মুমূর্ষ সিংহ || ঈশপের গল্প ৫

 

সারমর্ম: নিজের চেয়ে ছোট পদমর্যাদার কারো কাছে অপমানিত হওয়া যে কতটা কষ্টের তাই সিংহ ও গাধার এই গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। মোট-১ পৃষ্ঠা


বয়স হয়ে যাওয়ায় এক সিংহ খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছিল। একদিন তার শেষ সময় ঘনিয়ে এল। নিঃশ্বাস পড়তে লাগল ঘন ঘন। চোখের দৃষ্টিতেও এল ঘোলাটে ভাব। মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়ে মৃত্যুর অপেক্ষা করতে লাগল সিংহ।

এমন সময় সেখানে উপস্থিত হল এক বুনো শুয়োর। সিংহের সঙ্গে তার বনিবনা ছিল না। মনে মনে রাগ থাকলেও সিংহ বেশি শক্তিশালী বলে সে কিছু করে উঠতে পারত না। এখন সিংহকে মরণ অবস্থায় দেখে সে সিংহের শরীরে বারবার তার ধারল দাঁতের খোঁচা মেরে মনের ঝাল মেটাল।

নড়াচড়ার ক্ষমতা ছিল না সিংহের। তাই শুয়োরের আঘাতের যন্ত্রণা তাকে সহ্য করে থাকতে হল।

শুয়োর চলে যাবার পর সেখানে হাজির হল এক ষাঁড়। এক সময় সিংহ এ ষাঁড়কে অনেক জ্বালাতন করেছে। তাই ষাঁড়ের মনেও ছিল পূর্বের রাগ। এখন সিংহের মুমূর্ষ অবস্থা বুঝতে পেরে সে-ও শিং-এর গুঁতো মেরে মনের জ্বালা মেটাল।

এক গাধা দূরে দাঁড়িয়ে সব দেখছিল। ষাঁড় সেখান থেকে চলে গেলে সে ভাবল, এ সিংহের যখন বলবিক্রম ছিল তখন বনের পশুদের ওপর অনেক অত্যাচার করেছে। এখন মরতে বসেছে তাই শুয়োর আর ষাঁড়ের গুঁতো খেয়েও কিছু করতে পারল না। আমিও কেন আজ অপমানের শোধ তুলতে বাকি থাকবো।

এই ভেবে গাধা এগিয়ে গিয়ে সিংহের মুখে লাথি মারতে লাগল।

মরণাপন্ন সিংহ তখন কাতর স্বরে বলে উঠল, হায়, আমার কী হীন অবস্থা! যেসব পশু আগে আমার দাপটে ভয়ে কাঁপত, এখন কত সহজে তারা আমাকে অপমান করে চলে যাচ্ছে। বুনো শুয়োর, ষাঁড় এরা তবুও শক্তিশালী এদের অপমান সহ্য করা যায়। কিন্তু এক ঘৃণ্য জীব, সকল পশুর অধম এ গাধা, তার লাথি খাওয়ার আগে কেন আমার মরণ হল না!

নীতিকথা: অধম ও নীচ জনের অপমানের যন্ত্রনা মৃত্যুর চেয়েও বেশী।

          

***** সমাপ্ত *****

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post