ছোট বাচ্চাদের গলায় খাবার আটকে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে গেলে তৎক্ষণাৎ যা করতে হবে || ঘরোয়া চিকিৎসা ১

 

সারমর্ম: ছোট বাচ্চাদের গলার খাবার আটকে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ এবং এক্ষেত্রে তৎক্ষণাৎ যে ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহন করা যেতে পারে। মোট-০ পৃষ্ঠা


খাবার খাওয়ার সময় কখনো কখনো শিশুদের গলায় খাবার আটকে মারা যাবার ঘটনাও ঘটে। তো চলুন দেখি খুঁজে বের করি ঠিক কি কারনে এমনটা ঘটে, আর এমনটা ঘটলে সাথে সাথে ঠিক কি করতে হবে যাতে শিশুটাকে বাঁচানো যায়।

আমাদের গলার ভিতরে একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ রয়েছে যার নাম এপিগ্লটিস বা উপ-জিহবা। আমাদের গলায় শ্বাসনালী এবং খাদ্যনালী পাশাপাশি থাকে। তো এপিগ্লটিসের কাজ হচ্ছে গলা দিয়ে যখন খাবার নামে তখন এপিগ্লটিস শ্বাসনালীর মুখটি বন্ধ করে দেয়। ফলে খাদ্য শ্বাসনালীর মাধ্যমে ফুসফুসে না গিয়ে খাদ্যনালীর মাধ্যমে পেটে চলে যায়। একারনে যখন আমরা খাবারের ঢোক গিলি তখন আমরা নিশ্বাস নিতে পারি না কারন ঐ সময় এপিগ্লটিস শ্বাসনালীর মুখটি বন্ধ করে রাখে।



এখন কোন কারনে যদি এই process টার মধ্যে কোন বিঘ্ন ঘটে মানে আমরা খাবার গিলার সময় এপিগ্লটিস ভালভাবে শ্বাসনালীর রাস্তা বন্ধ করতে পারলো না তখন দেখা যাবে খাবারের একটা অংশ বা পুরো খাবারটাই শ্বাসনালীতে গিয়ে আটকে থাকবে। বিশেষ করে শিশুদের শরীরের সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গই ছোট। তাই শিশুদের ছোট শ্বাসনালীতে বড় খাবার আটকে গেলে পুরো শ্বাসপ্রশার নেয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়।   

আমরা যখন শ্বাস প্রশ্বাস নেই তখন বাহির থেকে বাতাস শ্বাসনালীর মাধ্যমে আমাদের ফুসফুসে ঢুকে। ফুসফুসের একেবারে ভিতরের দিকে একটা জায়গা আছে যে জায়গার নাম হচ্ছে অ্যালভিওলাই। অ্যালভিওলাই হচ্ছে গোলগোল কতগুলো বলের মত এবং এগুলোর চতুর্পাশে রক্তনালী আকঁড়ে ধরে অবস্থান করে।



অ্যালভিওলাইয়ের কাজ:

অ্যালভিওলাইতে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইড এর আদান প্রদান ঘটে। অর্থাৎ আমরা যখন বাহিরে থেকে শ্বাস নেই তখন বাতাসে থাকা অক্সিজেন আমাদের অ্যালভিওলাইয়ে এসে জমা হয়। তারপর এই জমা হওয়া অক্সিজেন অ্যালভিওলাইগুলোকে আঁকড়ে ধরে থাকা রক্তনালীতে চলে যায়। এই অক্সিজেন নেয়ার পূর্বে রক্তনালী আবার তার মধ্যে থাকা কার্বন ডাই অক্সাইডকে অ্যালভিওলাইয়ের মধ্যে দিয়ে দেয়।



আর আমরা যখন নিশ্বাস ছাড়ি তখন এই কার্বন ডাই অক্সাইড আমাদের ফুসফুস থেকে বাহিরে বের হয়ে যায়। আর ওদিকে রক্তনালী বিশুদ্ধ অক্সিজেন নিয়ে তা সারা দেহে ছড়িয়ে দেয়।

 


উপরের ছবিটি হচ্ছে একটা মৃত বাচ্চার ফুসফুসের ছবি। ছবিতে গলার মধ্যে একটি বাদাম আটকে আছে দেখা যাচ্ছে। এটা হচ্ছে শিশুটি যখন জীবিত ছিল তখন বাদাম খাওয়ার সময় সেটি ভুলবশত গলায় আটকে যায় এবং ফুসফুসের দিকে চলে যায়। ফুসফুসের দিকে যাওয়ার সময় এটি এমনভাবে আটকে যায় যার কারনে শিশুটি আর নিশ্বাস নিতে পারছিল না অর্থাৎ বাতাস তার মুখ দিয়ে ফুসফুসে যেতে পারছিল না এবং ফুসফুস থেকেও বাতাস বাহিরেও আসতে পারছিল না। ফলে আমাদের শরীরের জৈবিক কাজকর্ম করার জন্য প্রতি মুহূর্তে অক্সিজেনের যে একটা চাহিদা থাকে অক্সিজেন ফুসফুস পর্যন্ত যেতে না পারায় অক্সিজেনের অভাবে সেই কাজগুলো আর হতে পারছিল না। আর এ কারনেই তার মৃত্যু হয়।

পৃষ্ঠা ১



এবার আসি শিশুদের শ্বাসনালীতে যদি খাবার আটকেই যায় তাহলে কি করতে হবে! শিশুটিকে প্রথমে মুখটা মাটির দিকে মুখ করে এক হাতের তালুতে মাথাটা একটু নিচু করে ধরতে হবে।



এরপর শিশুটির ঘাড়ে আরেক হাতের তালু দিয়ে উপর থেকে ৫/৬ বার আঘাত করতে হবে।


 

এটাকে বলা হয় ব্যাক ব্লোজস। এর ফলে ফুসফুসের জায়গাটিতে ভাইব্রেশন এবং চাপের সৃষ্টি হয় যার ফলে ফুসফুস থেকে বাতাস বাহিরে বের হয়ে আসে। আর এই বাতাসের চাপে শ্বাসনালীতে আটকে থাকা খাদ্যও বাহিরে বের হয়ে আসে।



এভাবে ৫ বার ব্যাক ব্লোজ দেয়ার পরও যদি শ্বাসনালীতে আটকে যাওয়া জিনিসটা বাহিরে বের হয়ে না আসে তাহলে আরেকটা কাজ করা যায়। শিশুটিকে এবার হাতের তালুতে চিৎ করে নিতে হবে। এরপর আরেক হাতের দুই আঙ্গুল দিয়ে শিশুর বুকের ঠিক মাঝখানে প্রেসার দিতে হবে।




এভাবে কয়েকবার প্রেসার দিতে হবে। এটাকে বলা হয় চেস্ট থ্রাস্ট। এটা করলে ফুসফুসের ভেতরে সবসময় যে বাতাসটা থাকে সেই বাতাস উপরের দিকে একটা চাপ সৃষ্টি করে। এই প্রেসার কয়েকবার দিলে ফুসফুসের বাতাসের চাপে শ্বাসনালীতে আটকে থাকা জিনিসটি আস্তে আস্তে মুখ দিয়ে বের হয়ে আসতে পারে।

চারপাচ বার এরকম করেও কাজ না হলে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। হাসপাতালে নেয়ার সময় শিশুর মাথার দিকটা নিচের দিকে আর পায়ের দিকটা উপরের দিকে রাখতে হবে।

          

***** সমাপ্ত ***** 

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post