সারমর্ম: পশুরাজ সিংহ হাতির কাছ থেকে যে শিক্ষাটা পেল। মোট-২ পৃষ্ঠা
পশুদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হল সিংহ। তাই সিংহ
পশুদের রাজা। শরীরে অফুরন্ত শক্তির জন্য জঙ্গলের কোন প্রাণীকেই ভয় পায় না সিংহ। উল্টো
তাকে ভয় পায় না এমন প্রাণী বনরাজ্যে একটিও পাওয়া যাবে না।
এ হেন সিংহ কিন্তু এক জায়গায় জব্দ। মোরগের কোঁ-কোঁর-কোঁ
ডাক একদম বরদাস্ত করতে পারে না সে। সামান্য মোরগের ডাক কানে গেলে পালাতে পথ পায় না।
একদিন হল কী, এক সিংহ বেরিয়েছিল শিকারের খোঁজে। কিন্তু
যেদিক সে যায় সেদিকেই তার কানে আসে মোরগের ডাক।
কোথায় আপদগুলো ঝোপঝাড়ে যে ঘাপটি মেরে থাকে, কিছুই
বোঝা যায় না।
শেষকালে বিরক্ত হয়ে বনের অন্যদিকে গিয়ে ভিড়ল সে। কিন্তু
আজ তার কপালই ছিল মন্দ। খানিক চলার পরেই শুনতে পেল কাছেই গাছের ওপর থেকে ভয়ঙ্কর সেই
শব্দটা আসছে-কোঁ-কোঁর-কো-
এমনি করে মোরগের ডাকের তাড়া খেয়ে সেই সিংহ সারা দিনটা
কেবল বনের এ মাথা থেকে ও মাথায় ছুটে বেড়াল।
অনবরত ছোটার ওপরে থাকায় খিদের কথা ভুলেই গিয়েছিল বেচারা।
বেলা যখন পড়ে এল, তখন সে ক্লান্ত হয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে এক গাছতলায় শুয়ে-পড়ল।
জীবনের ওপরে ঘেন্না ধরে গেল সিংহের আজ। পুঁচকে একটি
পাখি, গোটা শরীরে সিংহের একগ্রাস মাংসও হবে কিনা সন্দেহ, আর তারই ভয়ে কিনা তার দিশাহারা
অবস্থা। এদিকে সে হল কিনা বনের পশুদের রাজা।
এমনি নানা কথা ভাবতে ভারতে সিংহ ঠিক করল, তার মরাই
ভাল। ক্ষুদে মোরগের ভয় বুকে নিয়ে তার মত পশুর বেঁচে থাকার কোনও মানে হয় না।
সিংহ ভাবতে লাগল, কোথায় গেলে কী করলে সে সহজে মরতে
পারবে।
এমনি যখন অবস্থা ঠিক সেই সময় কুলোর মত কান দোলাতে
দোলাতে সেখানে হাজির হল এক হাতি।
সিংহকে সামনে দেখতে হাতি শুঁড় উচিয়ে বলল, সালাম মহারাজ।
সিংহ হাতির দিকে নিরীহ চোখ তুলে তাকাল কেবল, কোনও
কথা সরল না তার মুখে।
শুঁড়টাকে সামনে পেছনে দোলাতে দোলাতে হাতি বলল, মহারাজের
মনমেজাজ বিগড়েছে মনে হচ্ছে। এমন ব্যাজার অবস্থা কেন?
সিংহ মনের দুঃখ আর চেপে রাখতে পারল না। দীর্ঘনিঃশ্বাস
ছেড়ে বলল, জীবনটার ওপরে ঘেন্না ধরে গেছে ভাই। বাঁচার আর সাধ নেই। সকাল থেকে গোটা বন
চষে ফেললাম, একরত্তি খাবারও জোটাতে পারিনি।
হাতি সামনে পেছনে দুলতে দুলতে বলল, এই কথা, আমি ভাবলাম
কী না কী। তা দিনের বেলা জোটেনি, গোটা রাত তো সামনে পড়ে আছে। দিনের খাবার জোটেনি বলে
বাঁচার সাধ ঘুচে যাবে কেন?
বলতে বলতে হাতি বিশাল কান দুটো পৎ পৎ শব্দ তুলে ঘন
ঘন নাড়তে লাগল।
পৃষ্ঠা ১
সিংহের হটাৎ খেয়াল হল হাতি এক ঠায় দাঁড়িয়ে কথা বলছে
বলে কান দুটো কিন্তু পলকেরও জন্যও সুস্থির নয়। অনবরত যেন হাওয়া তাড়িয়ে চলেছে।
সিংহের খুব কৌতূহল হল। সে হাতিকে জিজ্ঞেস করল, হ্যাঁ
ভাই হাতি, তোমার কানে কোনও অসুখ বিসুখ আছে নাকি? সেই তখন থেকে দেখছি সমানে সামনে পেছনে
কেবলই দোলাচ্ছ?
ঠিক সেই সময় একটা মশা উড়ে এসে হাতির মাথার ওপর চক্কর
খেতে শুরু করল।
কান নাড়ানো বন্ধ না করে হাতি বলল মহারাজ আমার মাথার
ওপর একটি মশা কেবলই ঘুরপাক খাচ্ছে, দেখতে পাচ্ছেন, তো? আমি মশার গান শুনতে পাচ্ছি।
ওই ক্ষুদে প্রাণীটা কোনও রকমে যদি একবার আমার কানের ভেতরে ঢুকে পড়তে পারে তাহলে আর
দেখতে হবে না। পলকের মধ্যে আমার এ বিশাল শরীরটা অবশ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়বে। তাই ক্ষুদ্র
মশা যাতে ধারের কাছে ঘেঁষতে না পারে তার জন্য আমাকে বারবার কান নড়াতে হচ্ছে।
হাতির কথা শুনে সিংহ এবারে নড়েচড়ে উঠে বসল। তার মনের
ভারও অনেকটা হাল্কা হয়ে গেল যেন। সিংহ ভাবল আমি তাহলে মিছেই মরার কথা বলছি। হাতির চাইতে
আমি তবে তো অনেক ভাগ্যবান।
পাহাড়ের মত প্রাণীটা এক চিমটে মশার ভয়ে সারাক্ষণ কুঁকড়ে
রয়েছে। তার চাইতে মোরগ তো ঢের ঢের বড় প্রাণী আর অনেক বেশি ভয়ঙ্কর।
নীতিকথা: নিজের চেয়ে দুর্বল কাউকে দেখলে অসহায় ব্যক্তিরা মনে সান্ত্বনা পায়।
***** সমাপ্ত *****