সারমর্ম: ভয়ংকর এক শাঁকচুন্নী ব্রাহ্মণের বাড়িতে ছদ্মবেশে ঢুকে কি কি কাণ্ড ঘটালো তার গল্প। মোট-২ পৃষ্ঠা
একদিন এক সদ্যবিবাহিত ব্রাহ্মণপত্নী পুকুরে যাচ্ছিলেন
স্নান সারতে। ঐ পুকুর পাড়ে ছিল একটি বিশাল কদম গাছ। সেই গাছে বাস করত এক শাঁকচুন্নী,
ব্রাহ্মণপত্নীকে আসতে দেখে সে সাদা কাপড় পরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে রইল। ব্রাহ্মণপত্নী শাঁকচুন্নীকে
অতিক্রম করে যাওয়ার সময় অসাবধানতায় তার শাড়ির আঁচল শাঁকচুন্নীর গায়ে লাগল। সাথে সাথে
শাঁকচুন্নী ব্রাহ্মণপত্নীকে পাঁজাকোলা করে কদমগাছের গহবরে বন্দী করে রাখল। এরপর নিজে ব্রাহ্মণপত্নীর বেশে ব্রাহ্মণের বাড়িতে উপস্থিত
হল।
থাকার মধ্যে ব্রাহ্মণ বাড়িতে থাকতো শুধুমাত্র তার
বৃদ্ধ মা আর সদ্য বিবাহি বউ। নতুন বউয়ের সাথে
বৃদ্ধার সবসময়ই খিটিমিটি লেগে আছে, মেয়েটা চটপটে নয়। কিন্তু সেদিনের পর থেকে বৃদ্ধা
খুব খুশী, হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। কারণ ছদ্মবেশধারী শাঁকচুন্নীটি ছিল খুবই চটপটে। বৃদ্ধা
মনে মনে ভাবল যাক এতদিনে তাহলে বৌমার সুমতি হয়েছে।
একদিন বৃদ্ধা উঠোনে বসে রান্না করছিল। ছদ্মবেশী শাঁকচুন্নী
বারান্দায় বসে চাল ঝাড়ছিল।
বৃদ্ধা বলল – বৌমা ভাঁড়ার ঘর থেকে একটা বাটি
এনে দেবে?
ছদ্মবেশী শাঁকচুন্নী বলল – দিচ্ছি মা।
এই বলে শাঁকচুন্নী বারান্দা থেকেই হাত বাড়িয়ে ভাঁড়ার
ঘর থেকে বাটি তুলে নিল। ভেবেছিল বুড়ি চোখে কম দেখে, কিছুই দেখতে পাবে না।
কিন্তু বুড়ি পুরো ঘটনাই স্পষ্ট দেখতে পেয়েছিল। আতঙ্কে
সে প্রায় জ্ঞান হারায়, একটু সুস্থ হয়ে সে ভাবল নিশ্চয়ই বৌমাকে ভুতে ধরেছে। সে তখনই
বৌমাকে কিছু বলল না, রাতে ছেলে বাড়ি ফিরে এলে আড়ালে সমস্ত ঘটনা খুলে বলল। সব শুনে ছেলে
তো ভয়ে অস্থির। বৃদ্ধা সান্ত্বনা দিয়ে বলল- ভয় পেলে চলবে না, যদি জানতে পারে ভয় পেয়েছি
তবে ঘাড় মটকে চলে যাবে। কয়েকটা দিন চুপচাপ লক্ষ্য করতে হবে, তারপর যা করার করা যাবে।
কয়েকদিন পর একদিন বৃদ্ধা বলল― বৌমা শরীরটা ভাল নেই, আজ বাপু তুমিই রান্না কর। ঐ
বাড়ির গোয়ালাদের কাছ থেকে আগুন নিয়ে উনুন ধরাও। ছদ্মবেশী শাঁকচুন্নী আচ্ছা বলে ঘরে
ঢুকে গেল।
বৃদ্ধা উঠোনে বসে বিশ্রাম করছিল। প্রায় অনেক সময় হয়ে
গেল কিন্তু বৃদ্ধা বৌমাকে আগুন আনতে দেখলো না, সেই যে রান্নাঘরে ঢুকেছে তো ঢুকেছে,
বেরুবার নাম-গন্ধ নেই। বৃদ্ধা ভাবল যাই গিয়ে একবার দেখে আসি বৌমা কি করছে। এই ভেবে
বৃদ্ধা রান্নাঘরের কাছে এসে জানালায় চোখ রাখতেই হতবাক হয়ে গেল। সে দেখতে পেল দাউ দাউ
করে উনুন জ্বলছে আর উনুনের ভেতরে বৌমা পা ঢুকিয়ে বসে আছে। বৃদ্ধা আর এক মুহুর্তও দেরী
করল না। ডেকে নিয়ে এল ছেলেকে।
সব দেখে ছেলের ভিরমী খাওয়ার অবস্থা।
বৃদ্ধা বলল ― বাছা, এখনই ওঝা ডেকে এনে এই সর্বনাশীকে
বিদায় কর নয়তো সর্বনাশ হয়ে যাবে।
পৃষ্ঠা ১
ছেলে ওঝা ডেকে নিয়ে এল। সমস্ত ঘটনা শুনে ওঝা একটা
পোড়া হলুদ ছদ্মবেশী শাঁকচুন্নীর নাকের সামনে ধরতেই সে চিৎকার করে পালিয়ে যাওয়ার উপক্রম
করল।
সঙ্গে সঙ্গে ওঝা চুলের মুঠি ধরে বলল― বল তু্ই কে?
শাঁকচুন্নী চিৎকার করে বলতে লাগল― আমায় ছেড়ে দাও, ছেড়ে দাও।
ওঝা একটা ঝাঁটা দিয়ে মারতে লাগল। আর বিড়বিড় করে মন্ত্র
পড়তে লাগল।
শাঁকচুন্নী এক সময় হাঁপাতে হাঁপাতে বলল― বলছি বলছি, আমি পুকুরপাড়ের কদমগাছে থাকি। আমি শাঁকচুন্নী।
ওঝা― তুই এই ব্রাহ্মণের বাড়িতে এলি
কি করে?
শাঁকচুন্নী― ব্রাহ্মণের বউকে সরিয়ে রেখেছি
কদম গাছের ফাটলে, আমাকে ছেড়ে দাও, আমি এখনই তাকে ছেড়ে দিচ্ছি।
ওঝা বেধড়ক মারতে মারতে বলল― শুধু তাকে ছাড়লেই হবে না, এই কদমগাছ ছেড়েও চলে যেতে
হবে তাকে।
শাঁকচুন্নী ওরে মাগো বাবাগো বলে চিৎকার করতে করতে
বলল― তাই হবে, আমি এ মুল্লুকে থাকব
না। যাওয়ার সময় কদমগাছের একটা ডাল ভেঙ্গে যাবো।
ওঝা তখন শাঁকচুন্নীকে মুক্তি দিল, ব্রাহ্মণ পড়শীদের নিয়ে তার বউকে উদ্ধার করল। অনাহারে কাঙ্কালসার দেহ হয়েছে তার।
***** সমাপ্ত *****