মধুমাস শুরু না হলেও এখনই বাজারে
উঠতে শুরু করেছে পাকা আম। রসালো ও সুমিষ্ট এই ফল খেতে পছন্দ করেন প্রায়ই সব মানুষই।
বাজারে বিভিন্ন স্বাদ, রঙ, জাত, আর গন্ধের আমের দেখা পাওয়া যায়। সেখান থেকে পছন্দমতো
আম কিনে বাড়ি নিয়ে আসার পর যদি দেখেন তা রাসায়নিকে পাকানো, তখন ঠকে তো যাবেনই, সেইসঙ্গে
ভুল করে এই আম খেলে ফেললে শরীরও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তাই, বাজার থেকে আম কেনার সময় কিছু
বিষয়ে খেয়াল রাখতে পারলে আর ঠকে আসার ভয় থাকবে না। গাছপাকা আমের রয়েছে আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য।
অন্যদিকে রাসায়নিক দিয়ে পাকানো আমের ও রয়েছে বেশ কিছু চিহ্ন। কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো
আমের যে চিহ্নগুলো একেবারে খালি চোখেই স্পষ্টভাবে বুঝা যায় সেগুলোই আজ আপনাদের সামনে
তুলে ধরবো।
সরকার
নির্ধারিত সময়ের আগে আম না কেনা
আম পাড়ার দিন সরকারিভাবে নির্ধারণ
করা হয়ে থাকে। সরকার নির্ধারিত এই সময়ের মধ্যে মোটামুটি বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলের
আম প্রাকৃতিক ভাবেই পেঁকে যায়। তাই নির্ধারিত সময়ের পূর্বে বাজারে যদি পাকা আম দেখা
যায় তাহলে সেই আম সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ থাকে। এইসকল আম ভালভাবে পরীক্ষা না করে একদমই
খাওয়া উচিৎ হবে না।
পাঁকা
আমের গন্ধ পরীক্ষা করা
আমের গন্ধ শুঁকে দেখা হচ্ছে- পাকা
ও মিষ্টি আম চেনার অনেক পুরনো একটি কৌশল। প্রাকৃতিকভাবে পাকা ও মিষ্টি ফলের গন্ধ খুব
তাজা। তাই আম কেনার সময় নাকের কাছে নিয়ে সেটির গন্ধ নিন। গাছপাকা হলে হালকা মিষ্টি
গন্ধ নাকে পাবেন। গাছপাকা আম যে স্থানে রাখা হয় সেই স্থানের চারপাশ মিষ্টি গন্ধে মৌ
মৌ করে। এছাড়া উটকো বা অদ্ভুত গন্ধ পেলে সেই আম না কেনাই ভালো। ক্যামিকেল দিয়ে পাকানো
আমে স্বাদ গন্ধ একদমই থাকে না। আমে যদি কোনো ধরনের গর্ত বা কাটা থাকে তবে তা না কেনাই
ভালো। কেমিক্যাল মিশ্রিত না হলেও গর্তযুক্ত আমগুলো অধিকাংশই পোকা ধরা বা পঁচা হয়।
আমের
বীজ পরীক্ষা
আম কাটার পর যদি দেখেন যে আমের ভেতরের আঁটি বা বীজটি কাঁচাই রয়ে গেছে তাহলে এই আম ফেলে দিন। এটা নিশ্চিতভাবেই ক্যামিকেল দিয়ে পাকানো আম।
পতঙ্গের
মাধ্যমে চেনা
লক্ষ্য করুন যে স্থানে আমগুলো রাখা আছে বা কাটা আমের গায়ে মাছি বসছে কিনা। কেননা ক্যামিকেল দেয়া আমের গায়ে মাছি বসবে না।
আমের
ত্বকে অদ্ভুদ দাগ
রাসায়নিক দিয়ে পাকানো আমের গায়ে
স্প্রে করার দাগ লেগে থাকতে পারে। মনে রাখবেন আমের রং সাধারণত সবুজ, হলুদ বা কিছু আম
হালকা লালচে হয়। প্রাকৃতিকভাবে গাছে পাকা আমের খোসা অনেক সতেজ ও মসৃণ থাকে।
পৃষ্ঠা ১
তাই আমের ত্বকের উপরে কোন দাগ থাকলে সেগুলো খেয়াল রাখবেন। লক্ষ রাখবেন যে কোন তরলের ছিটা, স্প্রে বা তরল গড়িয়ে পড়ার দাগ রয়েছে কিনা। বিশেষ করে আমের খোসার উপরে সাদা বা নীল রঙের কোনো দাগ থাকলে সেই আম কেনা উচিত নয়। এছাড়া ক্যামিকেল মেশানোর ফলে আমের খোসা মসৃণ ও সজীব থাকে না। তাই আম কেনার সময় এর খোসার চেহারাটি লক্ষ রাখুন।
আমের
আকার
রাসায়নির দিয়ে পাকানো আমগুলো নির্ধারিত
সময়ে আগে বাজারজাত করায় এগুলো সাধারণত আকৃতিতে ছোট থাকে। তাই বাজার থেকে ছোট আকৃতির
পাকা আমগুলো ভালভাবে পরীক্ষা করে কেনা উচিৎ।
পানিতে
আমের পরীক্ষা
আম কিনে আনার পর আমগুলোকে একটা
বালতি ভর্তি পানিতে রাখুন। এবার দেখুন কোন আমটি পানিতে ডুবে যাচ্ছে আর কোনটি পানির
ওপরে ভেসে থাকছে। যে আমগুলো পানিতে ডুবে যাবে সেগুলো গাছপাকা আম। আর যে আম পানির ওপরে
ভাসবে, সেটি কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো আম।
এছাড়াও প্রাকৃতিকভাবে পাকা আম অনেক মিষ্টি হয় এবং রসে ভরপুর থাকে। কিন্তু ফরমালিনযুক্ত আম তেমন রসালো হয় না। কৃত্রিমভাবে পাকানো আমের ভেতরটা পাকা থাকে ঠিকই কিন্তু আমগুলো তেমন রসালো থাকে না।
আম
পাকানোর ক্ষেত্রে যেসব রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়
আম পাকানোর ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ই
‘ক্যালসিয়াম কার্বাইড’ নামক রাসায়নিকটি
ব্যবহার করা হয়। এই রাসায়নিক আর্দ্রতার সংস্পর্শে এলে এর থেকে অ্যাসিটিলিন গ্যাস নির্গত
হয়। যার ফলে আম দ্রুত পাকতে শুরু।
এছাড়া অনেক ফল ব্যবসায়ী আমে ‘ইথিলিন ট্রিটমেন্ট’নামক রাসায়নিক ব্যবহার করেন। এই প্রক্রিয়ায় ফলকে ইথিলিন গ্যাসের সংস্পর্শে আনা হয়। এই ইথিলিন গ্যাস একটি প্রাকৃতিক উদ্ভিদ হরমোন যার ব্যবহারে ফল পাকতে শুরু করে।
ক্যামিকেল দিয়ে পাকানো আম খেলে
তা মানুষের জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো আম খেলে
শ্বাসকষ্ট, ত্বকে জ্বালাপোড়া এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যাগুলি দেখা দিতে পারে।
এছাড়া এই কেমিক্যালগুলো ফলের মাধ্যমে শরীরে গেলে কোলন ক্যান্সার, ত্বকের ক্যান্সার,
জরায়ুর ক্যান্সার, লিভার ও কিডনির সমস্যা, মস্তিষ্কের ক্ষতির মতো মারাত্মক রোগ হওয়ার
ঝুঁকিও থেকে যায়।
***** সমাপ্ত *****