সারমর্ম: মুসলিম বিশ্বের মধ্যে যে ৫টি দেশের ড্রোন সবচেয়ে শক্তিশালী। মোট-৩ পৃষ্ঠা
বর্তমান বিশ্বে গেমচেঞ্জার সমরাস্ত্র হিসেবে ড্রোন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে সুখবর হচ্ছে বিশ্বের মুসলিম দেশগুলো ড্রোন শক্তির দিক থেকে পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় এগিয়ে। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পাঁচটি ড্রোন ফোর্সের তালিকা। তবে এখানে উল্লেখ্য যে শুধুমাত্র এ্যাটাক ড্রোন দিয়ে এই তালিকা তৈরি করা সম্ভব নয়। এজন্য সকল সেক্টরের ড্রোনকে আমলে নিয়েই এই তালিকাটি তৈরি করা হবে। বিভিন্ন সেক্টরের ড্রোনগুলোর মধ্যে রয়েছে এ্যাটাক ড্রোন, সুইসাইড ড্রোন, নজরদারি ড্রোন ইত্যাদি।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশটি বাংলাদেশের সাথে যৌথভাবে ড্রোন
নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে। তবে বাংলাদেশ তাদের এই প্রস্তাবে এখনো কোন সাড়া দেয়নি আর
হয়তোবা ভবিষ্যতেও দিবে না। সৌদিআরবের ড্রোনশক্তি বহুলাংশে এ্যাটাক ড্রোনের উপর ভিত্তি
করে গড়ে উঠেছে। কারন সবমিলিয়ে তারা ৩০০ থেকে ৪০০টি এ্যাটাক ড্রোন অপারেট করে।
চতুর্থ স্থান: মধ্যপ্রাচ্যের দেশ আরব আমিরাত রয়েছে
এই তালিকার চতুর্থ স্থানে। প্রযুক্তির দিক থেকে আরব আমিরাত মুসলিম বিশ্বের অন্যতম সেরা
দেশ। দেশটির তৈরি united 40 এ্যাটাক ড্রোন বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সেরা। তাছাড়া দেশটি
চীনের সহায়তায় নিজ দেশের কারখানায় Wing loong 2 এ্যাটাক ড্রোন উৎপাদন করে।
অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি MQ-1 এর মত
বিখ্যাত এ্যাটাক ড্রোন অপারেট করে। আরব আমিরাতের Halkon গ্রুপ নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি
সুইসাইড এবং নজরদারি ড্রোন উৎপাদন করে। সবমিলিয়ে আরব আমিরাতের এ্যাটাক ড্রোন সংখ্যা
৩০০টি কিংবা তার চেয়েও বেশি। তবে সৌদিআরবের তুলনায় আরব আমিরাতের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা
অনেক বেশি। বহুলাংশে শুধুমাত্র ড্রোন প্রযুক্তির বিচারে আরব আমিরাতের অবস্থান মুসলিম
বিশ্বের তৃতীয় হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
তৃতীয় স্থান: এই তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে থাকবে পাকিস্তান।
মুসলিম বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সেরা ড্রোন ফোর্স অপারেট করে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী।
অর্থাৎ দেশটির সেনা, নৌ এবং বিমান এই তিন বাহিনী সমানভাবে অগ্রসর।
পাকিস্তান নিজস্ব প্রযুক্তিতে কমবেশি এ্যাটাক এবং নজরদারি ড্রোন উৎপাদন করে। পাশাপাশি চীনের থেকে প্রযুক্তি সহায়তা নিয়ে কারখানা স্থাপন করেছে। পাকিস্তান প্রতিবছর অসংখ্য Wind Loong II এ্যাটাক ড্রোন দেশের মাটিতে উৎপাদন করছে। তাছাড়া তুরস্ক থেকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিপুল পরিমানে আধুনিক এ্যাটাক ড্রোন কিনেছে। এগুলো মধ্যে bayraktar tb2 এবং Akinci (আকিঞ্চি) এ্যাটাক ড্রোন অন্যতম। এছাড়াও পাকিস্তান নৌ-বাহিনী CH-4B এ্যাটাক ড্রোন অপারেট করে। সবমিলিয়ে পাকিস্তানের গ্রহনযোগ্য এ্যাটাক ড্রোনের সংখ্যা ৫০০টি অতিক্রম করবে। পাকিস্তানকে যদি দক্ষিণ এশিয়ার ড্রোন সুপারপাওয়ার বলা হয় তাহলে তা সঠিকই হবে। কারন দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তানের ড্রোন ফোর্স অন্য দেশগুলোর থেকে এগিয়ে। পাকিস্তানের শুধুমাত্র সুইসাইড ড্রোনগুলোই সামান্য পিছিয়ে থাকবে।
পৃষ্ঠা ১
দ্বিতীয় স্থান: এই তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকবে
মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ ইরান। দেশটির বিমান বাহিনী ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
কারন ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তারা আধুনিক যুদ্ধবিমান ক্রয় করতে পারেনি। তবে নিজস্ব
প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে তারা গঠন করেছে বিশ্বের অন্যতম সেরা ড্রোন ফোর্স।
ইরানের ড্রোন বাহিনী সকল সেক্টরে একপ্রকার অপ্রতিদ্বন্দী
বলা যায়। কারন দেশটির সুইসাইড ড্রোন এই মুহূর্তে নিঃসন্দেহে পুরো পৃথিবীর মধ্যে শীর্ষে
অবস্থান করবে। কারন তারা শর্ট রেঞ্জ থেকে লং রেঞ্জের সুইসাইড ড্রোন উৎপাদন করে। অন্যদিকে
ইরানের বেশ কয়েকটি বিখ্যাত এ্যাটাক ড্রোন রয়েছে। যা ইতিমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি
দেশে অত্যন্ত সফলতার সাথে মিশন পরিচালনা করেছে। তবে নজরদারি ড্রোন সেক্টরে ইরানের অবস্থান
যথেষ্ঠ শক্তিশালী। সবমিলিয়ে ইরানের এ্যাটাক ড্রোন সংখ্যা ৫০০ থেকে ৬০০টি অতিক্রম করবে।
তবে সুইসাইড ড্রোন সেক্টরে ইরানের অবস্থান ঈর্ষণীয় পর্যায়ে শক্তিশালী। আগামী দিনে দেশটি
আরো ভালো অবস্থানে যেতে পারবে বলে মনে করা হয়।
প্রথম স্থান: এই তালিকায় মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে সেরা
ড্রোন ফোর্স অপারেট করে তুরস্ক। প্রকৃত অর্থে ইরানের তুলনায় সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে
রয়েছে তুরস্কের ড্রোন ফোর্স। সুনামের দিক থেকে তুরস্কের এ্যাটাক ড্রোন বর্তমান বিশ্বে
প্রায় অপ্রতিদ্বন্দী। বিশেষ করে bayraktar tb2 এ্যাটাক ড্রোন। এছাড়াও বেশ কয়েকটি বিশ্বমানের
এ্যাটাক ড্রোন উৎপাদন করে দেশটি। যেমন Anka-S, Akinci কিংবা Songar Silahlı (সোঙ্গার
স্যালাহলি) ড্রোন।
এছাড়াও নজরদারি ড্রোন নির্মাণে তুরস্কের অবস্থান বেশ
শক্তিশালী। আরব আমিরাতের পর দ্বিতীয় সেরা নজরদারি ড্রোন উৎপাদন করে তুরস্ক। তবে তুরস্কের
সবচেয়ে শক্তিশালী সেক্টর হচ্ছে এ্যাটাক ড্রোন। পুরো মুসলিম বিশ্বের মধ্যে তুরস্কের
এ্যাটাক ড্রোনকেই সবচেয়ে শক্তিশালী ড্রোন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বলা যায় তুরস্কের
ধারের কাছেও কোন দেশের অবস্থান নেই। তুরস্কের ড্রোন ফিল্ড একটি দিক থেকে পিছিয়ে আর
তা হচ্ছে সুইসাইড ড্রোন ফিল্ড। কারন এই সেক্টরে এখনো নবাগত তুরস্ক। ইরানের মত শক্তিশালী
সুইসাইড ড্রোন তৈরি করতে এখনো কয়েক দশক লাগবে তুরস্কের।
এসব দেশ ছাড়াও মুসলিম বিশ্বের আরো বেশ কয়েকটি দেশের ড্রোন ফোর্স যথেষ্ঠ শক্তিশালী। এই তালিকায় মিশর, আলজেরিয়া কিংবা ইন্দোনেশিয়ার নাম থাকবে। ভবিষ্যতে হয়তো বাংলাদেশও এই তালিকায় যুক্ত হবে। কারন বাংলাদেশের ড্রোন ফোর্স সকল বাহিনীর জন্য গঠন করা হচ্ছে। যেমন সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌ-বাহিনী এবং বর্ডার গার্ডের জন্য আলাদা আলাদা ড্রোন ফোর্স থাকবে। এমনকি বাংলাদেশ কোষ্টগার্ডের জন্যও আলাদা ড্রোন ক্রয় করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আগামী দিনে বাংলাদেশের এ্যাটাক ড্রোন সংখ্যা সহজেই ১০০টি অতিক্রম করবে। ফলে মুসলিম বিশ্বের শীর্ষ ১০টি ড্রোন শক্তির মাঝে বাংলাদেশের নাম অবশ্যই থাকবে।
পৃষ্ঠা ২
ড্রোনকে মনে করা হয় বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ যুদ্ধের গেমচেঞ্জার সমরাস্ত্র। অথচ এই সেক্টরে পশ্চিমা দেশগুলো পিছিয়ে আছে। বিশেষ করে হাতেগনা কয়েকটি দেশ ব্যতীত। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইজরাইল ছাড়া কোন পশ্চিমা দেশের ড্রোন ফিল্ড ততটা শক্তিশালী নয়। অবাক করা বিষয় হচ্ছে মুসলিম দেশগুলো থেকে ড্রোন কিনছে পশ্চিমা দেশগুলো। সমরাস্ত্র বাণিজ্যের ইতিহাস অনুযায়ী পশ্চিমা দেশগুলো সমরাস্ত্র রপ্তানি করে। বিপরীতে তা ক্রয় করে মুসলিম দেশগুলো। অথচ ড্রোন সেক্টরে মুসলিম দেশগুলোর দারস্থ হচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো। তুরস্কের নিকট রীতিমত সিরিয়াল দিচ্ছে ইউরোপীয় দেশগুলো। নিষেধাজ্ঞা না থাকলে ইরানের দারস্থ হত অন্তত কয়েক ডর্জন দেশ। নিঃসন্দেহে মুসলিম বিশ্বের জন্য এটি সুখবর। ভবিষ্যতে সমরাস্ত্রের অন্য সকল সেক্টরেও মুসলিম দেশগুলো এগিয়ে যাবে এটা আশা করা যায়।
***** সমাপ্ত *****