বাহাদুর খেলোয়ার || ঈশপের গল্প ৪

 

সারমর্ম: আসল যাদুকরের খেলাকে নকল করতে গিয়ে মঞ্চে একজন নকল খেলোয়ারের সঙ্গে বিচারকগণ যে আচরণ করলেন। মোট-২ পৃষ্ঠা


একবার এক মেলায় নানা রকম খেলাধুলার আয়োজন করা হয়েছিল। একজন ধনী ব্যক্তি ঘোষণা করেছিলেন, সেরা খেলোয়াড়কে মূল্যবান পুরষ্কার দেওয়া হবে।

নিদিষ্ট দিনে মেলা প্রাঙ্গণে অনেক খেলোয়াড় জড়ো হল। তাদের মধ্যে ছিল এক বিদূষক। মজার মজার খেলা দেখিয়ে সে লোককে অবাক করে দিত। দেশজোড়া তার নাম। 

খেলা দেখার জন্য মেলা প্রাঙ্গণে কাতারে কাতারে লোক জড়ো হয়েছে। বিচারকরাও উপস্থিত হয়েছেন। প্রথমেই মঞ্চে উঠল সেই বিদূষক। তাকে দেখে দর্শকরা আনন্দে হাততালি দিয়ে চিৎকার করতে লাগল।

মঞ্চে উঠে বিদূষক ঘোষণা করল, আজ এমন একটি মজার খেলা আমি দেখাব, যা আগে কোনও দিন কোনও খেলোয়াড় দেখাতে পারেনি।

কথা শেষ করে বিদূষক তার লম্বা আলখাল্লাটির মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে বিড়ালের বাচ্চার মত ম্যাঁও ম্যাঁও করতে লাগল যে মনে হল সত্যিই কোন বিড়াল ছানা সেখানে লুকানো আছে।

এটা দেখে দর্শক বিচারক সকলেই স্তম্ভিত। সকলে বলতে লাগল, বিদূষকের আলখাল্লার ভেতরে একটা বিড়াল ছানা লুকানো আছে।

বিদূষক বলল, কিন্তু আপনারা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন, কোথাও বিড়াল ছানা লুকানো নেই।বিচারকদের একজন তল্লাসী করলেন। কিন্তু আলখাল্লার মধ্যে কিছুই পাওয়া গেল না।

অমনি চারদিক থেকে জয়ধ্বনি উঠল। দর্শকরা হাততালি বাজিয়ে বিদূষককে অভিনন্দন জানাতে লাগল। বিদূষকের পরে আর কোনও খেলোয়াড়ই দর্শকদের অমন মুগ্ধ করতে পারল না। তারপর বিচারকরা ঘোষণা করলেন, বিদূষকই শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়।

এমন সময় দর্শকদের মধ্যে থেকে একজন গ্রামবাসী মঞ্চে উঠে বলল, আজ বিদূষক যে খেলা দেখিয়ে শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় নির্বাচিত হল, কাল মেলায় আমি তার চেয়েও অনেক চমকপ্রদ খেলা দেখাব। আমাকে অনুমতি দেয়া হোক।

পুনরায়, সেই ধনী ব্যক্তির ইচ্ছায় পরের দিনও খেলার আয়োজনের ঘোষণা করা হল।

সেদিন মেলা প্রাঙ্গণে দ্বিগুন দর্শক উপস্থিত হল। বিচারকরাও আসনে এসে বসেছেন। তাঁদের ডাক পেয়ে সেই গ্রামবাসীটি মঞ্চে উঠে এল। সে প্রথমেই তার হাত দুটিকে হাটুর ওপরে এমন ভঙ্গিতে রাখল যে সকলের ধারণা হল তার আলখাল্লার নিচে কিছু লুকানো রয়েছে।

দর্শকরা হৈ চৈ করতে লাগল। তখন পরীক্ষা করে দেখা হল। কিন্তু কিছু্ই পাওয়া গেল না।

গ্রামবাসিটি কিন্তু সত্যিই তার আলখাল্লার ভেতরে একটি বিড়াল ছানা লুকিয়ে রেখেছিল। কিন্তু সেটা এমনভাবে রেখেছিল যে পরীক্ষা করে তার সন্ধান কেউ পেল না।

এরপর কথা বলতে বলতে এক সময় গ্রামবাসীটি লুকানো বিড়াল ছানার কানে মোচড় লাগাল। অমনি সেটা ম্যাঁও ম্যাঁও করে ডাকতে লাগল। মনে হল যেন গ্রামবাসী খেলায়ারটির পোশাকের ভেতরে একটা বিড়াল ছানা লুকানো আছে।

কিন্তু অবাক করা বিষয় যে, গ্রামবাসী খেলোয়াড়টি বিচারকদের কাছে থেকে কোন প্রশংসাই পেল না। বিচারকরা বলতে লাগল যে, গতদিনে বিদূষক অবিকল বিড়াল ছানার ডাক নকল করতে পেরেছিল। নতুন এই গ্রামবাসী খেলোয়াড়ের ডাক মোটেও বিড়ালের ছানার মত হয়নি।


পৃষ্ঠা ১



বিচারকদের এই রায় শুনে সকলে চুপচাপ রইলেন। তখন সকলে মিলে উপহাস করে খেলোয়াড়কে মঞ্চ থেকে নেমে আসতে বলতে লাগল।

গ্রামবাসী খেলোয়াড় তখন তার আলখাল্লার ভেতরে লুকানো বিড়াল ছানাটি বের করে সকলকে দেখাল। তারপর বলল, এখন শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড়কে পুরষ্কার দেবার আগে সকলে বিচার করে দেখুন আপনারা কেমন যোগ্য বিচারক, আসল বিড়ালের ছানার গলাই চিনতে পারেন না।

নীতিকথা: আসল এবং নকলের মধ্যে সর্বদাই পার্থক্য বিরাজমান।

          

***** সমাপ্ত *****

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post