিকেশন এর সাথে
জোহেংকি নামক একটি চাইনিজ কোম্পানি চুক্তি করেছে।
· ঢাকা
সিটি মোবাইক প্রজেক্টে বাংলাদেশি কোম্পানি ই.বি সলিউশন এর সাথে চাইনিজ কোম্পানি নিংবো
সেরিং চুক্তি করেছে।
· এছাড়া
রাবার মেশিনারিজ শিল্পেও বেশ কিছু চাইনিজ কোম্পানি কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
শেখ হাসিনার এই চীন সফরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও অর্থমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী, পররাষ্ট্র সচিবসহ উচ্চপর্যায়ের সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা সফরসঙ্গী হিসেবে ছিলেন। ২০০৯ সাল থেকে টানা চার মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় যাওয়ার পর এটি ছিল শেখ হাসিনার চতুর্থবারের মতো চীন সফর।
***** সমাপ্ত *****