পুরুষের যৌন ক্ষমতাকে ধরে রাখে যে হরমোন || স্বাস্থ্য বিষয়ক ১

 

সারমর্ম: পুরুষদের যৌন ক্ষমতা নিয়ন্ত্রনকারী হরমোন, এর উৎপত্তিস্থল, হরমোনটির সাপ্লিমেন্ট গ্রহনের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং যে খাবার ও শারীরিক ব্যায়ামগুলো প্রাকৃতিকভাবেই দেহে হরমোনটির উৎপাদন বৃদ্ধি করে। মোট-২ পৃষ্ঠা


টেস্টোস্টেরন! এটি বললে আপনার মাথায় প্রথমে কোন চিন্তাটা আসে। জ্বি, আপনি এতক্ষনে ধরে ফেলেছেন যে, এটি হচ্ছে পুরুষের যৌন হরমোন। পুরুষত্ব, অর্থাৎ এই হরমোন একজন ছেলের পৌরুষকে জাগিয়ে তোলে, তাকে পুরুষ বানায় এমনটাই ধারনা করা হয়। কিন্তু আসলেই কি তাই? এই হরমোন বেশি থাকলে কি আদৌ কোন উপকার হয়?

আজ আমরা জানবো টেস্টোস্টেরনের উপকারিতা এবং এর সাপ্লিমেন্ট নিলে কি হয় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত। 

টেস্টোস্টেরন নামটির সঙ্গে আমরা প্রায় সবাই পরিচিত। এই হরমোনটি স্টেরয়েড জাতীয় হরমোন অর্থাৎ প্রাকৃতিকভাবেই এটি শরীরে উৎপন্ন হয়। এই হরমোন প্রধানত পুরুষ জননতন্ত্রের উন্নয়নে ভূমিকা পালন করে থাকে। এটা জানলে হয়তো আপনারা অনেকে অবাক হবেন যে এই হরমোন কেবল পুরুষের দেহেই থাকে না। নারীদেহেও এই হরমোন উৎপাদিত হয়। তবে সেটা সামান্য মাত্রায়। পুরুষদেহে যে কাজের জন্য এটি উৎপন্ন হয় সেই একই কাজের জন্য নারীদেহেও উৎপন্ন হয় এটি। অর্থাৎ হাড়ের ঘনত্ব বাড়ানোর জন্য। 

পুরুষদের শুক্রাশয়ে সাধারণত এই হরমোন উৎপন্ন হয়। শারীরিক উন্নয়নে এটি মূখ্য ভূমিকা পালন করে।

 


বয়ঃসন্ধিকালে এই হরমোনের কারনে কিশোর যুবক হয়ে ওঠে, পাল্টে যায় কন্ঠস্বর। আর অবশ্যই এই সময়টাতে এই হরমোনের কারনে শুক্রাণুর উৎপাদন বেড়ে যায়। অন্য হরমোনের চেয়ে পুরুষের প্রজননের ক্ষেত্রে এর ভূমিকা অনেক বেশি। এমনকি এই হরমোনই দেহের যৌন ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়।

যুক্তরাষ্ট্রের Food and Drug Administration এর তথ্য অনুযায়ী টেস্টোস্টেরনের স্বাভাবিক মাত্রা হল প্রতি ডেসিলিটারে ৩০০ থেকে ১০০০ ন্যানোগ্রাম। প্রতি ডেসিলিটারে এই হরমোনের মাত্রা ৩০০ ন্যানোগ্রামের নিচে নেমে গেলে সেটাকে সমস্যা বলে মনে করা হয়। তরুণ বয়স পর্যন্ত এই হরমোনের মাত্রা বাড়তে থাকে। ২৫ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত শতভাগ আর মধ্য বয়স থেকে ক্রমশ কমতে থাকে। ৬০ এর কাছাকাছি বয়স হলে ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ হরমোন উৎপাদন হয়।

টেস্টোস্টেরন কমে গেলে যৌনক্ষমতা কমে যায় এই তথ্যকে পুঁজি করে কয়েকটি দেশে এই হরমোন সাপ্লিমেন্টের বিশাল শিল্প গড়ে উঠেছে। এটা টেস্টোস্টেরন বুষ্টার হিসেবেও পরিচিত।

 


একটি নির্দিষ্ট বয়সের পুরুষ এই ঔষুধগুলোর টার্গেট গ্রুপ। বুঝতেই পারছেন, একটু বেশি বয়সী যারা তাদেরকেই টার্গেট করে গড়ে উঠেছে বিশাল এই শিল্প। কিন্তু আপনার বয়স যাই হোক না কেন হরমোন এত শক্তিশালী একটি উপাদান যে এর গ্রহন কোনভাবেই ঝুঁকিমুক্ত নয়। দীর্ঘ সময় ধরে এই হরমোন গ্রহন করলে হৃদরোগ এবং প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। আর একটি ভয়ের কথা হল, চিকিৎসকরা বলছেন এর অতিরিক্ত গ্রহন শরীরের নিজস্ব হরমোন উৎপাদন ক্ষমতাকে বন্ধ করে দেয়। আর এসময় আপনি সে হরমোন সাপ্লিমেন্ট ছেড়ে দিতে চাইলেও অনেকটা সময় আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে কারন কবে আপনার টেস্টেক্যাল বা শুক্রাশয় আবার হরমোন উৎপাদন শুরু করবে তা নিশ্চিত নয়। এমনকি টেস্টোস্টেরন সাপ্লিমেন্ট গ্রহনের ফলে আপনার অন্ডকোষের আকার ছোট হয়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করছেন চিকিৎসকরা।


পৃষ্ঠা ১



সাধারণ পরিসংখ্যান বলছে বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে এই সাপ্লিমেন্ট কিছুটা সাহায্য করতে পারে অর্থাৎ তাদের কারো কারো মধ্যে যৌনক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। কিন্তু এটি গ্রহনের পূর্বে তাদের অবশ্যই টেস্টোস্টেরনের মাত্রা পরীক্ষা করাতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে এটা গ্রহন এবং নিয়মিত চেকআপ খুবই জরুরী।

একটা বিষয় বলে রাখা ভালো, আপনার যৌনক্ষমতা কমার কারন কেবলই হরমোন নয়। অনেক কারনেই এটা হতে পারে। তাই আপনার যৌনচাহিদা বা Libido নিয়ে সমস্যা থাকলে তার জন্য হয়তো টেস্টোস্টেরন হরমোন কিছুটা সে সমস্যা দূর করতে পারে আবার কখনো কখনো এই হরমোন কোন কাজেই আসে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন তরুণদের এই হরমোন একেবারেই গ্রহণ করা উচিৎ নয় কেবলমাত্র তারাই এটা গ্রহন করতে পারেন যদি চিকিৎসার কারনে প্রয়োজন হয়। যেমন ধরুন স্বাভাবিকভাবেই আপনার শুক্রাশয় এই হরমোন উৎপাদন করতে পারছে না সেক্ষেত্রে হরমোন প্রয়োজন হতে পারে।

সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় দেখা গেছে ওজন নিয়ন্ত্রন এবং নিয়মিত ব্যায়াম করলে টি-সাপ্লিমেন্ট নেয়ার মতই শরীরে হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। আর স্বাভাবিকভাবে দেহে হরমোন উৎপন্ন হলে আপনার অন্ডকোষ চুপসে যাওয়ারও কোন ভয় নেই।

খাবারের মধ্যে যদি আমরা পর্যাপ্ত পরিমানে সবুজ শাকসবজি ও ফলমুল রাখি পাশাপাশি আমরা যদি ব্যালেন্স ডাইড গ্রহন করি, আমরা যদি ভাল ফ্যাটসমৃদ্ধ যে খাবারগুলো রয়েছে এই খাবারগুলো গ্রহন করি তাহলে আমরা অনেকাংশেই আমার শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা ও উৎপাদনকে বৃদ্ধি করতে পারবো।

 


এর পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুমও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় এটা উঠে এসেছে যে, সাধারণত মানুষ যখন রাতের বেলা ঘুমিয়ে থাকে তখন তার শরীর থেকে টেস্টোস্টেরন রক্তে নিঃসরণ হয়। তাই এক্ষেত্রে যদি পর্যাপ্ত ঘুম না হয় অর্থাৎ নূন্যতম ৮ ঘন্টা বা তার কাছাকাছি সময় পর্যন্ত একজন পুরুষ মানুষ না ঘুমায় তাহলে তার শরীরে টেস্টোস্টেরন লেভেল কম থাকবে। সুতারাং পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমেও কিন্তু আমরা আমাদের শরীরের টেস্টোস্টেরনের মাত্রাকে বৃদ্ধি করতে পারি।

এছাড়াও শারীরিক যে ব্যায়ামগুলো রয়েছে নিয়মিত সেগুলো করার মাধ্যমেও শরীরের টেস্টোস্টেরনের মাত্রাকে বৃদ্ধি করা যায়। বিশেষকরে কার্ডিও এক্সারসাইজ (যেমন প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ মিনিট হাটা) এবং মাসল স্ট্যান্ডিং এক্সারসাইজগুলো (যেমন বুক ডাউন, পুল আপ ইত্যাদি) আমাদের শরীরে স্টেস্টোস্টেরনের মাত্রাকে বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

 


পাশাপাশি আমাদের জীবনে যে বিভিন্ন স্ট্রেস বা দুঃচিন্তা রয়েছে সেগুলো থেকে আমাদেরকে যেভাবেই হোক মুক্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে। কারন এইসব দুঃচিন্তা টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্থ করে।

          

***** সমাপ্ত ***** 

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post