ভাগ্যবানের ভাগ্য (ভারতের লোককাহিনী) || লোককাহিনী ২

 

সারমর্ম: হতভাগ্য এক আশ্রয়হীন যুবক বিভিন্ন জাদুকরদের মুখোমুখি হল। এরপর ভাগ্য তার সাথে যে খেলা খেললো। মোট-৫ পৃষ্ঠা


দুনিয়ার প্রাচীন দেশগুলোর মধ্যে ভারত অন্যতম। এদেশের হাজার হাজার রূপকথা, লোককাহিনী সমাজে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এই গল্পে আমরা শুনবো সেই ভারত এর-ই এক হতভাগা যুবকের কাহিনী। হতভাগা যুবকটি তার ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য জাহাজে করে অন্যদেশে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে জাহাজটি এক ভীষণ ঝড়ের কবলে পড়ে যায়। সমুদ্রের পাড়ে একটি পাহাড়ের সাথে ধাক্কা লেগে জাহাজটি ডুবে যায়। যুবকটি ছাড়া জাহাজের সবাই মারা যায়।

যুবকটি অনেক কষ্টে সাঁতার কেটে তীরে উঠে দেখল, সে এক জনমানবহীন দ্বীপে দাঁড়িয়ে আছে। দ্বীপটিতে ছিল অসংখ্য নারকেল গাছ। যুবকটি কয়েকদিন যাবত সেই দ্বীপের ডাব আর নারকেল খেয়েই জীবন রক্ষা করে চলল। কিন্তু একসময় সে খাদ্য আর তার মুখে কিছুতেই রোচে না। সারাক্ষণ সে ক্ষুধার যন্ত্রণায় কষ্ট পায়।

হটাৎ একদিন তার দুয়ারে যেন সৌভাগ্য এসে হাজির হলো। ঐদিন সে একটা নারকেল গাছের ছায়ায় শুয়েছিল, হঠাৎ সে দেখল যে আকাশের বুকে অদ্ভুত কালো একটা প্রাণী ভাসছে। প্রথমে সে ভাবলো, হয়তো কোন পাখি হবে, কিন্তু না, অদ্ভুত জিনিসটি কাছাকাছি আসতেই সে বুঝতে পারলো যে এটি কোন পাখি নয়। আরো কাছাকাছি আসার পরে সে দেখলো, ওটা একটা গাধা। কি আশ্চর্য! একটা পাখাহীন গাধা আকাশে উড়ছে? সে বারবার তার দুচোখ ঘষে ভালো করে দেখলো, কিন্তু না, ওটা আসলেই একটা গাধা ছিল।

একটু পরেই গাধাটা দ্বীপে নেমে এলো। দ্বীপে অবতরণ করেই সে রোদের আঁচ থেকে বাঁচতে গাছের নিচে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।

ভাগ্যান্বেষী  যুবকটি পা টিপে টিপে ঘুমন্ত গাধাটির কাছে যায়। কাছে গিয়ে দেখল, এটা তো সত্যিই একটা গাধা তাতে কোন সন্দেহ নেই। এখন গাধাটি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। যুবক আশ্চর্য হয়ে দেখল যে, ঘুমন্ত গাধাটার পাশে মাটিতে পড়ে রয়েছে একটা হীরকখণ্ড। রহস্যময় গাধাটি ওই হিরা তার সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে।

যুবক হীরাটি নিজের হাতে তুলে নিয়ে ঘুমন্ত গাধাটিকে আবারও ভালো করে দেখলো। গাধাটি দেখতে ছিল কুৎসিত এবং ভয়ংকর।

যুবকটি মনে মনে ভাবল, গাধাটি জেগে ওঠে আমার হাতে তার হীরক খণ্ডটি দেখতে পেলে, নিশ্চয়ই ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে ধারালো দাঁত দিয়ে আক্রমণ করবে। ইশ, আমি যদি এই মুহূর্তে ওই গাছের মাথায় নিরাপদ দূরত্বে উঠে বসতে পারতাম!

কথাটা ভাবার সঙ্গে সঙ্গে যুবকের দেহমনে একটা অদ্ভুত অনুভূতি হলো। আর তখনই সে দেখল যে সে পাশের নারকেল গাছটার মাথায় বসে আছে। যুবক বুঝতে পারল, এটা কোন সাধারণ হীরা নয় এটা একটা জাদুর হীরা। এটা হাতে নিয়ে কিছু একটা ইচ্ছা করলেই তা পূর্ণ হবে। গাধাটাও নিশ্চয়ই তাই করেছে।

যুবক এই ব্যাপারটাকে আরেকটু পরখ করে দেখতে চাইলো। সে মনে মনে ভাবলো, 'আচ্ছা, আমি এখন নিচে মাটিতে গাধাটার পাশে যেতে চাই '।


পৃষ্ঠা ১



বাহ! মুহূর্তের মধ্যে সে নিজেকে ওই গাধার পাশে দেখতে পেল। দ্রুত সে আবার তার ইচ্ছা জানিয়ে গাছের উপরে উঠে এল।

তারপর সে নিচে ঘুমন্ত গাধার মাথার উপরে একটা ডাব ফেলে দিল। গাধা জেগে উঠলো। গাধাটি তার পাশে হিরক খণ্ডটি দেখতে না পেয়ে চমকে উঠল। গাধাটি উপরে তাকিয়ে দেখল যে গাছের মাথায় এক যুবক বসে আছে। রাগে গাধাটি যেন পাগল হয়ে গেল। বারবার সে তার মাথা ও দাঁত দিয়ে গাছের কান্ডে আঘাত হানল, কিন্তু তাতে কিছুই হলো না। গাধাটি আসলে ছিল এক দুষ্টু জাদুকর। জাদুর সাহায্যে সে গাধার রূপ ধারন করেছিল।

হীরকহীন গাধাটি  রেগে তার বিশাল দাঁত দিয়ে গাছের গায়ে বারবার আঘাত করার সময় একবার তার দুটো দাঁতই গাছের মধ্যে ঢুকে যায়। গাছের মধ্যে দাঁত ঢুকে যাওয়ায় গাধাটি আর নড়াচড়া করতে পারে না এবং যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে।

ঠিক সেই সময় গাছের মাথায় থাকা যুবকটি নিচে নেমে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করল। নিচে নেমে এসে কয়েকটা বড় বড় পাথরের আঘাতে সে গাধাটিকে মেরে হিরকখণ্ডের সাহায্যে আগুন জ্বালিয়ে দিল। তারপর হীরা হাতে তুলে নিয়ে যুবক নির্জন দ্বীপ ত্যাগ করে পাশের রাজ্যে যাবার ইচ্ছা প্রকাশ করল।

সে আকাশে ভাসতে ভাসতে পাশের দেশে গিয়ে উপস্থিত হলো। তখন প্রায় সন্ধ্যা নেমে এসেছে। পাশের দেশে সে গিয়ে নামলো একটা বালুকাময় সমুদ্র সৈকতে। চারপাশে তাকাতেই আকাশে একটা ধোঁয়ার কুণ্ডলী তার চোখে পড়ল। সে হিরকখণ্ডটি পকেটে পুরে যেখান থেকে ধোঁয়া উঠছিল সেদিকে হাঁটতে থাকে।

হাঁটতে হাঁটতে সে একটা কুটিরের সামনে গিয়ে উপস্থিত হলো। যুবক সেখানে একটি লোককে বসে বসে আগুনের উপর একটা বাচ্চা ছাগলের রোস্ট রান্না করতে দেখল। লোকটির দুটি পা-ই নেই।

যুবক সাবধানে লোকটির সামনে গিয়ে বলল, ' শুভ সন্ধ্যা, জনাব'।

পদযুগলহীন  বৃদ্ধটি উত্তরে বলল, ' শুভ সন্ধ্যা, বৎস'।

যুবকটি বিনীতভাবে বলল, 'আপনি কি আমাকে কিছু খেতে দিতে এবং আজ রাতের জন্য একটু আশ্রয় দিতে পারবেন'।

বৃদ্ধটি বলল, নিশ্চয়ই। যুবকটি খেতে বসল, কিন্তু পদযুগলহীন বৃদ্ধ মানুষটা যেভাবে বারবার চোখ তুলে লোলুপ দৃষ্টিতে যুবকের দিকে তাকাতে থাকে তাতে যুবকের স্থির বিশ্বাস হয় যে ছাগলের বাচ্চাটিকে রান্না না করলে বৃদ্ধটি বোধহয় তাকেই রোস্ট করে খেয়ে ফেলত। আসলে ওই বৃদ্ধটিও ছিল এক জাদুকর।

একসময় ওই যুবকের দিকে জ্বলজ্বল চোখে তাকিয়ে বৃদ্ধ জিজ্ঞেস করল, 'তা, তুমি এখানে এলে কি করে?'

এরপর যুবকটি বৃদ্ধকে হীরক খণ্ডের সমস্ত ঘটনাটি খুলে বলল। ঘটনা শোনার পর বৃদ্ধ যুবককে বলল,  শোনো, আমি তোমার কাছ থেকে ওই হীরাটি কিনতে চাই। তার বিনিময়ে আমি তোমাকে আমার এই মায়াবী কুঠারটি দেবো। 


পৃষ্ঠা ২



আমি যদি এই কুঠারের হাতলে একটা চাপড় মেরে বলি, কাঠ আর আগুন! তখনই কুঠার বনে উড়ে গিয়ে কাঠ কেটে এনে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। আমি যদি বলি 'শিরচ্ছেদ করো' তখনই কুঠার সবচাইতে কাছে যে মাথা পাবে সেটা কেটে ফেলবে। এইরকম আশ্চর্য কাজের কুঠার তুমি সারা দুনিয়ায় দ্বিতীয়টি পাবে না।

যুবক বলল, 'তাই তো মনে হয়। ঠিক আছে, আপনার প্রস্তাবে আমি রাজি'। এই বলে সে তার হীরকখণ্ড তুলে দিল বুড়ো জাদুঘরের হাতে, আর তুলে নিল জাদুকরের মায়াবী কুঠার।

জাদুকর হীরক খণ্ড হাতে নিয়ে ওই যুবককে রোস্ট করে খাবার ইচ্ছা প্রকাশ করতে উদ্যত হয়, কিন্তু তার আগেই যুবক তার হাতের কুঠারের বাঁটে চাপড় মেরে বলে ওঠে, 'শিরচ্ছেদ কর'! আর চোখের পলকে বুড়ো দুষ্টু জাদুকরের মাথা মাটিতে গড়িয়ে পড়ে।

পদযুগলহীন মানুষকে এবার মস্তকহীন মানুষে পরিণত করে সৌভাগ্যবান ভাগ্যান্বেষী  যুবক দুটি মায়াবী জিনিস হাতে নিয়ে এগিয়ে চলে। চলতে চলতে সন্ধ্যার দিকে সে আবার একটা নিঃসঙ্গ কুটিরের সামনে এসে উপস্থিত হয়। কুটিরের বাহিরে সে এক বৃদ্ধকে বসে বসে রান্না করতে দেখে। এই বৃদ্ধও দেখতে অদ্ভুত। তার পা আছে কিন্তু হাত নেই।

যুবক ভাবলো এই বনে বাঘের উৎপাত বেড়েছে, আর সেই বাঘের শিকার হয়েই হয়তো বৃদ্ধ মানুষটি তার হাত হারিয়েছে। যাইহোক যুবক সাহসভরে বৃদ্ধকে স্বাগত সম্ভাষণের জন্য এগিয়ে যায়, কিন্তু তার আকস্মিক আবির্ভাবে বৃদ্ধ চমকে যায়। বৃদ্ধটির সামনে ছিল একটি গাছের গুঁড়ি আর তার পাশেই ছিল এক গামলা দুধ। যুবককে দেখে বৃদ্ধ চমকে উঠতেই তার চিবুকের ধাক্কা লেগে গামলা থেকে সব দুধ গড়িয়ে মাটিতে পড়ে যায়। চোখের নিমিষে সেই দুধ একটা নদীতে পরিণত হয়ে যায় আর বৃদ্ধ ও বৃদ্ধের কুটিরকে ঠিক নদীর মাঝখানটায় নিয়ে যায়। আর যুবক পানিতে ভাসতে ভাসতে নদীর কিনারায় এসে পড়ে। এটা দেখে বৃদ্ধটি তার আসনে বসে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।

কিন্তু অল্পক্ষণের মধ্যে তার হাসি বন্ধ হয়ে যায়। কারন যুবক হীরকখণ্ড হাতে নিয়ে নদীর মাঝখানে বৃদ্ধের ঐ কুটিরের উপরে যাওয়ার ইচ্ছা জানাতেই সে চোখের নিমিষে নদী পার হয়ে ঠিক বৃদ্ধের সামনে এসে দাঁড়ায়। যুবককে দেখে বৃদ্ধটি দাঁত-মুখ খিচিয়ে প্রশ্ন করল, ‘তুমি নদী পার হয়ে এত দ্রুত কেমন করে এখানে এলে?’

যুবক তার পকেট থেকে হীরকখণ্ডটি বের করে বলল, ‘আরে এটা তো খুবই সোজা কাজ’। আমি এই হীরকখণ্ডটি হাতে নিয়ে যা ইচ্ছা করি তাই করতে পারি

হাতকাটা বৃদ্ধ মানুষটি ক্রূর চোখে যুবকের দিকে দেখতে দেখতে বলল, ‘তোমার ঐ হীরকখণ্ডটি আমি কিনতে চাই। তার বিনিময়ে আমি তোমাকে আমার এই মায়াবী গামলা দেব। 


পৃষ্ঠা ৩



তুমি চাওয়া মাত্রই গামলা গোলাও-কোর্মা, ফিরনি-জরদা, রসগোল্লা-সন্দেশ, আম-জাম-কাঁঠালে পূর্ণ হয়ে যাবে। এই গামলার সাহায্যে তুমি যা চাইবে তাই খেতে পারবে। আবার, তুমি যদি গামলাটি উল্টে দাও তাহলে সেটা মূহুর্তের মধ্যেই বিশাল খরস্রোতা নদীতে পরিণত হয়ে তোমার চারপাশের সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যাবে, তোমাকে কেউ ছুঁতেও পারবে না। কি, তুমি রাজি?’

যুবক বলল, ‘অবশ্যই রাজি। এতো খুব ভালো প্রস্তাব’। যুবকটি গামলা তার হাতে পাওয়া মাত্র কুঠারের বাটে চাপড় মেরে বলল, ‘শিরচ্ছেদ কর!’ আর তার কথার সঙ্গে সঙ্গে কুঠার ছুটে গিয়ে হস্তহীন বৃদ্ধ জাদুকরকে মস্তকহীন করে দিল। এরপর যুবক সেই রাতটা নিহত জাদুকরের কুটিরে কাটিয়ে পরদিন তিন মায়াবী রত্ন নিয়ে আবার চলতে শুরু করলো।

চলতে চলতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল। হঠাৎ যুবক জঙ্গলের ভেতরে প্রচন্ড হইচই শুনতে পেল। কে যেন খুব জোরে ঢোল বাজাচ্ছে, আর ভীতসন্ত্রস্ত হরিণ, বাঘ, সিংহ, হাতির পাল প্রাণভয়ে থরথর করে কাঁপছে। একটু পরে ঢোলের শব্দ থেমে যায়। যুবক তখন সাবধানে একটু সামনে অগ্রসর হতেই দেখে যে বনের মধ্যে একটা বিশালদেহী দৈত্য কোলের উপর একটা ঢোল নিয়ে বসে আছে।

যুবককে দেখতে পেয়ে দৈত্যটি সাদর অভ্যর্থনা জানিয়ে বলল, ‘এসো, আমার সঙ্গে খেতে বসো’।

ধন্যবাদবলে যুবক যতটা সম্ভব দূরে আসন গ্রহণ করল। দৈত্য একটা রোষ্ট করা মাংসের পাত্র তার দিকে এগিয়ে দিল। মাংসের চেহারা দেখে যুবকের মনে হলো যে সেটা কোন গরু, গাধা কিংবা ছাগলের মাংস নয়, বরং মানুষের মাংস। সে ক্ষমা প্রার্থনার ভঙ্গি করে পাত্রটা একপাশে ঠেলে দিয়ে বলল, ‘আমি মাংস খাই না’। এরপর যুবক তার সাথে থাকা জাদুর গামলাটি বের করলো এবং গামলাটি ধরে ইচ্ছা প্রকাশ করল সেটিতে যেন ডাল পরিবেশিত হয়। সঙ্গে সঙ্গে গামলাটি অত্যন্ত সুঘ্রাণযুক্ত ডালে পূর্ণ হয়ে গেল।

ব্যাপারটি দেখে দৈত্যের চোখ গোল হয়ে গেল। কেমন করে এই কান্ড ঘটলো জানতে চাইলে যুবক তাকে বিষয়টা বুঝিয়ে বলল। যুবকের কথা শুনে দৈত্যের চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল। সে হুঙ্কার দিয়ে বলল, ‘আমি তোমাকে আমার এই মায়াবী ঢোল দেব। এর এক পিঠে তালি বাজালে জঙ্গলের সব প্রাণী ভয়ে কাঁপতে থাকে, তারা নড়াচড়া করার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলে। তুমি তখন তোমার ইচ্ছেমত জঙ্গলের প্রাণি শিকার করতে পারবে। আর এর অন্য পিঠে তালি বাজালে মুহূর্তের মধ্যে পদাতিক ও অশ্বারোহী বিশাল এক সেনাবাহিনী তোমার সামনে এসে তোমার আদেশ পালনের জন্য অপেক্ষা করবে। এবার বলো, এই ঢোলের বিনিময়ে তোমার ঐ গামলা কি আমাকে দেবে?’

যুবক বলল, ‘মন্দ কী! চুক্তিটা তো ভালই মনে হয়’।


পৃষ্ঠা ৪



যুবক গামলাটা দৈত্যের হাতে দিতেই সে লোভীর মতো সেটা তার মুখের কাছে তুলে ধরে ‘আমি রক্ত পান করতে চাই’ এই কথাটি বলতে উদ্যত হয়। কিন্তু যুবক তার আগেই জাদুর কুঠারের হাতল ধরে নির্দেশ দেয়, ‘শিরচ্ছেদ কর!’ সঙ্গে সঙ্গে কুঠার এক লাফে এগিয়ে গিয়ে দৈত্যের মাথা কেটে ফেলে।

মুন্ডুহীন দৈত্যকে পেছনে ফেলে রেখে যুবক চারটি মায়াবী রত্ন নিয়ে এগিয়ে যায়। একসময় সে একটা নগরীতে এসে পৌছায়। সেই নগরীর শাসনকর্তা ছিল এক অসৎ, নিষ্ঠুর ও অত্যাচারী রাজা। নিজের প্রজাদের উপর সে অমানবিক অত্যাচার চালাতো। তার ধারের কাছে সে কোন ভিনদেশি বা অচেনা মানুষকে ঘেষতে দিত না।

ঐ রাজা যখন খবর পেলো যে এক অচেনা যুবক তার রাজ্যে প্রবেশ করেছে তখনই সে তাকে ধরে আনার জন্য ১২ জন্য সৈন্যের একটি দল পাঠালো। যুবক তাদের দেখতে পেয়েই ঢোলে চাঁটি মারলো। সঙ্গে সঙ্গে ঐ ১২ জন সৈন্য ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে ছুটে পালালো।

এই ঘটনায় রাজা ভীষণ রেগে গেল। তার আদেশে তৎক্ষণাৎ ঐ ১২ সৈন্যের গর্দান কেটে ফেলা হল। তারপর রাজা ঐ উদ্ধত এবং দুঃসাহসী যুবককে হত্যা করার নির্দেশ দিয়ে তার পুরো সেনাবাহিনীকে যুবকের সাথে যুদ্ধ করার জন্য প্রেরণ করল।

যুবক তখন তার হাতের গামলা উল্টে দিতেই বন্যার মতো জলস্রোত প্রবাহিত হয়ে রাজার সেনাদলকে সম্পূর্ণ ডুবিয়ে দিল। এরপর রাজা কোনরকমে প্রাণ বাঁচিয়ে শহরে এসে পৌছাল এবং যুবকের কাছে তার সকল অন্যায়-অত্যাচারের জন্য ক্ষমা চাইল ও যুবকের মাথায় রাজমুকুট পরিয়ে দিল। আর এভাবেই সেই হতভাগ্য যুবক তার বুদ্ধির জোরে জাদুর সেই চার রত্নের উপর ভর করে অবশেষে এক বিশাল রাজ্যের রাজা হিসেবে অধিষ্ঠিত হল।

            

***** সমাপ্ত *****

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post